ব্লগে মাইনাস দেবার অপশন নাই। তাই সাহস করে একটা পোস্ট দিতাছি। আগে দিলে মাইনাস খেতে খেতে জান যেত। বিশ্বকাপের দল ঘোষনা করা হয়েছে ১৯শে জানুয়ারী। অথচ আজও মাশরফি আর আশরাফুল বিতর্ক চলছে। এই পোস্টে কমেন্ট করতে গিয়ে এই পোস্ট দেবার দুঃসাহস দেখাচ্ছি।
মাশরাফিকে বাদ দেয়া আর আশরাফুলকে দলে নেয়ায় নির্বাচকদের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। কেউ কেউ জানতে চেয়েছেন এই নির্বাচকেরা কোনদিন ক্রিকেট খেলেছে কি না? তাদের অভিযোগগুলা আসলে কি কি?
১। মাশরাফি কেন বাদ?
২। আশরাফুল কেন দলে?
৩। অলক বাদ পড়ল কেন?
মাশরাফি কে দলে নেবার পক্ষে যুক্তি কি? ধরে নিলাম সে বিশ্বকাপের আগেই সুস্থ হয়ে গেল। তারপর তাকে আবার জিম্বাবুয়ের মত বিশ্বকাপে ম্যাচ প্রাকটিস করানোর সুযোগ দিতে হবে? তার আগে তাকে পরীক্ষা করার উপায় কি? এর আগের সিরিজেও ছন্দে ফিরতে জিম্বাবুয়ের মত দলের বিপক্ষে দুই ম্যাচ লেগেছে। তার জন্য আগের ম্যাচের ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ রুবেলকে দলের বাইরে থাকতে হয়েছে। বলেন দেখি, বিশ্বকাপে মাশরাফিকে ম্যাচ প্রাকটিসের সুযোগ দিতে কাকে পানি টানতে হবে? রুবেল নাকি শফিউলকে? আর মাশরাফি যে ফিট থাকবে তারই বা নিশ্চয়তা কি? অনিশ্চয়তায় ঘেরা একজন ক্রিকেটারকে স্কোয়াডে রেখে কাকে বাদ দিতে চাইছেন? শেষ মুহুর্তে সে যদি ফিট না হয় তবে কি ১৪ জনের স্কোয়াড নিয়েই খেলতে চান? আনফিট মাশরাফি বিশ্বকাপে আবার যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসে তবে তার দায় কে নিবে? দুর্ঘটনা তো বলে কয়ে আসে না? এর পর আবার যদি মাশরাফি হাটুর ইন্জুরীতে পরে তবে তার ক্যারিয়ারটাই শেষ হয়ে যাবে। অতি লোভী সেই তাতীর গল্প সবাই জানলেও সোনার ডিম পাড়া হাসটার পেট চেড়ার রিস্ক কিম্বা লোভ দেখি সবারই আছে।
আশরাফুল প্রসঙ্গে কিছু বলা রিস্ক। তাই বলব না ভেবেছিলাম। তবুও বলছি। আশরাফুলকে দলে রাকিবুলের বিকল্প হিসেবে নেয়া হয়েছে। মানে রাকিবুল ব্যার্থ হলে তবেই আশরাফুলের সুযোগ মিলবে। যদি আশরাফুলকে স্কোয়াডে না রাখা হত তবে রাকিবুল একবারেই চাপমুক্ত থাকত? অনেকেই বলছে আশরাফুল কেন? কেন নাফিস ৪ নম্বরে খেলতে পারবে না। না, তাদের দোষ দিব না। খালি এইটুক বলব ক্রিকেট অত সস্তা খেলা না। ৩ কিম্বা চার নম্বর দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ব্যাটিং পজিশন। এই পজিশনের ব্যাটসম্যানকে খালি পেস নয় স্পীন এটাকের বিপক্ষেও সমান কার্যকর ব্যাটিং এর দক্ষতা থাকতে হবে। যদি কেউ ধরেই থাকেন নাফিস স্পীন খুব ভাল খেলে তবে তাকে আমি অনুরোধ করব নাফিসের সেরা কিছূ ইনিংসের ভিডিও দেখতে। সেখানেও তার স্পীন দুর্বলতা খুজে পাবেন। এই দিক চিন্তা করলে রাকিবুল যথেষ্ট ভাল। স্পীন কিম্বা পেস - সে সমান। স্পীনে তার ফুটওয়ার্ক যথেষ্ট ভাল। তবে সে মারাত্বক স্বার্থপর ব্যাটসম্যান। সে দলের জন্য নয় নিজের প্রয়োজনে খেলে। রাকিবুলের জায়গায় নির্বাচকদের আর একটা অপশন ছিল। সেটা মুশফিক। একজন জেনুইন মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান। স্পীন - পেস সব এটাকেই সমান কার্যকর। দলের প্রয়োজনে বড় ইনিংস খেলার যোগ্যতাও আছে। জানিনা নির্বাচকরা কেন তার জন্য ৬ নম্বর পজিশন ফিক্সড করে রেখেছে। যেখানে সে তার সেরা খেলাটা খেলতে পারছে না। অথচ প্রিমিয়ার লীগে ৮ ম্যাচ খেলেছে ৪ নম্বরে। যেখানে ৬ টা হাফ সেঞ্চুরীরর ইনিংস। যার মধ্যে ৫ টাই সম্ভবত ৮০+ ।
