চ্যাম্পিয়ন্স লিগের স্বপ্নের ফাইনাল আজ শনিবার। উত্তেজনায় কাঁপছে ফুটবলবিশ্ব। প্রস্তুত গার্ডিওলা-ফার্গুসনের শিষ্যরা। প্রস্তুত ইংল্যান্ডের ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম, যেখান অনুষ্ঠিত বহু প্রতীক্ষিত সেই ম্যাচ। কে জিতবে এবারের শিরোপা, তা নিয়ে যেন জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই ফুটবলপ্রেমীদের। পাড়ায়, মহল্লায়, রাস্তার মোড়ে, চায়ের দোকানে পথচারীদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন মেসি-রুনি। স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা ও ইংলিশ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দুই মহা তারকাকে সমর্থন করে ফুটবলবিশ্ব এখন দুই ভাগে বিভক্ত। বিশ্ববাসীর দৃষ্টি এখন লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের দিকে।
লিওনেল মেসি না ওয়েইন রুনি, কার হাতে উঠবে স্বপ্নের ট্রফি? যদিও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের বিচারে আর্জেন্টাইন তারকা বার্সেলোনার স্ট্রাইকার মেসি সবাইকে ছাড়িয়ে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এই আসরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১১ গোলের মালিকও তিনি। ফাইনালে আর মাত্র একটি গোল করলেই তিনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ১২ গোল করা ডাচ তারকা নিস্টলরয়ের অনন্য রেকর্ডটি ছুঁয়ে ফেলবেন। তাছাড়া লা লিগাতেও (স্প্যানিশ প্রিমিয়ার লিগ) তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা (৩১টি)। তবে বর্তমান ফিফা ব্যালন ডিঅর বর্ষসেরা এই ফুটবলারের কাছে ব্যক্তিগত রেকর্ডের চেয়ে দলীয় অর্জন অনেক বড়। তাই কি না লা লিগার শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার পর কোচ গার্ডিওলা তাকে আর মাঠেই নামাননি। এই সুযোগে দুর্দান্ত খেলে তাকে টপকে লা লিগার সেরা গোলদাতা হয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এ নিয়ে কোনো আক্ষেপও নেই মেসির। তিনি বলেন 'আমি শুধু ব্যক্তিগত রেকর্ডের জন্য খেলি না। আমার কাছে দলের জয়ই আগে। দল শিরোপা না পেলে রেকর্ডের তেমন গুরুত্ব থাকে না।' এ মৌসুমে ৫৪ ম্যাচে ৫২টি গোল করেছেন এই আর্জেন্টাইন সুপারস্টার।
ওয়েইন রুনির জন্য মৌসুমটা মোটেই ভালো যায়নি। পায়ের গোঁড়ালির ইনজুরির কারণে মৌসুমের অধিকাংশ সময় তিনি কাটিয়েছেন মাঠের বাইরে। এ মৌসুমে রুনির মোট গোল সংখ্যা ১৫, যা ম্যানইউতে যোগ দেওয়ার পর এক মৌসুমে সর্বনিম্ন গোল তার। তবে রেড ডেভিলসদের জন্য সুখবর হচ্ছে রুনি এখন তার ফর্মে রয়েছেন। তিনি এমনই এক ফুটবলার যে কোনো প্রতিকূল পরিবেশকে পক্ষে নেওয়ার ক্ষমতার তার আছে। তাছাড়া এই মৌসুমে দল হিসেবে খুবই দুর্দান্ত স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ইতোমধ্যেই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা ঘরে তুলেছেন তারা। তাছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এবার অপরাজিত ম্যানইউ। গ্রুপপর্বে ছয় ম্যাচের মধ্যে চার জয় দুই ড্র। নকআউট পর্বের দুই লেগেই তারা ফ্রান্সের মার্সেইকে হারিয়েছে। শীর্ষ আটে পাত্তা পায়নি চেলসি। সেমিফাইনালে তো জার্মানির দল শালকে জিরো ফোরকে দুই লেগেই বিধ্বস্ত করেছে রুনিরা। দুই লেগ মিলে ৬-১ গোলে জিতে ফার্গির শিষ্যরা এখন স্বপ্নের ট্রফিটি পাওয়ার অপেক্ষায়।
