এক মাস পার হয়ে গেল কিছু লিখতে পারিনি। কি লিখবো, লিখতে গেলে তো রাজনিতি নিয়ে লিখতে হবে। দেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে লিখতে হবে। দেশের পরতে পরতে এখন ক্যান্সারের ঘা। ব্যাথায় জর্জরিত মাতৃভূমি। মিডিয়ার কল্যাণে এই ব্যাথা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে প্রতিনিয়ত কড়া নাড়ে আমার মনের দরজায়। এই প্রবাস জীবনে কত ভালমন্দ দেখছি, সেগুলো অনেক সময় মনে নাড়া দেয় । সে গুলো নিয়ে লিখার ইচ্ছে জাগে। লিখতে শুরু করলেই ব্যথায় কাতর মাতৃভূমির মুখ খানা ভেসে ওঠে।
ফিলিপাইনের মিন্দানাও অংশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেখানে MILF(মরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্ট),BIFF ( বাঞ্ছামরো ইসলামিক ফ্রিডম ফাইটার) প্রভৃতি নামে কিছু বিচ্চিন্নতাবাদী/ স্বাধীনতাকামী দল তৈরি হয়েছে। খুন , কিডন্যাপ , জিম্মি এটাই তাদের দাবি আদায়ের কৌশল। এটা অবশ্যই কোন গণতান্ত্রিক পন্থা নয়। তারা সন্ত্রাসী, চরমপন্থি। এই সন্ত্রাস তারা চালিয়ে আসছে কয়েক দশক ধরে। সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে তাদের দমন করার চেষ্টা করেছে। তাদের সাথে বসেছে। কথা বলছে। চুক্তি করেছে। বর্তমান আকিনো সরকার ও তাদের সাথে দফায় দফায় বসেছে। চুক্তি করেছে তাদের বাহিনী বৈধ বাহিনী হিসাবে মিন্দানাও এলাকায় কাজ করবে এই শর্ত মেনে নিয়ে শান্তি চুক্তি করেছে। এই চুক্তির মধ্যেই গত ২৫ জানুয়ারী,২০১৫ MILF, BIFF এর হাতে সরকারের বিশেষ পুলিশ বাহিনীর ২৪ জন সদস্য প্রাণ হারিয়েছে। সমগ্র দেশ বিসাদাচ্ছন্ন,অনেকেই সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা করছে।টিভির পর্দা জুড়ে শোকের মাতম। তারপরও কোন দল এখানে এক মিনিটের জন্যও হরতাল ডাকেনি,কেউ রাস্তায় নেমে আসেনি,কোন গাড়ী ভাংচুর করেনি,আগুন লাগায়নি,পেট্রোল বোমা ছুড়েনি। সরকার এখন ও শান্তির ব্যাপারে আশাবাদী।চলছে তদন্ত আলাপ আলোচনা।হয়তো তারা আলাপ আলোচনায় কোন শান্তির পথ খুঁজে পাবে।কিন্তু শান্তির জন্য,গণতন্ত্রের জন্য তারা দেশের অগ্রগতি বন্ধ করে দেয়নি।আর সে জন্যই তাদের অর্থনীতি এতটাই অগ্রগামী যে বিশ্বব্যাংক আশা করছে খুব শীঘ্রই ফিলিপাইন থেকে দারিদ্রতা বিদায় নিবে।
আমাদের দেশেও চলছে গণতন্ত্রের আন্দোলন।উভয় পক্ষই বলছে তারা গণতন্ত্র রক্ষা করছে/রক্ষার আন্দোলন করছে।প্রতিদিন বাস পুড়ছে,মানুষ পুড়ছে,দেশ পুড়ছে,দেশের অর্থনীতি পুড়ছে।কিন্তু কেউ কারও মুখ দেখবে না,কথা বলবে না,আলোচনা করবে না। গণতন্ত্র রক্ষার জন্য উভয় পক্ষই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। হয়তো তারা গণতন্ত্র রক্ষা করেই ছাড়বেন। কিন্তু জনগণ তো রক্ষা পাচ্ছে না।তাহলে এতদিন যেটা পড়েছিলাম “Government of the people, by the people, for the people” এটাই গণতন্ত্রের উৎকৃষ্ট সংজ্ঞা, সেটা কি মিথ্যা ? অবস্থাটা যেন মরুক জনগণ, কিন্তু বাঁচুক গণতন্ত্র।