গ্রীক পুরাণে নার্সিসাস/নার্সিসিস নামে এক চরিত্র ছিল যার সম্পর্কে অনেকগুলো মিথ বা পৌরাণিক কাহিনী পাওয়া যায়। সবচেয়ে প্রচলিতটি হচ্ছে যে সে ছিল অসামান্য রুপের অধিকারী এক যুবক। তার বাবা ছিল নদীর দেবতা সেফিসাস ও জলকন্যা/জলের দেবী লিরিওপি/ লিরিওপ ছিল তার মা। থিবস নগরীর অন্ধ ভবিষ্যদ্বক্তা (দৈববাণীঘোষণাকারী) টাইরেসিয়াস নার্সিসাসের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তার মাকে বলেছিলেন যে “সে অনেকদিন বাঁচবে যদি না সে নিজেকে চিনতে পারে”। তৎকালীন গ্রিসে ভবিষ্যৎবাণীগুলো এমনই দুর্বোধ্য ছিল।
নার্সিসাস স্বীয় সৌন্দর্যে এত গর্বিত ছিল যে যত নারী তার প্রেমে পড়ত তাদের সবাইকে সে প্রত্যাখ্যান করত। এক জলকন্যা/জলের দেবী ইকো নার্সিসাসের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে তার প্রেমে পড়ে। একদিন নার্সিসাস বনে শিকারে বের হলে ইকো তার পেছনে যেতে থাকে। যদিও তার প্রচন্ড ইচ্ছা হচ্ছিল নার্সিসাসের সাথে কথা বলার তথাপি সে বলে নি কারণ সে চেয়েছিল নার্সিসাস প্রথমে কথা বলুক। নার্সিসাস যখন ইকোর পায়ের শব্দ শুনতে পায় তখন সে বলে “কে ওখানে?” প্রতিউত্তরে ইকোও বলে “কে ওখানে?” পরবর্তীতে ইকো যখন সামনে আসে এবং নার্সিসাসকে আলিঙ্গন করতে চায় তখন নার্সিসাস তাকে অবজ্ঞার সাথে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। এই অবজ্ঞায় ক্ষোভে, দুঃখে ইকো ঐ বনেই মিলিয়ে যায় শুধু তার উচ্চারিত শেষ শব্দগুলো বনের বাতাসের সাথে প্রতিধ্বনির মতো মিশে থাকে। গ্রীক পুরাণ অনুসারে ইকোর কন্ঠ এখনো পাহাড়ে, গুহায় বা বন্ধ যায়াগায় শুনতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ জোরে চিৎকার করে কিছু বললে যে প্রতিধ্বনি হয় তা ইকোর কন্ঠ। (কথাপ্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো যে ইংরেজি Echo শব্দটি যার অর্থ প্রতিধ্বনি এই ইকো এবং নার্সিসাসের পুরাণ হতেই এসেছে।)
নার্সিসাসের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রায়শ্চিত্ত ও কর্মফল প্রদানের দেবী নেমেসিস তাকে তৃষ্ণার্ত করে তোলে। নার্সিসাস যখন পানি পান করতে জলের ধারে যায় তখন সে জলে তার প্রতিবিম্ব দেখতে পায় এবং নিজের প্রেমে সে এতই মত্ত হয়ে যায় যে সে আর জলে হাত দেয় না পাছে তার প্রতিবিম্ব সেখান থেকে চলে যায়। নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে দেখতে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় সেখানেই সে মারা যায় এবং সাথে সাথে সেখানে নার্সিসাস ফুল ফোটে। নার্সিসাস বা নার্গিস বেশ সুন্দর একটি ফুল কিন্ত এটা দেখলে মনে হয় মাথা নুইয়ে আছে যেন নার্সিসাস পানিতে তার প্রতিবিম্ব দেখছে।
(ইকোর পৌরাণিক কাহিনী সম্পর্কে অন্য অনেকগুলো আলাদা ভার্সন পাওয়া যায় তবে এটাই বহুল প্রচলিত)
এই নার্সিসাসের নামানুসারে একটি মানসিক রোগের নামকরণ করা হয়েছে- নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার Narcissistic Personality Disorder (NPD)
কথায় আছে, “আপনারে বড় বলে বড় সেই নয়, লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়।”
“নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার” হচ্ছে সেইরকম নিজেকে বড় মনে করার এক উদ্ভট অসুস্থ চিন্তা! শুধু নিজেকে বড় বা খুব জ্ঞানী মনে করা না, এই ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে খুব বিশেষ কিছু মনে করে আত্মপ্রেমে এত বেশি বিভোর থাকে যা বাস্তব অবস্থা থেকে একেবারে ভিন্ন! এটি আসলে আরও গভীর একটি বিষয় যা এক দুই লাইনে আলোচনা করে শেষ করা সম্ভব নয়।
যারা অতিমাত্রায় নিজস্বিতে (সেলফি) আকৃষ্ট অন্তর্জালে আজকাল তাদের বলা হচ্ছে যে তারা নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার রোগে আক্রান্ত।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৭