বধূর বেশে ঝুমু বসে আছে শ্বশুর বাড়ীতে। আজ থেকে এটাই তার ঘর, এটাই তার ঠিকানা। অনেক মান অভিমান-নিরাশা-হতাশার পরে যে সেই মানুষটিই জীবন সঙ্গী হবে এমনটি কল্পনায় ভাবলেও বাস্তবে সত্যি হবে তা ভাবেনি ঝুমু। একসময় ভালবাসায় জেদের চর পড়ে গিয়েছিলো। সেটি এখনো কাটেনি। বিয়েতে রাজী হয়েছে তবে ঠিক করেছে শাস্তি রাফিকে সে দেবে. রাফি তার সাথে যা করেছে এর চরম শাস্তি রাফিকে পেতেই হবে, নয়তো অন্যায় হয়ে যাবে।
সকাল থেকে ফর্মালিটির চাপে আর সন্ধ্যা থেকে বসে থেকে থেকে থেকে বিরক্ত হয়ে গেছে ঝুমু। মনে হচ্ছে শরীরের ওজন দশ কেজী বেড়ে গেছে। পেটের ভেতর ক্ষিদেয় তুর্কি নাচন শুরু হয়ে গেছে। ভারী গহনা আর শাড়ী খুব অস্বস্তি দিচ্ছে ওকে। বার বার মনে হচ্ছে একটা গোসল সেরে ঘুম দিতে পারলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এই মূহুর্তে যা সব চেয়ে বেশী দরকারী তা হলো খাবার। যত যাই ঘটে যাক ক্ষিদেটা সহ্য করে ঝুমুর পক্ষে খুব কষ্টকর। এক বার ভাবছে ধুর! শাড়ী-গয়না খুলে ফেলি। আবার ভাবছে নাহ! রাফি বেচারা এই সাজে তাকে তো এই একদিনই দেখবে। শাস্তি যাই দেয়া হোকনা কেন অন্তত এই ব্যাপারটি থেকে তাকে বন্ঞ্চিত করা ঠিক হবে না। ভাবতে ভাবতেই দেখে ঘরের দরজা একটু ফাঁক হলো। চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে রাফি ঢুকছে। ওকে দেখে মেজাজটা আবার গরম হয়ে গেলো ঝুমু'র। রাফি বেশ ফুরফুরে মুডে আসছিলো কিন্তু বিছানার কাছে আসতেই ঝুমু বললো
~~আমি খুব টায়ার্ড, গোসল করে ঘুম দেয়া খুব দরকার তার আগে যদি পারেন একটু খাবার জোগার করে দেন, একটু পর নাড়ীভুড়ী হজম হয়ে যাবে।
==এত ক্ষিদে পেয়েছে আগে বলেননি কেন? (ঝুমু-রাফি দুজন দুজনকে আপনি করে বলে। তবে রোমান্টিক ও সিরিয়াস কথা বলার সময় রাফি "তুমি" করে বলে)
~~ আগে কাকে বলবো শুনি! আপনারতো টিকিটিরও দেখা পেলাম না। আর অন্যদের বুঝি বলবো আমার ক্ষিদে পেয়েছে। নতুন বউ বলছে আমার ক্ষিদে পেয়েছে খাবার দিন! ভালইতো!
=ঠিকাছে দেখছি।
~~শুনুন, মিষ্টি কিছু আনবেন না। সাদা ভাত তো মনে হয় নেই। পেলে আনবেন আর তা না হলে পোলাও-ই চলবে।
রাফি চলে গেলে দ্রুত শাড়ী-গয়নার জন্জাল খুলে কাপড় বদলে ফেললো ঝুমু। ট্রলিটা খুললো কাপড়ের জন্যে। খুলে দেখে উপরেই দু সেট সালোয়ার কামিজ। ঝুমু বুঝতে পারে এটা রাফির কাজ। কারন সে শাড়ী পড়া পছন্দ করে না। মা-বোনদের চাপে শাড়ীর বিরুদ্ধে কিছু বলতে না পারলেও সালোয়ার কামিজ কিনেছে। এসব ভাবছে আর কাপড় দেখছে এর মাঝে চোখ আটকে গেলো প্রিন্টের একটি শাড়ীর উপর। বিয়েতে কাউকে প্রিন্টের শাড়ী দেয় বলে ঝুমু এর আগে শুনেনি বা দেখেনি। অ্যাশ কালারের সাথে গোলাপী। গোলাপীর পরিমানটা কম। শাড়ীটা যদিও নতুন বউয়ের সাথে একদমই যায়না তবে ঝুমুর খুব পছন্দ হয়ে যায়।
ঝুমু বুঝতে পারে শাড়ীর এই ব্যাপারটা রাফি তাকে রাগানোর জন্যে করেছে। কিন্তু রাফি মশাই তুমিতো আমাকে রাগাতে পারোই নি বরং আমি তোমাকে জব্দ করবো এই শাড়ী দিয়ে। তোমার কি হাল করি কাল সকালে টের পাবে তুমি। ভাবতে ভাবতে কাপড় হাতে ঝুমু বাথরুমে ঢুকে যায়। মনের মতন একটা গোসল সেরে চুল মুছতে মুছতে বের হয়ে আসে।
রাফি তখন খাবার টেবিলে রেখে খাটে বসে ছিলো, চোখ পড়ে যায় ঝুমুর দিকে। যে শাড়ী দিয়ে রাগাতে চেয়েছিলো, যেটাতে পঁচা দেখানোর কথা ঝুমুকে সে শাড়ীতেই অপূর্ব লাগছে। রাফির চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। সুন্দরী একটা বউয়ের খুব শখ ছিলো রাফির। কিন্তু শ্যাম বর্ণের মেয়েটির এই রুপে এতটাই মাতাল হয়ে গেলো যে সে শখ আর রইলনা।
ঝুমু বুঝতে পারলো রাফির অবস্থা। কিছু না বলে খাবার প্লেট নিয়ে বসলো।
যা ভেবেছিলো তাই। সাদা ভাত পাওয়া যায়নি অথবা নতুন বউকে প্রথম দিনই দিতে চায়নি। যাক চলবে এতেই। রোস্ট খুব প্রিয় ঝুমু'র। একটা রোস্ট ভেংগে পোলাও মুখে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো
~~খেয়েছেন?
