somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশু শিক্ষার বিভিন্ন পদ্ধতি

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যদিও শিক্ষাকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গীতে সম্পূর্ণরুপে ব্যখ্যা করা সম্ভব নয় তথাপি সাধারনভাবে শিক্ষা হচ্ছে, প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতার ফলে আচরনের রুপান্তর। শিক্ষা শুধুমাত্র দক্ষতা অর্জনে সীমাবদ্ধ নয়; অনেক মনোভাব, রীতি ও মানসিকতাও শিক্ষার অন্তর্ভূক্ত। শিশুর জীবনে বেঁচে থাকার জন্যে, মানসিক ও সামাজিক বিকাশের জন্য শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ

প্রায় সব মনোবিজ্ঞানীই স্বীকার করেন যে মানব জীবনের সহজাত সাধারন পত্যআগতি প্রতিক্রিয়া ব্যতীত সকল আচরনই শিক্ষা লব্ধ।

শিশু শিক্ষার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে:
বিংশ শতাব্দীতে শিশুর উপযুক্ত শিক্ষা পদ্ধতি নির্বাচনের হিড়িক পড়ে যায়। কিভাবে শিশুকে শিক্ষা দিলে অধিক ফলপ্রসূ হবে এ নিয়ে শিশুমনোবিদেরা বিভিন্ন গবেষনা চালান।
শিক্ষার ইতিহাসধরা পর্যালোচনা করলে আমরা যেমন শিক্ষা জগতে যুগান্তকারী মনীষীর ভাবধারার সাথে পরিচিত হতে পারি তেমনি তাদের শিক্ষানীতি, শিক্ষা প্রণালী সম্পর্কে অবগত হতে পারি।
শিশু শিক্ষায় সর্বপ্রথম যিনি শিশুকে অগ্রাধিকার দেন তিনি হচ্ছেন জী জ্যাকস্ রুশো(Jean Jacques Rousseau)। শিশুর স্বভাব, রুচি, শক্তি ও আগ্রহ অনুযায়ী শিশুকে শিক্ষাদানের কথা সর্বপ্রথম তিনি তার "এমিন" গ্রন্থে প্রকাশ করেন।

রুশোর পরে পেস্তালাৎসী(Pestalozzi) ইতিবাচক, গঠনমূলক, আদর্শভিত্তিক, হাতে-কলমে প্রতক্ষ জ্ঞানভিত্তিক এক শিক্ষা পদ্ধতি প্রচলন করেন। তার আবিষ্কৃত "table of units, table of fractions, alphabet of farm" ইত্যাদি তাঁর প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতিরই নির্দেশক।

শিশু শিক্ষায় ফ্রয়েবেলের অবদান অনেক। তিনি শিশুর স্বাধীন আগ্রহকে তার শিক্ষানীতিতে অন্তর্ভূক্ত করেন।তাঁর শিক্ষা পদ্ধতিতে খেলার স্থান খুব ঊঁচুতে। জার্মানীর ব্ল্যানকেনবার্গে ফ্রয়েবেল ১৮৩৭ সালে যে ছোট্ট শিশু বিদ্যালয়টি স্থাপন করেছিলেন পরবর্তীতে তিনি এটাকে "Kindergarten"
পুষ্পউদ্যান নামকরণ করেছিলেন। এখানে ৩-৭ বছরের শিশুদের স্বাধীন, স্নেহ-প্রীতিপূর্ণ পরিবেশে খেলাধুলার মধ্য দিয়ে সম্যক বিকাশ সম্ভব হয়---

ফ্রয়েবেল তার শিক্ষানীতিকে রূপদান করেন তার-ই প্রতিষ্ঠিত শিশুনিকেতনে। এখানে শিশুরা গল্পশোনে, গান গেয়ে, নেচে ও অঙ্গ-ভঙ্গী করে তাদের মনের আনন্দের সচ্ছল ও স্বাধীন প্রকাশ করত। এছাড়াও নানান ধরনের হাতের কাজ যেমন কাগজ কাটা, সেলাই করা, ছবি আঁকা ইত্যাদিতে শিশুরা সক্রিয়তা ও সৃজনশীলতাও পরিতৃপ্ত হত।
যদিও ফ্রয়েবেলের খেলা ও হাতের কাজের উপর জোর দেওয়াকে অনেক মনোবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদেরা সমালোচনা করেছেন তথাপি ফ্রয়েবেলের খেলার মনস্তাত্বিক মূল্য ( Psychological value) সমস্ত আধুনিক শিক্ষা-নীতিতে শ্রেষ্ঠ উপকরন বলে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

