প্রথমেই ক্ষমা চাচ্ছি কারোর সাথে যদি মতবেদ ঘটে তার জন্যে। মতবেদ ঘটাই স্বাভাবিক, তা জেনেই সম্পুর্ন নিজস্ব চিন্তা ধারা থেকেই নারী পুরুষ নিয়ে কিছু বিতর্কিত কথাবার্তা বলছি।
নারী পুরুষ সম্পুর্ন, একবারেই দুটি আলাদা স্বত্তা, ইচ্ছে করলেই আমরা এই দুটো স্বত্তাকে এক করে ফেলতে পারি না বা তা কখনও সম্ভবও নয়। ঘরে বাহিরে, হাটে, মাঠে ঘাটে এমনকি এই ব্লগেও নিত্যদিনই চলে এই বিষয়টি নিয়ে চুল চেরা বিশ্লেষন। ব্লগার ফারাহ তন্বীর ব্লগে Click This Link রাগ ইমন এর কিছু কথা যেমন প্রাসঙ্গিক হয়েছে তেমনি কিছু আমার কাছে একবারেই অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। তার বা তাদের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাবোধ রেখেই বলছি - আপনাদের সবগুলো কথাই খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। এরকম কথা বলা যায় খুব সহজে কিন্তু পালন করতে গেলেই ঘটে বিপত্তি বা সব পালন করা সম্ভবও নয়।
ছোট্ট একটা উদাহরন টানছি - আমার ভাইয়ের ছেলে এবং আমার নিজের মেয়ে প্রায় সমবয়সী। আমার মেয়ে ৬ দিনের বড়। বয়স ৫+ । এই কয়েকদিন আগের কথা। দুইজন একসাথে খেলা করছে, হঠাৎ কোথা থেকে একটা তেলাপোকা এসে হাজির। আমার মেয়ে ওয়াও...ওয়াও করে চিল্লিয়ে ঘর মাথায় তুল্ল কিন্তু বয়সে তার থেকে ছোট আমার ভাইয়ের ছেলে ঠিকই হাত দিয়ে তেলাপোকাকে ধরে ওকে আর ভয় দেখাচ্ছে..........। এখানে একটা জিনিস খেয়াল করুন, চিল্লাতে ওদের কেউ শিখায়ওনি আবার হাত দিয়ে ধরতেও বলেনি। সব কিছুই করেছে ওদের নিজস্ব মননে, স্ব স্ব বৈশিষ্ট্য থেকেই। আমার মেয়ে যখন হাটি হাটি পা পা করে তখনই ওকে একটা সাইকেল কিনে দিয়েছিলাম, যে কয়দিন তাকে জোড় করে বা ইচ্ছে করে আমরা সাইকেলে চড়িয়েছি, সেকদিনই সে সাইকেল চালিয়েছে কিন্তু হাড়ি পাতিল দিয়ে খেলার জন্যে ওকে বলতেও হয়নি কখনও। সেই ছোট বেলায়ই যখন ও কিছুই বুঝেনা তখনও দেখেছি মার্কেটে গেলে পুতুলের দিকেই ওর জোক বেশী কিন্তু কেন? খুব কাছ থেকে দেখেছি বুঝারও চেষ্টা করেছি, পারিনি...... আমার মেয়েকে ছেলেদের পোশাকে খুব ভাল মানায়, ছোট বেলায় অধিকাংশই এগুলো পড়িয়েছি কিন্তু এখনই দেখি থ্রি পিসের প্রতিই ওর আগ্রহটা বেশী, কেন? আমার বুঝে আসে না, মাথায়ও ঢুকে না।
এই সব উদাহরন এর অবতারনা করলাম এই জন্যে যে, কিছু কিছু জিনিস জেনেটিক বা প্রাকৃতিক ভাবেই প্রতিটি মানুষ তথা ছেলে মেয়ে জন্ম সুত্রেই পেয়ে থাকে। এই সব ব্যাপার থেকে আমরা ইচ্ছে করলেই কেউ মুক্ত হতে পারব না বা সম্ভবও নয়। বড় হওয়ার সাথে সাথে সেই মৌলিক পার্থক্য গুলো আর প্রখর ও তীব্রতরও হতে থাকে। একজন মেয়ে ইচ্ছে করলেই তার স্বকীয়তা ঝেরে ফেলে পুরুষের সমকক্ষ হতে পারবে না বা সম্ভবও নয়। সে যত রকম জিমই করুক না কেন, পুরুষের মাসল এর মত কখনই নারীর মাসল হবে না বা সম্ভবও না। দেশ বিদেশের প্রতিটি নারী নিজের রূপ লাবন্য বা রূপচর্চা নিয়ে যেভাবে সচেতন থাকে, দু একটি ব্যতিক্রম ছাড়া