বড়দের(২০+)“কিশোর সাইন্সফিকশন”
তুমুল বৃষ্টি ঝরছিল ।রাত ১১ বা সাড়ে১১টা হবে। টিনের চালে ঝম ঝম বৃষ্টির শব্দ আমার খুব প্রিয়। আর এই সময় যদি স্ত্রী কাছে থাকে তাহলে তো সোনায় সোহাগা। সে পাশেই ছিল। আমার আর একটি মেয়ে বাবু হয়েছে,মাস ছয়েক বয়স। তার মুখে দুধ দিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুম পাড়াবার চেষ্টা করছে সে। এই কয় বছর আমার সাথে সংসার করে সে ও বুঝে গেছে আজ আমি তাকে নিয়ে মাতাল হয়ে যাব। আর আমার সাথে থেকে থেকে বর্ষার দিনের নেশায় সেও অভ্যস্ত পড়েছে। আমার দিকে কেমন এক দৃষ্টিতে তাকালো যার অর্থ – আর একটু অপেক্ষা কর গো!আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত।
হঠাৎ দরজায় ঠক্ ঠক্ ঠক্। এ সময় আবার কে? প্রথমে বিরক্ত,পরে ভয় পেলাম। এই বৃষ্টির মধ্যে এত রাতে দরজা খোলা কি ঠিক হবে? আমি বৌ এর মুখের দিকে তাকালাম। বলল- দ্যাখ কে। আমি একটু ইতস্তত করে বললাম – এত রাতে কে আসতে পারে!
পাশের ঘরে আমার বাবা মা থাকেন। আরেক পাশে ভাই। বৃষ্টির শব্দে ওরা কেউই কিছু শুনতে পাবেনা। আমার ইতস্তত ভাব দেখে বৌ আবার বলল- যাও দ্যাখ না, কারো বিপদ ও তো হতে পারে? আমি পাশের ঘরে গিয়ে বাইরের দরজা খুলতেই দেখলাম বেশ লম্বা ধরনের দুজন লোক কালো রেইন কোট গায়ে, আমার সামনে দাঁড়িয়ে । হাতে ছোট মত কি একটা আমার দিকে ধরা। অন্ধকারে দেখতে না পেলেও বুঝলাম আমার কাম সারা। সবুজ রং এর একটা গোল আলো আমার কপালে এসে পড়ল। আমি শুধু শুনতে পেলাম- কে এসেছে গো ? তারপর অন্ধকার, আর কিছু মনে নেই।
চোখের সামনে সাদা আলোর ছটায় ঘুম ভাঙ্গল। প্রথমে মনে হল ফাইভ স্টার কোন হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। পরে মনে হল কোন গবেষণাগার বা কোন ডাক্তারের চেম্বার হবে। সামনে দিকে তাকিয়ে যা চোখে পড়ল তার কিছুই চিনিনা আমি। আবার ভয়ের অনুভূতিটা হল। ঘাড়ের কাছ থেকে শিরদাঁড়া বেয়ে শিরশির করে কম্পন নেমে গেল। পেছনের চুল গুলো খাড়া হয়ে উঠল। আমি উঠে বসতে চেষ্টা করলাম। মাথার কাছ থেকে পরিষ্কার বাংলায় শুনতে পেলাম- আস্তে আস্তে, তাড়াহুড়ো কোরনা। ভয়ের কিছু নাই। সাথে সাথেই আমার ভয় কেটে গেল। আস্তে আস্তে উঠে বসে পেছন দিকে ঘুরলাম।দুজন লোক, রেইন কোট ওয়ালাদের মতই সাইজ। মুখমণ্ডল লম্বা ধরনের,উটের মত ঠোঁট। গোল গোল চোখের উপর ভুরূ গজগজ করছে। দাঁড়ি মোচ নেই। শরীরের কোন অংশ দেখা যাচ্ছে না।তবে মুখমণ্ডলের রং সাদা।বয়স বোঝা যাচ্ছেনা। ৪০ থেকে ৬০ এর মধ্যে যে কোন বয়স হতে পারে। ডাক্তার দের মত সাদা পোশাক পরে আমার দিকে অপলক চেয়ে আছে। যেন আগে কক্ষনো মানুষ দেখেনি। অথবা আমার শরীরের ভেতর কিছু খুজছে।
বললাম- আমি এখনে কেন? কোথায় এটা, আপনারাই বা কে?