ফ্রয়েবেলের মত মন্তেসরী (Montessori) শিক্ষাজগতে লব্ধ-প্রতিষ্ঠিত আধুনিক শিক্ষাবিদ। তবে ফ্রয়েবেল তাঁর শিক্ষানীতিতে শিশুর সমস্ত শিক্ষাকে সমাজ জীবনের সাথে যুক্ত করেছেন, অন্যদিকে মন্তেসরী প্রত্যেক শিশুর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী গড়ে ওঠার উপর জোর দিয়েছেন।
তাঁরা দুজনেই শিক্ষা ও খেলার উপকরন আবিষ্কার করেছেন, কিন্তু এই উপকরনের ব্যবহার ও লক্ষ সম্পর্কে দুজনের দৃষ্টিভংগীর যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। মন্তেসরী ক্ষীন মেধা সম্পন্ন, বিকলাংগ শিশুদের জন্য বিশেষ পদ্ধতি ও উপকরন আবিষ্কার করেন যাকে didactic apparatus বলে। এগুলো ব্যবহারে শিশু বস্তুগত বৈশিষ্ট্যের ধরনা লাভ করতে পারবে এবং ভূল করলে নিজেরাই সংশোধন করতে পারবে। এ শিক্ষাকে "autoeducation" বলে।
তিনি ৩-৬ বছরের শিশুর শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে ইন্দিয়ের ব্যবহারকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত করেন। তার বিদ্যালয়ের শিশুরা নিজেরাই হাত-মুখ ধোবে, জামা পরবে, জুতোর ফিতে বাঁধবে, পরীক্ষা করবে, বোতাম লাগাবে ইত্যাদিতে শিশুরা স্বাবলম্বীহয়ে উঠবে।

এছাড়াও শিশু শিক্ষার পদ্ধতী সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞানীরা গবেষনা করেছেন। শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে চলছে গবেষণা, বিশেষ করে প্রাক-স্কুলগামী(৩-৫) শিশুদের উপযুক্তু শিক্ষা পদ্ধতী নিয়ে।
আরোও একটি প্রবণতআ লক্ষনীয় সেটি হল শিশুকে সজাম জীবনের সাথে যুক্ত করা, অর্থাৎ শিক্ষা হচ্ছে সুস্থ সমাজ জীবন গড়ার শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার
(তথ্যসুত্র
শিশু বর্ধন, বিকাশ, পরিচালনা ও পারিবারিক সম্পর্ক -শাহীন আহমেদ)
লেখাটিশিক্ষা ব্লগে প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪২
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপেক্ষা-২য় পর্ব

লিখেছেন শামীম মোহাম্মাদ মাসুদ, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪৪

বিগত পাঁচ-ছয় মাস যাবত ফকির আবদুল হাই সাহেবকে মাথা থেকে সরাতে পারছি না। আমি নিজে থেকেই বিড়বিড় করে ওনার সাথে কথা বলা শুরু করেছি। দিন রাত যখনই অবসরে থাকি ফকির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে সরকার কি পদক্ষেপ নিবে ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:২৭


আওয়ামী লীগের মিছিলের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ঢাকার ডেমরা-উত্তরা- বাড্ডা - মিরপুর সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ ঝটিকা মিছিল করছে। প্রায় তিনমাস ধরে রাস্তায় মিছিল নামানোর প্রস্তুতি ছিলো। মিছিলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবেনাকো তুমি- যেদেশে হাসির জন্যও প্রাণ দিতে হয়!

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৩৩

কয়েক দিন আগে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম হবু চন্দের আইন কবিতা নিয়ে, যেখানে কান্নার বিরুদ্ধে রাজা আইন জাড়ি করেছিলেন.....আজ লিখতে হচ্ছে- হাসির জন্য প্রাণ কেড়ে নেওয়ার ঘটনা নিয়ে। আমরা সবাই ইতোমধ্যেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

৭১ না দেখেও কেবল ইতিহাস পড়ে যদি আপনি ৫৩ বছর পরে এসেও পাকিস্তানকে ঘৃণা করতে পারেন। তাহলে নিজ চোখে ভারতের আগ্রাসন দেখেও চুপ কেন?

লিখেছেন তারেক সালমান জাবেদ, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৪:৩৭

প্রথমেই শুরু করতে চাই সীমান্ত হত্যা নিয়েঃ -
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী দ্বারা ২০০০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১,৫০০ সাধারণ ও বেসামরিক বাংলাদেশি হত্যা করা হয়েছে। ভারত সরকারের বাংলাদেশের সীমান্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চতুর্দিকে ওত পেতে আছে ফ্যাসিস্টের দোসর

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:৩৮

চতুর্দিকে ওত পেতে আছে ফ্যাসিস্টের দোসর

ছবি, অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

২০২৫ সালে বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। স্বৈরাচারী শাসনের পতন সত্ত্বেও ফ্যাসিবাদের ছায়া সমাজের প্রতিটি স্তরে লুকিয়ে রয়েছে। ফ্যাসিস্ট শক্তির সহযোগীরা—যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×