হবুচন্দ্র রাজা আর গবুচন্দ্র মন্ত্রী, দু'জনে মিলে (?!) জুতা আবিষ্কার করেছিলেন। শিক্ষিত জনগণ অফ যান, কারণ এখন আমি ইতিহাস আবিষ্কার করছি। কলম এখন আমার কব্জায়।
তো, জুতা আবিষ্কার করেই তাঁরা ক্ষান্ত হন নাই। দুইদিন বাদেই হবুচন্দ্র রাজা প্রাতঃভ্রমণের সময় রাজদীঘিতে স্নানরতা কামিনীদের দেখে প্রবলভাবে তাড়িত হলেন। কোনমতে উত্থান সামলে তিনি গবুচন্দ্রকে বললেন, "মন্ত্রী গবু, ক্যামন যেন লাগে, কী করা যায়?"
গবুচন্দ্র মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললেন, "মহারাজ, আসলেই সমস্যার ব্যাপার, চলেন দরবারে গিয়ে পাঁচজনকে জিজ্ঞেস করি, এ ব্যাপারে কী করণীয়।"
দরবারের অন্যান্য মন্ত্রীরাও মাথা চুলকে বললেন, "ভালোই সমস্যার ব্যাপার। তাহলে মহারাজ, এক কাজ করুন, রাজ্যে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে ঘোষণা করে দিন, এখন থেকে ভোরবেলা আর কোন নারী কাপড় খুলে গোসল করতে পারবে না।"
হবুচন্দ্র ঢ্যাঁড়া পেটালেন, রাজ্যশুদ্ধু নারী কাপড় পরেই ভোরবেলা স্নান করতে লাগলো।
তার কয়েকদিন বাদে আবারও হবুচন্দ্র প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছেন গবুচন্দ্রের সাথে। রাজদীঘিতে কাপড় পরেই কামিনীরা স্নান করছে, কিন্তু ভেজা কাপড় তাদের কমনীয় রমণীয় শরীরে লেপ্টে গিয়ে এক অপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা করেছে। হবুচন্দ্র খানিকক্ষণ জুলজুলিয়ে তাকিয়ে থেকে বললেন, "মন্ত্রী গবু, ওখানটায় ক্যামন যেন লাগে। কী করা যায়?"
গবুচন্দ্র মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললেন, "মহারাজ, আসলেই সমস্যার ব্যাপার, চলেন দরবারে গিয়ে পাঁচজনকে জিজ্ঞেস করি, এ ব্যাপারে কী করণীয়।"
দরবারে অন্যান্য মন্ত্রীরা বললেন, "আসলেই তো সমস্যার ব্যাপার, মহারাজ, এক কাজ করুন, ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে ঘোষণা দিন, এখন থেকে রাজ্যে সবাইকে অস্বচ্ছ জলরোধী বস্ত্র পড়ে গোসল করতে হবে।"
ঢ্যাঁড়া পেটাতে রাজার তেমন পয়সা খরচা হয় না, রাজ্যশুদ্ধ নারীরা রঙবেরঙের জলরোধী বস্ত্র এঁটে গোসল করতে লাগলেন।
তারও দু'দিন পর হবুচন্দ্র গবুচন্দ্র সমভিব্যাহারে প্রাতঃভ্রমণে বেরোলেন। রাজদীঘিতে কামিনীরা রামধনুর সাতরঙা জলরোধী বস্ত্র পড়ে গোসল করছে, বহু কষ্টে।
খানিকক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে হবুচন্দ্র চাপা গলায় বললেন, "মন্ত্রী গবু!"
গবু বললেন, "জি্ব মহারাজ?"
হবু কাতর গলায় বললেন, "তুমি তো জানো, আমি কী কল্পনাপ্রবণ!"
গবু বললেন, "জি্ব মহারাজ!"
হবু বললেন, "আমার তো এখনও ঐ দৃশ্যই চোখে ভাসছে! আমি তো সামলাতে পারছি না গবু! একটা বিহিত কর!"
দরবারে ফিরে মন্ত্রীরা অনেক জল্পনা কল্পনা করলেন। কেউ বললেন, এখন থেকে রাজ্যে নারীদের গোসল নিষিদ্ধ করা হোক। কেউ কেউ বললো, নারীদের প্রকাশ্যে গোসল নিষিদ্ধ করা হোক। কেউ কেউ বললো, রাজ্যে নারীই নিষিদ্ধ করা হোক। সবাই তাদের দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে একটুতফাতে সরে বসলো, যত্তোসব হোমো!
গবুচন্দ্র অনেক ঝুনা মাল, তিনি সেই জুতার আবিষ্কারক মুচিকে এত্তেলা দিয়ে পাঠালেন।
মুচি এসে বিনীতভাবে বললো, "মহারাজ, এ তো আপনার আবিষ্কৃত জুতা পদ্ধতিতেই সমাধান করা সম্ভব!"
হবুচন্দ্র ভড়কে গিয়ে বললেন, "কিভাবে?"
মুচি হাতজোড় করে বললো, "ভোরবেলা রাজদীঘিতে প্রাতঃভ্রমণ করতে যাবেন না মহারাজ। আর যদি নিতান্ত যান, চোখে ঠুলি এঁটে যাবেন। এই যে দেখুন, আমি চীনা পান্ডার চামড়ার তৈরি ঠুলি তৈরি করে এনেছি আপনার জন্য!"
হবুচন্দ্র খানিকটা ভেবে উৎফুল্ল হয়ে বললেন, "আরে আমার মনেও তো ছিলো এ চিন্তা, ব্যাটা ক্যামনে পারিলো জানিতে?"
সেদিন থেকে হবুচন্দ্র ভোরবেলা ময়দানে হাঁটতে যান, মাঝে মাঝে রাজদীঘির দিকে গেলে চোখে ঠুলি এঁটে রাখেন। কামিনীরা আবারও আগের পদ্ধতিতে গোসল করে আর গুনগুন গান গায়, পাখিরা ফুলের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে তাদের সাথে সুর মেলায়।
(সম্প্রতি ব্লগে পর্দাবুর্খা নিয়ে প্রবল চিল্লাফাল্লা হচ্ছে। এই গল্পের সাথে ঐ প্রসঙ্গের কোন মিল নাই, থাকলে কাকতালীয়, হে হে হে)