মেয়ের আকিকার খবর শুনে এলাকার কসাই আসলেন খাসির ব্যবস্থা করার জন্য। সেই সাথে আশ্বস্ত করলেন, মাংস বানানো ভাগ বাটোয়ারা নিয়েও আমাকে ভাবতে হবেনা। আমি কিছুটা নিশ্চিন্ত। দীর্ঘ প্রবাস জীবনের সংসার বিহীন দিনপাতের কারনে দেশের বাজার ঘাটের দায়িত্ব এলে ঝামেলা মনে হয়, মাথা ব্যাথা শুরু হয়। বাজার থেকে ফিরলেই নিজের বোকামীর প্রমাণ উন্মুক্ত হয়। কিন্ত অধিকাংশ দোকানদার যদি কাস্টমার ঠোকানর আয়োজন করে বসে থাকেন তাহলে সেটাতো আমার বোকামি হতে পারে না। হতে পারে মানুষের প্রতি সরল বিশ্বাস। আর দীর্ঘ দিনের অভ্যাসেই এই বিশ্বাসের জন্ম।
যাই হোক কসাইয়ের সেই প্রস্তাবে গিন্নি বাধ সাধলো। নভেম্বরের মাঝামাঝি তাই বাইরে তেমন গরম নেই। রবিবারের বড় হাট বাড়ি থেকে বেশী দূরে নয়। শালা বাবু সাথে থাকবে এবং আকিকার আগপর্যন্ত খাসি আমার শশুরালয়েই ঘাস লতা পাতা খেয়ে জামাই আদরে দিনপাত করবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হাটে অনেক খাসি দেখে পছন্দ মত একটি কেনা যাবে। অকাট্য যুক্তি। আমি আর না করতে পারলাম না।
সকালের নরম রোদে দুটো গরম ভাত খেয়ে হাটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। অনেক বছর পর এমন কোলাহল হট্টগলের হাটে এসে খুব খারাপ লাগছে না। ছোট বেলায় অনেকবার এসেছি, এসেছি বাবার হাত ধরে। বাবা তাঁর পরিচিত দোকানে বসিয়ে রেখে বাজার সারতেন। যেন হাটের ভিড়ে হারিয়ে না যাই। বাবা দেখে যেতে পারেনি, তাঁর ছেলে এখন শুধু হাটের নয়, পৃথিবীর ভীড়েও হারায় না অথবা আকাশের তারা হয়ে তিনি আমার উপর ঠিকই নজর রাখেন যেন হারিয়ে না যাই!
ছাগলের বাজারে গিয়ে কোন ছাগল কিনবো বুঝতে পারছিনা। চুপচাপ দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। আসে পাশে চলছে দালালদের আনাগোনা- দরকষাকষি। পাশেই দেখলাম একজন দুটো খাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একটি খাসি বেশ স্বাস্থ্যবান বড়সড়। খাসির মালিক বললেন এটা তার বাড়িতে পোষা খাসি। আমি তাকে বিশ্বাস করে অল্প কথায় খাসিটি কিনে শ্যালকের হাতে দিয়ে বাড়িতে ফিরলাম। গিন্নী ছাগলের ছবি দেখে ভীষণ খুশি। ভাবলাম এবার তাহলে ঠকায়নি।
সাতসকালে শশুর বাড়ির ফোন। বাড়িতে নেবার পর থেকে ছাগল নাকি কিছুই খায়নি। সেই চনমনে ভাবও নেই, একটু পর পর শুধু প্রসাব করছে। অনেকটা নেতিয়ে পড়েছে। তাড়াতাড়ি ডাক্তার দেখানো হলো। ডাক্তার বললেন, ভয়ের কিছু নেই। একটু বেশী দাম পাবার লোভে জোর করে পাইপ দিয়ে ছাগলের পেটে পানি ঢোকানো হয়েছে, এখন সেই পানিই বের হচ্ছে। সামান্য কিছু টাকার লোভে পাইপ দিয়ে ছাগলের পেটে পানি ঢোকানো হয়েছে, পানি ঢোকানর সময় ছাগলটি নিশ্চয় অনেক চিৎকার করেছে, লাফালাফি করেছে, কষ্ট পেয়েছে। বিষয়টি আমি নিতে পারছিলাম না। যে এমন জঘন্য কাজ করে সে আর যাই হোক সৃষ্টির সেরা জীব হতে পারেনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:১৫