কোন পুরুষ কে কি এভাবে কেউ করতে দেখেছেন? কারন কিছু কিছু স্পেসিফিক বৈশিষ্ট্য জেনেটিক ভাবেই মানুষের রক্তে, শরীরে, চিন্তায় ও মননে এমনভাবে ঢুকে যায় যে, ইচ্ছে করলেই তা কখনই পরিত্যাগ করা যায় না। বিধাতা বা প্রকৃতিই বলুন নারী পুরুষকে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য দিয়েই তৈরী করেছেন। আমি ইচ্ছে করলেই আমার স্ত্রী কে রিলিফ দেওয়ার জন্যে বা সম অধিকার প্রতিষ্টার জন্যে আমাদের দ্বিতীয় সন্তান গর্ভে ধারন করতে পারব না, প্রকৃতি আমাকে সেই অধিকার বা পারমিট দেয়নি।
এই পৃথিবীতে আমি আমার মাকে এবং মেয়েকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসি। ভালবাসার এই বিশেষ ক্ষেত্রটিতে আমরা প্রায় সবাই একমত। মা আমাকে বা আমাদের সবাইকে শরীরে ধারন করে জাগতিক সর্বশ্রেষ্ট কষ্টের বিনিময়ে পৃথিবীর আলো দেখেয়িছেন। এই বিশেষ জায়গাটিতে মানুষ তথা নারী পুরুষ আমরা সবাই মা তথা নারী জাতির কাছে বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ।
আবারও সেই মা তথা নারী জাতির প্রতি যথাযত বিশেষ সম্মান রেখেই বলছি। আমরা যারা সৃষ্টিকর্তাকে মানি বা বিশ্বাস করি অথবা প্রকৃতির অবদান বলে বিশ্বাস করি, তারা কম বেশী প্রায় সবাই একটা জিনিস জানি, সৃষ্টিকর্তা তার প্রতিটি সৃষ্টিকে আলাদা আলাদা স্পেসিফিক বৈশিষ্ট্য দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির সেই গুঢ় রহস্যের কারনে বা স্পেসিফিক বৈশিষ্ট্য আরোপের কারনেই একজন নারীকে একজন নারী হতে একজন মা রূপে আবির্ভাব হতে পেরেছেন, তা নয় কি? এখন সম অধিকার বা বিশেষ কোন কারনে নারী জাতি যদি সেই মা হতেই অপারগতা প্রকাশ করে বসেন তাহলে পৃথিবীর ইকো সিষ্টেমের সাথে সাথে নিজেদেরও অস্তিত্বের উপড়ও আঘাত আসবে, তা নয় কি?
নারীকে তার সমস্ত নারী সুলভ স্পেসিফিক বৈশিষ্ট্যকে মেনে নিয়েই পুরুষের পাশাপাশি কৃতিত্ব রাখতে হবে। অরুন্ধতী রায় সন্তান ধারণ করতে বা লালন করতে আগ্রহী নন বলে যেভাবে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন সেই একইভাবে যদি সমগ্র নারী জাতিই এই বিশেষ স্পেসিফিক মহান দায়িত্বটিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাহলে বিশাল এই মানব সম্প্রদায়ের অস্তিত্বের উপড় সর্বোপরি পৃথিবীর ইকো সিষ্টেমেই এর বিরূপ প্রভাব ফেলবে, তা নয় কি? আর তিনি যদি বেশী বেশী অবদানের কথা চিন্তা করে এই বিশেষ কাজটিকে খাটো করে দেখেন বা পরিহার করার চেষ্টা করেন বা নিজের স্পেসিফিক দায়িত্ব এড়িয়ে চলেন তাহলে পক্ষান্তরে তিনি তার সেই মাকেই অস্বিকার করে ফেলবেন বা নিজের অস্তিত্বকে পক্ষান্তরে নারী জাতিকেই অস্বিকার করে বসবেন, তা নয় কি? নিজের ক্যারিয়ার, নিজের জীবনের উন্নতি, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে প্রাধান্য দিয়ে স্পেসিফিক কাজ থেকে বিরত থাকার মধ্যে সত্যিই কি কোন সুখ আছে? বা থাকতে পারে? অথবা এর থেকে পরিত্রান পাওয়ার কোন ধরনের সুযোগ আদো আছে কি?