মিডর অর্ডারে নির্বাচকরা মুশফিক কে খেলাবে না। আবার রাকিবুলের উপরও যথেষ্ট আস্থা নাই। বিকল্প খেলোয়ার চাই। কে হতে পারে এই খেলোয়ার? চলতি প্রিমিয়ার লীগের মিডল অর্ডারে সেরা পার্ফমার কেই বেছে নেয়া উচিৎ। যারা ঘরোয়া লীগের খবর রাখেন তাদের অন্তত জানা উচিৎ চলতি প্রিমিয়ার লীগে মুশফিকের পরেই ৩/৪ নম্বরের সেরা পার্ফমার আশরাফুল। সেঞ্চুরী পায় নাই। তবে হাফ সেঞ্চুরীর সাথে সাথে ৮০+ কিম্বা ৯০+ ইনিংস ও আছে। তাছাড়া সে ন্যাশনাল ক্রিকেট লীগের সীমীত ওভারের ক্রিকেটে সেরা খেলোয়ার ছিল। এর পরেও যারা আশরাফুল কে বাদ দেবার পক্ষে তারা দয়া করে ৪ নম্বরে রাকিবুলের বিকল্প একজন ব্যাটস্যম্যানের নাম বলে যাক। তাহলে বুঝব তারা সত্যিই ক্রিকেটকে ভালবাসে। ১ কিম্বা ২ নম্বরে খেলা কোন ব্যাটসম্যান নয়। ৪ নম্বর পজিশনের ব্যাটসম্যানের নাম চাইছি কিন্তু।
আর অলক? কি কারনে তাকে দলে নিতে হবে? বিগ হিট করার ক্ষমতার জন্য? জাতীয় দল ছাড়াওতো আরো ম্যাচ হয়। লীগ চলতেছে। এক মোহামেডানের বিপক্ষে ছাড়া তার বিগ হিট করা কোন ম্যাচের কথা উল্লেখ করেন তো দেখি! এক ম্যাচই যদি একজন খেলোয়ারকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা করে দেয় তবে সেই দলের ভবিষ্যত নিয়ে সত্যিই আমি চিন্তিত। হয়ত অনেকেই বলবেন, অলকের আইসিএল এর পার্ফমেন্সের কথা। আইসিএল কিন্তু টি-টুয়েন্টি ছিল, ওয়ানডে নয়। আর সেখানে লাহোর বাদশাহ ছাড়া আর কোন দলে একটার বেশি ভাল বোলারও ছিল না। অলক আইসিএল এ টি টুয়েন্টিতে পারফর্ম করেছে বলে যদি জাতীয় দলে খেলার যোগ্য হয় তবে বাংলাদেশের সর্বশেষ খেলা টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের ২ ম্যাচের একটাতে ৬০ করা আশরাফুল কি দোষ করল? টি-টোয়েন্টির এভারেজ, স্ট্রাইকরেট যাই ধরি না কেন আর্ন্তজাতিক টি-টুয়েন্টিতে আশরাফুল বাংলাদেশের সেরা পারফমার। আইসিএলের তৃতীয় সারীর দলের বিরুদ্ধে ভাল খেলে অলক যদি দলে আসতে পারে তবে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টির সেরা পারফমার কেন বাদ পড়বে? কারন একটাই, টি-টুয়েন্টি আর ওয়ানডে এক নয়। আমিও চাই অলক ফিরে আসুক। তার আগে এ দলের হয়ে কয়েকটা ম্যাচ খেলুক। নিজের যোগ্যতার প্রমান দিক। তার পরে ফিরে আসুক। নয়ত আফতাবের মতই দল থেকে হাড়িয়ে যেতে সময় লাগবে না।
সবশেষে একটা কথাই বলতে চাই, আমি না হয় নাদান পাব্লিক। আশরাফুলের ফ্যান। তাই আশরাফুলরে দলে দেখতে চাইছি। দেশের সকল বিগত অধিনায়করা সবাই ৩ নম্বরে আশরাফুলরে খেলানোর পক্ষে রায় দিয়েছে কি মনে করে? ওরাও নিশ্চই ক্রিকেট বোঝে না। ক্রুশিয়ানী (সম্ভবত নামটা তাই ছিল) বাংলাদেশ ত্যাগ করার আগে বলেছিল, “তোমাদের দেশের সবাই ফুটবল একটু বেশি বোঝে। মিডিয়া বেশি বোঝে, বোর্ড বেশি বোঝে, জনগন বেশি বোঝে - বোঝেনা খালি বিদেশ থেকে আনা কোচ।“ ফুটবলের পরিনতি তো দেখতেছি। পাব্লিক বেশি বুঝে ক্রিকেট কেও একই পথে নিয়েন না। ক্রিকেট খেলার মাঠটা আবেগ দেখানোর জায়গা নয়। আবার দলটা কোন মিউজিক্যাল চেয়ারও না। ক্রিকেট কে ভালবাসেন ভাল, সাথে ক্রিকেটারদেরও ভাল বাসতে শিখুন।