বাংলাদেশে আমার মফঃস্বলের বাড়িতে ইন্টারনেট সমস্যা নিয়ে ২০১৩ সালের ১৩ই এপ্রিল প্রথম আলোতে “ শুধু চাকাই ঘোরে” নামে একটি লেখা লিখে ছিলাম। উদার মনে প্রবাসিদের মনকষ্ট বুঝে প্রথম আলো লেখাটি প্রকাশও করেছিলো। তারপর সময় পার হয়েছে প্রায় আড়াই বছর। দেশে ২জি নেটওয়ার্কের সাথে এসেছে ৩জি নেটওয়ার্ক। কিন্তু আমাদের নেটওয়ার্কের কোন উন্নতি হয়নি, উল্টো দিন দিন নেট ওয়ার্ক হারিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে আমার পরিবারের বসবাস বনলতা সেনের শহর নাটোর স্টেশন বাজার থেকে ৭ কি মি দক্ষিনে। ২০১২ সালে সেখানে মোবাইল ফোনের সিগন্যাল ছিল ৩-৪ বার। কিন্তু ইন্টারনেট এর গতি ছিল খুব কম, ওয়েব সার্ফিং বা ভিডিও কল করা খুব কঠিন। আমার এই প্রবাস জীবনের একাকিত্বের মাঝে খুব ইচ্ছে করে স্ত্রী, পুত্র , পরিবারের সদস্যদের দেখতে।দুর্বল নেটওয়ার্কে সেটা সম্ভব হয়না। ২০১৩ সালে ৩জি নেটওয়ার্ক চালু হলেও, সেটা এখন পর্যন্ত শহর কেন্দ্রিক বিস্তার পেয়েছে। শহরে ৩জি নেটওয়ার্ক শুরু হলে দেশের প্রধান দুটি অপারেটরকে ইমেইল করলাম। বরাবরের মত তারা আশার বানী শোনালেন। কিন্তু দিন দিন হারিয়ে যেতে থাকে আমাদের ২জি নেটওয়ার্কও। এখন মাঝে মাঝে কোন নেটওয়ার্কই থাকেনা, ইন্টারনেটতো দুরের কথা মোবাইল ফোনে কথা বলাই দায়। দিনের পর দিন প্রধান মোবাইল অপারেটর দের সাথে যোগাযোগ করেও কোন সুফল পেলাম না। আমার স্ত্রীর চেষ্টার শেষ নেই। সে হার মানতে রাজি নয়। বিভিন্ন উপায়ে সে নেটওয়ার্ক বাড়ানোর চেস্টায় ব্যস্ত। সেই সাথে সে মোবাইল অপারেটর দের সাথেও যোগাযোগ করে।
এভাবেই সে একদিন বাজার থেকে একটি এন্টেনা সংগ্রহ করে। মুলত এই এন্টেনা আমাদের দেশে মোবাইল যুগের শুরুতে ব্যবহার করা হত। এখন আর চখে পড়েনা। এই এন্টেনা এনে সে প্রায় ৩০-৩৫ ফুট লম্বা একটি বাঁশের মাথায় বেঁধে তার টেনে নিল ঘরের মধ্যে। তারের এই প্রান্তে মোবাইল আটকানোর ব্যবস্থা আছে। সেখানে ইন্টারনেট মডেম আটকানো যায়না। পরীক্ষামূলক সে তারের মাথা মডেমের সাথে বেঁধে দিয়ে ল্যাপটপে সংযোগ দিল। যাদুর মত কাজ। ফুল নেটওয়ার্ক। সে তো আনন্দে আত্মহারা।
কিন্তু এবার ও সে হতাস হল যখন স্কাইপে কথা বলতে গিয়ে দেখল, কথা কোন রকমে শোনা গেলেও ভিডিও চলছে না। সে মডেম চেক করে দেখল ডাউনলোড গতি ১৫০কেবিপিএস+ কিন্তু আপলোড গতি মাত্র ১০ কেবিপিএস+। এখন ও সে সময় পেলেই চেস্টা করে কিভাবে ভিডিও চলবে, কথার সাথে আমরা একে অপরকে দেখতেও পাবো, কিন্তু ইন্টারনেটের দুর্বল গতির জন্য আমাদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেছে, বন্ধ হয়নি স্কাইপ ভিডিওর চাকাঘোরা।