কিছু কিছু জিনিস আছে, সবাইকে এক কাতারে ফেলা যায় না। একজন নারীর জন্যে অবশ্যই মাতৃত্বকালীন ছুটি অতীব জরুরী। যদিও আমাদের দেশে যে সিষ্টেম বর্তমানে চালু রয়েছে তা কোন ভাবে সঠিক নয় এবং তা যথেষ্ট পর্যাপ্তও নয়। এর জন্যে সামনে পিছনে তিন মাস করে নুন্যতম ছয় মাস ছুটির প্রয়োজন (সম্ভবত তা কার্যকরের পথে), যা কোন পুরুষের জন্যে একবারেই প্রযোজ্য নয় বা ইচ্ছে করলেই কোন পুরুষ সেই ছুটি ভোগ করতে পারবেওনা। এই বিশেষ ক্ষেত্রটিতে কি একজন নারীকে শুধুই একজন মানূষ হিসাবে দেখলে বা সম অধিকারের ভিত্তিতে পুরুষের কাতারে দাড় করলে কি চলবে? বা আদো তা ঠিক হবে? নারীকে শুধুমাত্র একজন মানুষ হিসাবে বিবেচনায় আনলে বা পুরুষের সাথে সম অধিকার প্রতিষ্টিত করে দিলে পক্ষান্তরে নারীকে পদে পদে বিপত্তির সম্মুখিন হতে হবে। আরো কিছু কিছু জঠিল শরীরবৃত্তীয় জিনিসই একজন নারীকে পুরুষ হতে ভিন্ন করে ভিন্ন কাতারে নিয়ে দাড় করিয়েছে। সৃষ্টিকর্তা বা প্রর্কতিই একজন নারীকে শুধু মাত্র একজন মানুষ হিসাবে তৈরী না করে কখনও একজন মা, কখনও বোন, কখনও মেয়ে বা কখনও স্ত্রী হিসাবে দেখিয়েছি। এখানে যার যার সম্মান বা প্রাপ্য সবই তার আলাদা আলাদা স্বত্তার ভিত্তিতে হবে বা হওয়াও উচিত। কেউ চাইলেই নারীকে শুধু একজন মানূষ হিসাবে দেখলে তা কখনই ঠিক হবে না বা দেখা মনে হয় উচিতও নয়।
এর সব গুলোই পৃথিবীর যে কোন কালচারের মানুষের কালচার ভিত্তিক ভাবে প্রযোয্য। কোন মেয়ে ইচ্ছে করলেই ম্যারডোনা বা ব্যাকহাম এর মত স্ট্যামিনা নিয়ে তাদের সাথে সমকক্ষ হয়ে খেলতে পারবে না, সুযোগ দিলেও সম্ভব না। পুরুষ হয়ে রেসলার চায়নার সাথে আমি হয়ত লড়াই করে পারব না কিন্তু যে কোন পুরুষ রেসলারের কাছে সে একবারে নস্যি। এখন চায়নাকে যদি বিগশও এর সাথে রেসলিং এ নামিয়ে দেওয়া হয় এবং সেরকমটাই যদি সিষ্টেম করে দেওয়া হয়, তখন নারী সমাজই কি এর জন্যে প্রতিবাদ করবে না? সম অধিকারের কথা চিন্তা করে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে যদি নারীদের কে ভোল্টদের সহযোগী করে দেওয়া হয় তা কি কখনও মানানসই হবে বা নারী সমাজ তা আদো কখনও মেনে নিবে?
পৃথিবীর সৃস্টি লগ্ন থেকেই মানুষ মানুষের প্রতি বৈষম্য, নারীর প্রতি পুরুষের বৈষম্য, পুরুষ কতৃক নারী নির্যাতন, এর সব গুলোই চলে আসছে, অহরহ চলছে। এগুলো থাকবেই, একবারেই নির্মুল করা যাবে না বা সম্ভবও নয়। সমাজে যুগ যুগ ধরে কিছু মানুষ নামক কীট ছিল, আছে এবং থাকবে। আমাদের সবারই উচিত ওদের হাত থেকে সবাইকে, নারীকে হেফাজত করা, প্রতিবাদী করে তোলা বা প্রতিবাদ করার ভাষা শিখানো, আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেচে থাকতে শিখানো, তার নিজস্ব সত্তা নিয়ে। কোন মতেই খোলস পাল্টিয়ে নয়। যুগ পাল্টিয়েছে। এখন আমরা আর পুরোনো ধ্যান ধারনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নই। ঘরে বাহিরে সর্ব ক্ষেত্রে নারী পুরুষ উভয়কেই যার যার গন্ডীর মধ্যে থেকেই সমঝোতার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে একজন নারী বলতে এখন শুধু ঘর সংসার বা হেসেল কন্ট্রোল করাই নয়। এখন নারীরা নারী হয়েই মহাকাশে গমন করছে, যুদ্ধক্ষেত্রেও স্ব স্ব অবদান রাখছে। সর্বক্ষেত্রেই নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের বা সামর্থের ভিত্তিতে পুরুষের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছে, এভাবেই এগিয়ে যেতে হবে, কখনই পুরুষের প্রতিপক্ষ হয়ে নয়।
কথায় কথা বাড়ে, তর্কে তর্ক। পক্ষে বিপক্ষে অনেক কথাই বলা যায় কিন্তু লাভ হয় না আদো। বাবা, মা ভাই বোন সবাইতো মানূষ, তাই বলে কি সবার প্রতি দায়িত্ব বোধটুকুও সমান হবে? বা করা যাবে? বাবা যেমন আদেশ দিবেন আর আমি তা মেনে চলব কিন্তু কোন কারনে যদি একই আদেশ আমি আমার বাবাকে করে ফেলি তাহলে কি তা শোভন হবে? অতএব সব কিছু বাদ দিয়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নিয়েই আমাদের সবাইকে চলতে হবে। যার যার প্রাপ্যটুকু দিতে হবে সম্পুর্ন নিজের তাগিদ থেকে, সে ছেলে মেয়ে মা বাবা ভাই বোন স্ত্রী কন্যা পরিবারের যে কোন সদস্যই হোক না কেন। নারীকেও তার যথাযত অধিকার দিতে হবে নারী হিসাবেই...................................................