ডান পাশের জন বয়সের তুলনায় বেশ টনটনে গলায় বলল- তোমার কাছ থেকে আমরা কিছু চাই। এটা একটা ভ্রাম্যমান গবেষণাগার। আর আমরা পৃথিবীর মানুষ। ধারাবাহিক ভাবে তিনটি প্রশ্নের উত্তর গড়গড় করে বলে ফেললো।
আমার রাগ হল,বললাম- আমি কি মঙ্গল গ্রহের মানুষ নাকি? আপনারা যে মানুষ তাতো দেখতেই পাচ্ছি। যানতে চাচ্ছি আপনারা আসলে কে? কি করেন?
ডান পাশের লোক টা বাঁ পাশের জন কে কি যেন ইশারা করল। সে তাদের পিছনে রাখা টেবিল থেকে ঘড়ির মত কি যেন এনে আমার ডান হাতের কব্জি তে পরিয়ে দিলো। সাথে সাথে আমার শরীর টা কেমন যেন ঠাণ্ডা হয়ে গেল। মনে হলো- ধুত্তরি, এদের সাথে বকে লাভ আছে ? তার চেয়ে বরং একটু ঘুমাই। আমি শুয়ে পড়ার চেষ্টা করতেই আবার এসে যন্ত্রটা খুলে নিল।
প্রথম জন একটা মগে করে গরম কি যেন আনছে। মগ থেকে ধুয়া উঠছে। কফির মত একটা গন্ধ ছড়াল। মগ টি আমার হাতে দিয়ে বেশ আড্ডা মারার সুরে বলতে লাগলো-আমরা তোমাদের নক্ষত্র প্রতিবেশী। তোমাদের নক্ষত্র থেকে আমাদেরটা প্রায় ১০ আলোকবর্ষ দূরে। তোমরা যার নাম দিয়েছ PROCYON। খাও, ভয় নেই তোমাদের দেশের ই কফি। তোমার প্রয়জনীয় সব কিছু আমরা এনে রেখছি।
আমি স্বপ্ন দেখছি নাকি? বলে কি ব্যাটা! পাগল টাগল নাতো! বুঝতে পারলাম না ঠিক কার পাল্লায় পড়েছি। বললামঃ
-কেন,আপনাদের এখানে কিছু পাওয়া যায় না? সে বলল- এটা তো ভ্রাম্যমাণ গবেষনাগার। আমরা তোমার গ্রহ থেকে প্রায় ৪আলোকবর্ষ দূরে CENTAURYর কাছাকাছি শুন্যে ভেসে বেড়াচ্ছি। তাই প্রয়জনীয় সব জিনিস আগেই সংগ্রহ করে রেখেছি। আমার পা ও হাত কাঁপতে শুরু করেছে। যদিও বিছানায় বসে আছি। শিরদাঁড়া বেয়ে ঘাম নেমে গেল। লোক টি কাছে এসে অভয় দিয়ে বলল- তোমার চিন্তার কোন কারন নাই। তুমি একদম ভয় পেও না। নাও এখন কফি টা খেয়ে নাও।আমাদের কাজ হয়ে গেলেই যত শীঘ্র সম্ভব আমি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসব।
আমার গলা শুকিয়ে কাঠ। বললাম- পানি খাব।দ্বিতীয় লোকটি সাথে সাথে পানি নিয়ে আমার সামনে হাজির,যেন আগে থেকেই জানতো আমি পানি চাইব। কফি শেষ হওয়া পর্যন্ত কেউ কোন কথা বললনা।
কফি শেষ হতেই দ্বিতীয় ব্যাক্তি বলে উঠল- আমার সাথে এসো, এখন তোমাকে কিছু জিনিস দেখাব। তাহলেই বুঝতে পারবে ,তোমাকে কেন আমাদের দরকার।
লোকটির কণ্ঠস্বর ও বলার ধরনে আমি একটু সাহস ফিরে পেলাম। এবার আমাকে দ্বিতীয় লোকটি সাথে করে নিয়ে আসল একটি বিরাট রুমের মধ্যে। রুমটি এত উচু যে তার ছাদ দেখা যাচ্ছেনা।তবে উপরে যে কিছু আছে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে।হল রুমটির চারিপাশে প্রায় ১০/১২ ফুট উচু,১২ফুট চওড়া ও প্রায় ৩৫ ফুট লম্বা বাক্সের মত কয়েক টি ঘর দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিটি ঘরের সামনের দুই দিকে বড় বড় দুই পাল্লার দুটো দরজা ।দরজার পাল্লায় মানুষ সমান উঁচুতে সচ্ছ কাঁচ লাগানো আছে। আমাকে ঐ কাচের সামনে নিয়ে গিয়ে বলল দ্যাখ। ভিতরে অন্ধকার।আমি তাকাতে ই আলো জ্বলে উঠল।