বার্সেলোনা এই মৌসুমটা শুরু করেছিলেন উড়ন্তভাবে। ইতোমধ্যেই স্প্যানিশ লিগের ট্রফিটা নিজের করে নিয়েছে কাতালানরা। এখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের হারানো গৌরবটা ফিরে পেতে মরিয়া গার্ডিওলার শিষ্যরা। গত বছর তারা এটি হারিয়েছেন ইন্টারমিলানের কাছে। তবে লিগের শুরুতেই এবার কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন মেসিরা। কিন্তু গার্ডিওলার শিষ্যরা এক এক করে কাঁটা সরিয়ে দুর্গম পথকে অতিক্রম করে দুর্দান্ত সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। নকআউট পর্বে তো মেসিদের ভড়কেই দিয়েছিল আর্সেনাল। অ্যাওয়ে ম্যাচে হেরেও নিজেদের মাঠে বড় ব্যবধানে জয় পাওয়ার শীর্ষ আট নিশ্চিত করে ভিয়া-জাভি-ইনিয়েস্তারা। কোয়ার্টার ফাইনালে শাখতার খুব একটা ঝামেলা করতে পারেনি। তবে সেমিফাইনালে কাতালানদের অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে। সেই পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে বলেই কি না আজ বার্সেলোনার পক্ষে বাজি ধরার মানুষের অভাব নেই। তারপরও প্রতিপক্ষকে সমীহই করছেন বার্সেলোনা মূল ভরসা মেসি। তার মতে, 'ম্যানচেস্টার অনেক ভালো টিম। রুনি, হার্নান্দেজের মতো ফুটবলার আছে ওদের দলে। আছেন ভয়ঙ্কর খেলোয়াড় ভ্যালেন্সিয়াও। তাছাড়া দলের মধ্যে ওদের কম্বিনেশনও ভালো। পাসিংয়ের ওরা দুর্দান্ত। তাই ওদের হারানোটা সহজ হবে না। জিততে হলে সেরা পারফম্যান্সই দেখাতে হবে।'
শনিবারের ম্যাচটিকে ঘিরে প্রতিশোধের গন্ধও ছড়িয়ে পড়ছে ওয়েম্বলির বাতাসে। দুই বছর আগে এই বার্সেলোনার কাছেই ফাইনালে ২-০ গোলে হেরেছিল রুনিরা। সে ম্যাচেরও ঘাতক সেই আর্জেন্টাইন জাদুকর লিওনেল মেসি। তিনি নিজে করেছিলেন একটি গোল, অন্যটি ক্যামেরুন তারকা স্যামুয়েল ইতোর। তবে ২০০৯ সালে রোমের সেই ঘটনা পুনরাবৃত্তি যাতে আর না ঘটে সে জন্য সতর্ক ম্যানইউ। সেই সুখস্মৃতি মনে করে স্রোতে গা ভাসাতে চান মেসিও। তিনি বলেন, 'রোমে কি হয়েছিল তা নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবছি না। এই ম্যাচটা আলাদা। আমাদের খেলতে হবে শক্তিশালী একটি দলের বিরুদ্ধে।' বৃহস্পতিবার লন্ডনে ফুরফুরে মেজাজেই প্র্যাকটিস করেছেন গার্ডিওলার শিষ্যরা। অনুশীলন করেছেন রুনিরাও। কিন্তু ঘরের মাঠ বলে ম্যানইউই কিছুটা এগিয়ে থাকবে বলে অনেকের ধারণা। তাছাড়া অক্টোপাস ইকারও নির্দেশ করেছেন ম্যানইউকেই। অক্টোপাসের নির্দেশনা নিয়ে চিন্তিত নন মেসিরা।
বার্সেলোনা-ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর আগে ১০ বার মুখোমুখি হয়েছিল। উভয় দলই তিনটি করে জয় পেয়েছে। ড্র হয়েছে চার ম্যাচে। তাই আজকের ম্যাচটিও যে জমজমাট লড়াই হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সূএ:BanglaTimes24.Com