একবার এক বৃক্ষ ভীষণ গভীর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল খুব গোপনে।
সে ঠিক করল নিজের ডাল, পাতা শেকড় সব গুনে রাখবে। তাদের আলাদা আলাদা নাম দেবে। যেন প্রতিটা পাতা, প্রতিটা শা্খা প্রশাখার জন্য সে শোক করতে পারে। যেন তাদের জন্য নাম ধরে আলাদা আলাদা বিলাপ করতে পারে। তো বর্ষার এক ভোরে শুরু করল কাজ। পশ্চিম কোণার সবচেয়ে কচি পাতাটা দিয়ে শুরু হল।
কিন্তু একটা করে পাতার নাম দেয় আর অন্য কয়েকটা করে ঝরে পড়ে নামহীন। বসন্ত চারিদিকে। বৃক্ষ খানিক পর পর যখনই মাটির দিকে চায়, বুক ভেঙে হাজার বিলাপ একসাথে ওঠে। এত বড় বিষাদ ঢেউ সহ্য করা বড় কঠিন, দারুণ দুর্বিসহ!
আরও দ্রুত নাম দিতে থাকে। থেকে থেকে কী দুর্বাসা বাতাস আসে! শত সহস্র পাতা এক নিমিষে খসে পড়ে। বৃক্ষ ক্লান্ত হয়ে যায়। অসহায় অবুঝ চোখে আকাশের পানে চায়। ধীরে ধীরে নীল আকাশ ঘন হয়ে কালো হয়। মেঘ ভাঙে এক সময়। প্রচণ্ড ঝ’রে পড়ে অজস্র জলের ধারা। বৃক্ষ আকাশকে প্রশ্ন করে উপায় জানতে চায়।
–‘এত অজস্র শোক কি একসাথে, একবুকে সহ্য করা যায়?’
আকাশ হয়তো উত্তর দেয়। হয়তো দেয় না। তবু এক বর্ষা বিকেলে বৃক্ষ আরেকটা গভীর সিদ্ধান্ত নেয়। বৃক্ষ ঠিক করে সে ভুলে যাবে যে তার পাতা, ডাল, শেকড়, ফল- এসব কোনকিছু আছে। ভাববে পায়ের কাছে যা ঝরে পড়ে আছে তা অন্য কোন গাছের।
সেই বৃক্ষ এক কৃষ্ণ কাজল রাতে চিরতরে তার সমস্ত জীবিত সন্তানকে ভুলে যায়। মৃত যত পড়ে আছে কাছে সমস্তকে ভাবতে থাকে অন্য কারও।
আমাদের এই দেশও এক গভীর সিদ্ধান্ত নিযে ফেলে একদিন, খুব গোপনে।
এতো অজস্র সন্তান তার মরে যায়, গলে পচে ডুবে যায়, ভেসে যায়।এতো শোক সে সহ্য করবে কী করে?
আমাদের দেশ, আমাদের বিষাদ জনক।
এই দেশ, আমাদের বিষণ্ণ মাতা।
এক বর্ষা বিকেলে এই দেশ সিদ্ধান্ত নেয় সে ভুলে যাবে তার বুকে, পিঠে কোনদিন কোন সন্তান ছিল ।
ভুলে যাবে কখনও কোন মানুষ এই দেশে বাস করেছে।
যারা জীবিত তারা আদতে জন্মই নেয়নি। যারা মৃত তারা কোনদিন বেঁচে ছিল না।