ভেতরে দেখে আমার ভিতরে গুলাতে শুরু করেছে। কেননা ভিতরে সারাটা জুড়ে পাঁচ ছয় তলা র্যাকের মত আছে। ঐ র্যাক গুলোর উপর গোল গোল সচ্ছ জার থরে থরে সাজানো। প্রতিটি জার থেকে কয়েকটি চিকন মোটা হোস পাইপের মত বের হয়ে দেয়ালের মধ্যে ঢুকেছে । জার গুলোর মধ্যে মানুষের বাচ্চা। মাথাটা হয়েছে। সম্পূর্ণ শরীর এখনো হয়নি। লোকটি স্বাভাবিক ভাবে বলল- “ সব পুরুষ” । যেন মনে হচ্ছে হোস্টেলে ছেলে মেয়েদের থাকার কথা বলছে !অপর পাশের ঘর গুলোর দিকে ইশারা বলল- “ঐ দিকে যে বাক্স গুলো দেখছ ও গুলো মেয়েদের। এই প্রথম আমরা ছোট্ট এই প্রজেক্টটি শুরু করেছি ।এবার দশ হাজার ছেলে ও দশ হাজার মেয়ে বের হবে। চল তোমাকে আর একটা জিনিস দ্যাখাই”। গলিত মাংস পিন্ডের মত মানুষের বাচ্চাদের মাথা গুলোকে দেখে আমার পেটের ভিতর গুলাতে শুরু করেছে। মাথা ঝিম ঝিম করছে। বমি হয়ে যেতে পারে।
আমি তাড়াতাড়ি বললাম- না আমি আর দেখব না। আপনারা কি চান আমার কাছে?
লোকটি বেশ শান্ত ভাবে বলল- ঠিক আছে চল তবে,চেম্বারে যাই। আমরা চেম্বারের কাছে পৌছাতেই আচমকা অ্যালার্ম বেজে উঠল।সবকিছু অন্ধকার।দু’সেকেন্ড পর ই আবার হালকা আলো । প্রথম লোকটি চেম্বারেই ছিল। সে একটা যন্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু নির্দেশ দিচ্ছে বলে মনে হল। –ভিতরে আলোর কেমন যেন পরিবর্তন মনে হচ্ছে।হঠাত সব শুনশান। এতক্ষণ যে কোন শব্দ ছিল তা বুঝতে পারিনি। এখন শান্ত হতে তা বোঝা গেল । প্রশ্ন বোধক চাহনি নিয়ে ওদের দিকে তাকালাম । সে একটু হেসে বলল- “ভয় পেওনা, কিছু হবেনা। পৃথিবীর মানুষেরা আমাদের মারবার জন্য খুজে বেড়াচ্ছে”। আমি অবাক হয়ে ভাবলাম ,পৃথিবীর মানুষ এত আলোক বর্ষ দূরে আসতে পেরেছে! আমরা সাধারণ মানুষ তো তা জানি ই না। আমার মনোভাব বুঝতে পেরে লোকটি বলল-“ তোমাদের পৃথিবীর মানুষ না ।এরা আমাদের পৃথিবীর মানুষ”।
এই সময় এক সেকেন্ডের জন্য যেন একটু ঝাকুনি বোধ হল।শব্দের ও কেমন যেন পরিবর্তন। আমি ভয়ে আবার ওদের দিকে তাকালাম। প্রথম জন হেসে বলল- ওরা আমাদের একটা পাথর খন্ড ভেবে পার হয়ে চলে গেছে।নিঃশ্চিন্ত হওয়া গেল।
অনেক গুলো প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। হিসেব মিলছেনা কিছুতেই। এরা কি ধোঁকাবাজ? আমি গিজ্ঞেস করলাম- আপনি যে বলছেন আপনি অন্য পৃথিবীর মানুষ।তো আমার সাথে বাংলায় কথা বলছেন কি করে?
-আমরা কিছু দিন ধরে তোমাকে অনুসরন করছি। তোমাদের ভাষা,তোমাদের চিন্তা, আচার আচরন, যৌন জীবন,ধর্মীয় ভাবনা ইত্যাদি সব আমাদের সৃতি যন্ত্রে তুলে নিয়েছি । সেগুলো বিশ্লেষণ করে রপ্ত করেছি। তার পরে তোমাকে এখানে এনেছি আমাকে তোমার যেন বুঝতে সুবিধা হয়।
আমি শুধু বললাম –ও। অনেক প্রশ্ন মাথায় ভিড় করছে। চিন্তা করছি কোনটা জানা আগে দরকার। বললাম- এই ভাবে মানুষের বাচ্চা তৈরি করছেন কেন?
