সোমবার সকালে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছি, রাস্তায় পৌরসভার সামনে এসে চালক গাড়ী থামালো। পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারীরা সারিবদ্ধ ভাবে জাতীয় সঙ্গীত গাইছে। এসময় এদের সামনে দিয়ে গাড়ী চলাচল নিষেধ নয়, কিন্তু মানুষের সারি পৌঁছেছে রাস্তার কিনার পর্যন্ত তাই সম্মান দেখানোর জন্য দাঁড়ানো। আজ কোন জাতীয় দিবস নয়। কিন্তু ফিলিপাইনের সমস্ত সরকারী বেসরকারি অফিসে প্রতি সোমবার “মর্নিং ফ্লাগ সিরমনি” করা বাধ্যতামূলক।
সেই মর্নিং ফ্লাগ সিরমনি বা সকালের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে, প্রার্থনা, জাতীয় সঙ্গীত, প্রতিজ্ঞা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কিছু সঙ্গীত ও কর্মসূচী পালন করা হয়। সোমবারের সেই ফ্লাগ সিরমনিতে সবাই জাতীয় পোশাক পরে। জাতীয় পোশাক বাধ্যতামুক না হলেও সোমবারের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান বাধ্যতা মুলক । ফিলিপিনোরা পোশাক-আশাকে অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন এক জাতী। কোন পোশাক ব্যবহারের পর পরিস্কার না করে সাধারণত দ্বিতীয়বার ব্যবহার করেনা। সোমবারে যখন পরিচ্ছন্ন জাতীয় পোশাকে সুশৃঙ্খল ভাবে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত গায় এবং ওয়াদাবদ্ধ হয়, তখন সেখানে এ পবিত্র অনুভূতি বিরাজ করে।
প্রতি সপ্তাহে জাতীয় কর্মসূচিতে দেশপ্রেম যে মজবুত হবে সে ব্যপারে সন্দেহ নেই। কিন্তু সন্দেহ হল আমার জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া নিয়ে। সেই ছাত্রজীবনে মাঝে মধ্যে গেয়েছি। আমাদের প্রাইমারি স্কুলের ছোট্ট মাঠে গলা ছেড়ে গাইতে শিখে ছিলাম সবচেয়ে প্রিয় সঙ্গীতটি। মাঠের দক্ষিন কোণায় একটি তালগাছ ছিল। অনেক সময় কোন শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলে ক্লাসে কোলাহল এড়াতে আমাদের সেই তাল তলায় পাঠাতেন ধারাপাত পড়া বা আমার সোনার বাংলা গাইতে। এরপর বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবসে কোন অনুষ্ঠানে থাকলে হয়তো দলীয় ভাবে গেয়েছি। কিন্তু এখন কি আমার পুরোটা মনে আছে! সন্দেহ হতেই বিড়বিড় করে গাইতে শুরু করলাম_
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি
চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস__
কিছুদুর এগিয়ে গোল পাকিয়ে গেল।অনভ্যাসে স্মৃতিগুলো ভোঁতা হয়ে গেছে। আমি প্রবাসী মানুষ জাতীয় সঙ্গীত চর্চা নেই, কিন্তু আমার মনে হল আমার মত এই অবস্থা আমাদের দেশের হয়তো অনেক নাগরিকের। দীর্ঘ দিনের অনভ্যাসে ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের জাতীয় পোশাক কি! লুঙ্গি পাঞ্জাবী! না, পাঞ্জাবী তো পাকিস্তানের পোশাক এবং অনেকটাই ধর্মীয় পোশাক। মেয়েদের জাতীয় পোশাকও ও তো শাড়ী বা সালোয়ার কামিজ নয়, তাহলে আমাদের জাতীয় পোশাক কোনটি! কয়েকজন বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করে দেখলাম তারাও এলোমেলো উত্তর দিচ্ছে। নিশ্চিত নয়। ইন্টারনেট ঘুরেও, উকিপিডিয়া ঘেঁটেও গ্রহণযোগ্য উত্তর পেলাম না। হয়তো আমাদের জাতীয় পোশাক আছে, আমি জানিনা বা আমার জানার সীমাবদ্ধতায় খুঁজে বের করতে পারিনি। সেই স্কুল জীবনেতো জাতীয় গাছ থেকে জাতীয় মাছ অনেক জাতীয় বিষয় মুখস্ত করেছিলাম। কিন্ত জাতীয় পোশাক পড়েছি বলে মনে পড়েনা।
একটি স্বাধীন দেশের সুদৃঢ় জাতীয় স্বত্বার জন্য জাতীয় সঙ্গীত অবশ্যই চর্চা থাকা উচিৎ, সেই সাথে নিজেদের জাতীয় পোশাক থাকলে মন্দ হয়না।