আন্তর্জাতিক এভিয়েশন চুক্তি মোতাবেক আগামী ২৪ নভেম্বর এর পর পৃথিবীর কোন দেশে হাতে লেখা পাসপোর্ট গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই প্রবাসীরা মেসিন রিডেবল পাসপোর্ট বা এম আর পি যুদ্ধে নেমেছেন। প্রায় পত্রিকায় দেখি বিপুল পরিমাণ প্রবাসীদের পাসপোর্ট এখন ও এম আর পি করা হয়নি এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। হবে কি হবে না তা হয়তো আমরা ভবিষ্যতে দেখতে পাবো। সেটা দেখার জন্য খুব বেশী দিন অপেক্ষা করতে হবেনা। কিন্তু এই এম আর পি করতে গিয়ে যে সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় তার একটি এখানে তুলে ধরলাম, কারন বাকীগুলো একেকদেশে একেক জনের একেক রকম অভিজ্ঞতা হতে পারে।
যারা এম আর পি করেছেন বা করবেন, তাঁরা হয়তো দেখে থাকবেন, এম আর পি আবেদন ফরমের শেষ পাতায় নির্দেশাবলীর ৭ নম্বর ধারায় লেখা আছে “ নামের সংক্ষিপ্ত রুপের পরিবর্তে পূর্ণরূপে ( যেমন- মোঃ/MD এর স্থলে MOHAMMAD লেখা বাঞ্ছনীয়। ...)
কিন্তু যাদের আগের পাসপোর্টে MD লেখা আছে তাদের ব্যাপারে কোন নির্দেশনা নেই। এখন আপনি আইন মেনে MD এর পরিবর্তে MOHAMMAD লিখলেন এবং দেখলেন আপনার আগের পাসপোর্টের সাথে নতুনটির মিল না থাকায় আপনার ভিসা নবায়ন হচ্ছেনা। আপনাকে আবার দৌড়াতে হবে বাংলাদেশ দুতাবাসে। তাঁরা আপনাকে হয়তো পূর্বের নিয়মে পাসপোর্ট দিতে রাজি হবে সেক্ষেত্রে আপনাকে আবারও গুনতে হবে আর একটি পাসপোর্ট নবায়ন ফি। কিন্তু এই যে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হলেন বা ঝামেলায় পড়লেন এর দায়ভার কার? ভুলতো আপনি করেন নি। আপনি যথাযথ নিয়ম নির্দেশনা পালন করেছেন।
আবার এই জাতীয় নির্দেশনা জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য নেই, কিন্তু এম আর পি নিতে হলে আপনাকে জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয় পত্র সংযুক্ত করতে হবে। অথচ পাসপোর্টের জন্য এই নির্দেশনা জারি করার পূর্বে জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য একই নিয়ম নির্দেশনা দেওয়া দরকার ছিল।
আন্তর্জাতিক ভাবে নামের তিনটি অংশ থাকে। প্রথম ( যেটা হবে ব্যাক্তির প্রকৃত নাম ) মধ্যম ( যেটা মায়ের বিয়ের আগের নামের শেষ অংশ, সংক্ষেপে প্রথম অক্ষর লেখা হয়ে থাকে সাধারণত) শেষ ( যেটা আসবে পিতার নামের শেষ অংশ, এটাকে পারিবারিক বা বংশের নাম বলা হয়)। মেয়েরা বিয়ের পরে তার নিজ নামের শেষ অংশ ব্যবহার করবে মধ্যম অংশে এবং শেষ অংশ হবে স্বামীর নামের শেষ অংশ।
এখন আমাদের নামে যদি শুরুতে থাকে এম ডি, প্রশ্ন শুরু হয় আসলে কি তোমার নাম এম ডি ? এম ডির অর্থ কি? যদি বলি মোহাম্মদ , তখন থেকে ডাকতে শুরু করবে মিঃ মোহাম্মদ। আবার হাসপাতালে গেলে আরও বিড়ম্বনা তাঁরা শুরুতে মনে করে আমি মনে হয় ডাক্তার , কারন আমার নামে এম ডি আছে যার অর্থ ডক্টর অফ মেডিসিন,যেটা সধারনত ডাক্তাররাই নামের সাথে লিখে থাকেন।
নামের শেষ অংশ পিতার নামের সাথে মিল করে রাখাও আমাদের নামের ক্ষেত্রে প্রায় মানা হয় না। তাই মোঃ রহিমুদ্দিনের ছেলের নাম রাখা হয় মোঃ রকিব হাসান। এই নামের শেষ পিতার নামের শেষ একই না হওয়ায় আবারও বিড়ম্বনা। শুরু হয় অনেক রকম প্রশ্ন। আবার আমারা কোন সুন্দর নাম বা বিখ্যাত ব্যাক্তির পুরো নামটাই রাখি সন্তানের নাম। বিদেশে ভিসা অনুমোদনের জন্য অপরাধীদের নামের সাথে নাম মিলিয়ে দেখা হয়। প্রথমে পিতার নাম খোঁজা হয় না। একই নাম অনেকের হওয়ায় মিলে যাবার সম্ভাবনা থেকেই যায় আর মিলে গেলেই শুরু হয় যন্ত্রণা, প্রমাণ করতে হয় আসলে সে ওই অপরাধী ব্যক্তি না।
আমাদের দেশে নামের জন্য সরকারী কোন নিতিমালা না থাকায় মূলত এই সমস্যার কারন । এই বিড়ম্বনা গুলো এড়ানোর জন্য সরকারের বড়সড় কোন আয়োজনের দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামুলক। এই বাধ্যতামুলক নিবন্ধন যদি নির্দিষ্ট নিতিমালা অনুসরণ করে অথবা এখন থেকে নবাগত শিশুর জন্ম নিবন্ধন করার সময় উপরে উল্লেখিত নিয়ম অনুসারে নাম নিবন্ধিত হয়, তাহলে আমরা এই যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই পাবো।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ ভোর ৬:৫৮