হ্যা,এই বার ঠিক প্রশ্ন করেছ। আমাদের ধরায় মানুষের সংখ্যা কমে গেছে। কিন্তু আমাদের সরকারের দ্রুত অনেক মানুষের দরকার। যে সব বাচ্চা দেখলে, এদের মধ্যে কিছু কিছু মানবিক গুনাবলি নাই। আমি এটা নৈতিকভাবে সমর্থন করিনা। তাই এই গবেষণাগার সহ পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
-কেন,ওরা কি এই বাচ্চা গুলোকে দিয়ে যুদ্ধ করাবে?
-হ্যা ঠিক ই ধরেছ। কিন্তু আমি এই জন্য চিন্তিত নই। আমাদের গ্রহের প্রধান সমস্যা জন শূন্যতা। আর এই পদ্ধতি এই সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না।
আমি বিজ্ঞের মত বললাম- সহজ সমাধান আছে । আপনারা নিশ্চয় জন্মনিয়ন্ত্রন করেন। আইন করে এই পদ্ধতি তুলে দিন। যত বাচ্চা কাচ্চা তত বোনাস। দেখবেন দড়দড় করে মানুষ বাড়তে শুরু করেছে। আমাদের পৃথিবীতে তো পা ফেলবার যো নাই। বলেই মনে হল ভুল করে ফেললাম নাকি! যদি পৃথিবী থেকে মানুষ ধরে নিয়ে যেতে চায়!
লোকটি একটু হেসে বলল- তুমি ভুল বুঝেছ। আমাদের ওখানে জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি নাই। আমাদের প্ল্যানেটের মানুষের আসলে যৌন ইচ্ছা ও ক্ষমতাই নাই।
আমি অবাক হয়ে বললাম- কেন? তাহলে আপনারা কিভাবে হলেন।
- তোমাকে একটু বুঝিয়ে বলি।এ অবস্থা একদিনে হয় নি। হাজার বছর লেগেছে।
- কি ভাবে?
- পৃথিবীর কিছু কিছু যায়গার মানুষ মেয়ে পুরুষেরা প্রায় উলংগ থাকত তাদের যৌন আকাঙ্ক্ষা ইচ্ছা মত মিটাবার জন্য। যেহেতু নারী এবং পুরুষের শরীরে প্রকৃতি গত ভাবে যৌন অনুভুতি থাকে তাই নারী ও পুরুষ উভয় উলংগ থাকলে একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং অবাধ যৌনাচার শুরু করে দেয়। এই অতি অপব্যাবহারের জন্য ধিরে ধিরে মানুষের যৌন ইচ্ছা কমতে থাকে। তাদের পরবর্তী প্রজন্ম কম যৌন অনুভুতি নিয়েই জন্ম গ্রহণ করে। তারাও ঐ ভাবেই যৌনাচার করতে থাকে। এই ভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যৌন ইচ্ছা ও ক্ষমতা কমতে কমতে আজ এমন অবস্থায় দাড়িয়েছে যে কেউই আর যৌন কর্ম করতে চায় না। মানুষের জন্মহার কমতে কমতে গত একশত বছর থেকে কোন মানুষ ই জন্মায় নি। তোমাদের চেয়ে আমাদের গড় আয়ু বেশি তাই এখনো আমরা বেঁচে আছি।
- আপনারা মানুষ কে সচেতন করেন নি?
- প্রথমতঃ এই অবস্থা যে হবে তা কেউ ধারণা করে নি। আমাদের ইতিহাস বলে কিছু কিছু যায়গায় বিধিনিষেধ ছিল। সে সব যায়গায় একটু অন্য আবস্থা।
- গিজ্ঞেস করলাম কেমন?
- কিছু দেশে মানুষ একেবারে উলঙ্গ থাকত না। আর যথেচ্ছ যৌনাচার ও করতে পারতো না। কিন্তু নারী স্বাধীনতার নামে মহিলারা অর্ধ উলঙ্গ হয়ে থাকতে পছন্দ করত। পুরুষেরা মেয়েদের যৌন অঙ্গ গুলো দেখে প্রথম প্রথম স্বাভাবিক ভাবেই উত্তেজিত হয়ে যেত। কিন্তু ধর্মীয় ও সামাজিক বাধানিষেধের জন্য তাদের ইচ্ছা চরিতার্থ করতে পারত না । ইচ্ছা দমন করতে করতে এক সময় তারা অভ্যস্থ হয়ে পড়ে। আস্তে আস্তে তাদের যৌন ইন্দ্রিয় ও অঙ্গ গুলো অকেজো হয়ে পড়ে। এই ভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম কমতে কমতে যৌন কর্মক্ষম মানুষ শুন্যে এসে দাঁড়ায়।
- অনেক ক্ষণ কথা বলে লোকটি চুপ করে থাকল।
- আমি ও অনেক ক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম- আমাকে কেন এনেছেন?
