তারিখ ১২ এপ্রিল। সময় বিকেল সাড়ে ৩ টা। স্থান বলাকা হল। বর্তমান অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অনেক পরিচালক-প্রযোজক ই যখন ছবি মুক্তি দিতে সাহস পাচ্ছে না তখন দেহরক্ষী ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বেশ সাহসী সিদ্ধান্তই নিয়েছে বলা যায়। তাদের সেই সাহসিকতাকে সম্মান দেখাতেই আমরা মাত্র ৭ জন মিলে চলে আসলাম হলে। সিদ্ধান্তটি যে কতটা সাহসী তা বোঝা গেল হলে ঢোকার পর। শুক্রবার সাড়ে ৩ টার শো অথচ হল প্রায় অর্ধেকও ভরে নি! যাই হোক,যথাসময়েই ছবিটি শুরু হল।
কাহিনী সংক্ষেপ:
ঢাকা শহরের আন্ডারওয়াল্ডের ডন আসলাম(মিলন)।সে ভালবাসে সোহানা(ববি) কে। কিন্তু সোহানা তাকে ভালবাসে না। সোহানা অসুস্থ বাবার( কাজী হায়াত) চিকিৎসার খরচ যোগাতে বিভিন্ন হোটেলে নেচে বেড়ায়। একদিন সোহানার ভালবাসা পাবার আশায় তার বাবাকে কিডন্যাপ করে আসলাম। আর সোহানাকে শেরপুরের নিজ বাংলোয় আটকে রাখে।
আসলামের প্রতিপক্ষ শহরের আরেক ডন সিজার।আসলাম সিজারের বিদেশফেরত ছোট ভাইকে হত্যা করে লাশ গুম করে। ক্ষিপ্ত হয় সিজার।৭২ ঘন্টার মধ্যে ভাইকে ফেরত চায়। আর তা না হলে( এসময় দর্শকদের মধ্যে রসিকতা করে কেউ কেউ বলে ওঠেন তা না হলে লাগাতার হরতাল ) আসলামের জান সোহানার ক্ষতি করার হুমকি দেয়।
এসময় ব্যবসায়িক প্রয়োজনে আসলামকে আমেরিকায় যেতে হয়।সোহানার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে দেহরক্ষী হিসেবে নিয়োগ দেয় একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু তীব্র(কাজী মারুফ) কে।
শুরু থেকেই সোহানা তীব্র কে অসহযোগিতা করতে থাকে। সোহানাকে নিয়ন্ত্রণ করারজন্য হাতকড়া এমনকি সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থাও করতে হয় তীব্র কে। সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে টয়লেটেও।( এসময় দর্শকদের মধ্যে বেশ উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আমার এক বন্ধু সোহানার সম্ভাব্য গোসলের দৃশ্যের কথা চিন্তা করতে থাকে । যদিও পরিচালক তাকে হতাশ করেন)।
একপর্যায়ে সোহানা বুঝতে পারে একমাত্র তীব্রর মত কেউ ই তাকে আসলামের মত সন্ত্রাসীর হাত থেকে বাঁচাতে পারবে। তাই সে তীব্র কে তার ভালবাসার ফাঁদে ফেলতে চায়। কিন্তু তার সবরকম চেষ্টাই ব্যর্থ হতে থাকে। কারণ তীব্র কিছুতেই তার বন্ধুর ভালবাসার দিকে হাত বাড়াবে না। তাহলে উপায়...?
মিলনের অভিনয় ভাল লেগেছে। ববি কে পরিচালক যতটা না অভিনেত্রী হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন তার চেয়ে হয়তো আইটেম হিসেবেই বেশি দেখাতে চেয়েছেন।ববি যথেষ্ট আবেদনময়ী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। কাজী পরিবারের পিতা-পুত্রের কারো অভিনয়ই ভাল লাগে নি। হায়াত সাহেবের এক্সপ্রেশন গুলো জানি কেমন কেমন। আর মারুফের সংলাপ তো পুরোই রোবোটিক লেগেছে। মারুফের সংলাপ শুনে পাশে বসা এক বন্ধু একসময় বলেই বসলো- দোস্ত, একটা বালিশ দে,ঘুমাই । চাকর-বাকরদের ভাঁড়ামোর অংশগুলো অহেতুক মনে হয়েছে। কোন দরকার ছিল না।
ক্যামেরার কাজ খারাপ লাগে নাই(এই বিষয়ে আমি এক্সপার্ট না)। প্রিন্ট ভাল। গানগুলো মোটামুটি । তবে ১ টি গানের চিত্রায়নে ভারতীয় মুভির প্রভাব আছে বলে মনে হল।কাহিনী খুব বেশী শক্ত মনে হয় নি। বুকের বামপাশে ২ বার গুলি লাগার পরও নায়ক মরলো না আর ওই একই জায়গায় একবার গুলি খেয়েই ভিলেন মারা গেল-ব্যাপারটা ঠিক মাথায় ঢুকলো না।
টাইমপাস মুভি হিসেবে দলবেঁধে গিয়ে দেখে আসতে পারেন। বাট সিরিয়াস মুডে দেখতে গেলে নিজ দায়িত্বে দেখবেন।
শেষ করার আগে একটা পুরনো প্রশ্ন আবারো করছি- লাস্ট কবে কোন মুভি তে প্রবীর মিত্র কে ফুলটাইম বেঁচে থাকতে দেখেছিলেন?
আর হ্যা, নতুন বাংলা বছরের শুভেচ্ছা সবাইকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:৫৫