=হ্যা
~~বউকে রেখেই!
= আমি কিভাবে বুঝবো যে তুমি এতক্ষন খাও নি। আর বন্ধুরা খুব করে ধরলো তাই.....
~~বুঝেছি বুঝেছি। খাবেন নাকি এখন?
=তুমি খাইয়ে দিলে (মিচকা এক হাসি দিয়ে বললো)
~~ জ্বী না মশাই, তা হচ্ছে না। হাত দিয়ে খান নয়তো বসে থাকেন।
খাওয়া শেষে তোয়েলেতে হাত মুছে বিছানায় বসলো ভেজা চুল আঁচড়ানোর জন্যে। রাফি অনেক্ষন যাবত ধৈর্য্য ধরলেও তার বাঁধ আর মানছে না কিন্তু ঝুমু'র কথাবার্তায় বুঝতে পেরেছে মেয়েটা রেগে আছে এবং কাপালে যে কি আছে, মেয়েটা ঠিক কিভাবে এর বিষ্ফোড়ন ঘটাবে ঠিক বুঝতে পারছে না। প্রমাদ গুনছে বসে বসে। চুল আঁচড়ানো হলে বেশ রোমান্টিক ভাব নিয়ে যাচ্ছিলো ঝুমু'র কাছে কিন্তু ঝুমু এক ঝটকায় সরে গিয়ে মুখোমুখি বসলো।
~~শাড়ীটা কার পছন্দে কেনা?
=(বুঝেও না বোঝার ভান করে রাফি) কোন শাড়ীটা?
~~ এই মুহুর্তে আমার পরনে যেটা
= আসলে... আসলে.....
~~(রাফির মুখের কথা কেড়ে নিয়ে) আসলে তোমাকে জব্দ করতে চেয়েছিলাম। এইতো? ভুল করেছেন রাফি সাহেব। নিজের পাতা ফাঁদে নিজেই পড়বেন। কাল সকালে বোঝাবো মজা। ওয়েট অ্যান্ড সি।
= তুত...তুত...তুমি কিক্করবে?
~~বেশী কিছুনা। কাল এটাই পড়ে থাকবো। আপনার আত্নীয়-স্বজনরা আসবে তাদের সামনে এটা পড়েই যাবো। সবাই যখন জিজ্ঞেস করবে বলবো এই বাড়ী থেকেই দেয়া হয়েছে। ব্যাস আর কিছু করা লাগবেনা আমার। যা করার তারাই করবেন।
= শো...শোনো যা করার আমার সাথে করো....সবার সামনে মান ইজ্জত ডুবিয়োনা।
~~ সে দেখা যাবে। খুব ঘুম পেয়েছে, এখন ঘুমাবো।
=এখনি! আমি ভাবলাম একটু গল্প-টল্প করবো দুজনে।
~~না না সে হবে না। গল্প করার জন্যে বহুত সময় আছে। আমি এখন ঘুমাবো।
রাফির বিপরীত দিকে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে ঝুমু। (মনে মনে হাসে আর বলে রাফি মিয়া তোমার শাস্তি কেবল শুরু, চেননা আমাকে)
লাইট বন্ধ করে রাফি পাশে এসে শুয়ে পড়ে। ঝুমু আবার বলে ওঠে
~~ শোনেন, সকাল সকাল আমাকে ডেকে দেবেন। বুঝেছেন? নয়তো নতুন বউ সকালে উঠতে না পারলে সবাই আমাকেতো খারাপ বলবেই সাথে আপনাকেও বলবে।
=হুমম
~~ মনে থাকে যেনো।
গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো ঝুমু। বুঝতেও পারলোনা অর্ধেক রাত যে পাশের রুম থেকে আসা আবছা আলোয় তার মুখের দিকে তাকিয়েই কাটিয়েছে রাফি।