- তোমাদের শরীরে এখনো অনেক যৌন অনুভুতি আছে। প্রেম আছে ভালবাসা আছে। যা আমাদের শরীরে নাই। তাই আমি তোমার স্পারম চাই। মনে মনে বললাম-যা ভেবেছি তাই! বললাম
- শুধু স্পারম হলেই কি হবে? ডিম্বাণু কোথায় পাবেন?
- চিন্তা করনা, গত এক বছর থেকে আমাদের ডিম্বাণু সংগ্রহের কাজ চলছে। বেছে বেছে অনুভুতি প্রবন মেয়েদের কাছ থেকে আমরা এগুলো সংগ্রহ করি। তোমার স্ত্রী কাছ থেকেও কয়েক দিন আগে ডিম্বানু সংগ্রহ করে রেখেছি।
- আমি আতঙ্কে দাড়িয়ে পড়লাম।–আমার স্ত্রি,মানে রেনু !
- না,না সে কিছু জানেও না ।তোমাদের মন মানসিকতা রীতি নীতি আমরা জানি। তার ঘুমের মধ্যে বিশেষ পদ্ধতিতে ডিম্বাণু বের করে নিয়েছি। কোন রকম স্পর্শ ছাড়াই ।
- আমি চুপ করে মাথা নিচু করে বসে থাকলাম। মাথা তুলতেই লোকটি বলল- বেশী না মাত্র এক বার দিলেই হবে।তোমার মত আরো কয়েক জন কে আমরা এনেছিলাম। এখন থেকেই কয়েক লক্ষ নারী পুরুষ পেয়ে যাব আমরা। তারপর প্রাকৃতিক ভাবেই মানুষ বৃদ্ধি করা হবে। একটু পরে আবার বলল-
- তোমাকে আবার আমার দরকার হবে।অবশ্য সেটা অন্য কারনে। জিজ্ঞেস করলাম- আবার কি কারন ?
- সেটা নাহয় তখনই বলব। এখন যাও স্পারম টা দিয়ে দাও। জবেহ করার আগে পশু যেমন অসহায় ভাবে এদিক ওদিক চায়,আমিও অসহায় ভাবে এদিক ওদিক দেখতে লাগলাম।
- হঠাত আমার কানে হাজার হাজার বাচ্চার কান্না ভেসে আসলো। আমি বাচ্চার কান্না সহ্য করতে পারিনা। কানে হাত দিয়ে ওদের বললাম থামান, বাচ্চা গুলোকে থামান। দেখুন কি হয়েছে?
-
কান্নার শব্দ ধিরে ধিরে আমার কাছে আসছে বলে মনে হচ্ছে। সমস্ত গবেষণাগার টা কাঁপতে শুরু করেছে। কান্নাটা আরও কাছে আসছে। আমার চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে গেল।নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। আমি ধুসমুস করে উঠে বসলাম।
আমার মেয়ে টা অ্যাঁ অ্যাঁ করে কাদছে। প্রস্রাব করেছে বোধ হয়। আমি ঘেমে গেছি। বৃষ্টি থেমে গেছে। খোলা জানালার দিয়ে ঠাণ্ডা বাতাস শির শির করে গায়ে এসে লাগলো। রেনু ঘুমাচ্ছে, ঘুমাক। সারা দিন বেচারির অনেক খাটুনি যায়। কাঁথাটা বদলাবার চেষ্টা করতেই রেনুর ঘুম ভেঙ্গে গেল।
বলল- কি হয়েছে? প্রসাব করেছে, আমাকে ডাকনি কেন? উঠে বসলো সে।
বল্লাম-তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই।
উঁহ্! আগে যেন কখনো ঘুম থেকে ডেকে তোলেনি! কত দিন আমাকে রাতে ডেকে তুলে ঘুমাতেই দাওনি। এখন সাধু সেজেছ ! একটু থেমে অভিমানের সুরে বলল- তুমি কেমন যেন বদলে যাচ্ছ।
না গো না , বদলাই নি। ঘুমিয়ে গেছিলাম তাই। বাচ্চাকে ঘুম পাড়াও।
আমি শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম, তাহলে এতক্ষণ কিশোর দের সাইন্সফিকশনে ছিলাম !
ঠিক তখনই খোলা জানালার সামনে থেকে একটি ছায়া সরে গেল। বাইরে পায়ের শব্দ আস্তে আস্তে দূরে মিলিয়ে গেল।