somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"যে দেশে গরিবের গল্প শোনার কেও থাকে না"

২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একটা গল্প বলতে মন চাইছে।কিন্তু দুঃখের বিষয়
হলো যত কষ্ট নিয়ে গল্পটা আমি লিখব তত কষ্ট
করে আপনি পড়বেন না।হয়ত মুখটা ব্যঙ্গ করে
পড়বেন অথবা অতি তাড়াতাড়ি পড়বেন যাতে
তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়।গল্পটা পড়ে হয়ত
কোন মজা পাবেন না।কারন গল্পটা একজন
গরিবের।আপনাদের কাছে প্রেমের গল্পগুলা খুব
ভালো লাগে।চোখে জল এসে পড়ে।
.
১০ মিনিটের গল্পে ক্লাইম্যাক্স,একশন,আকর্ষণ সব
থাকে।তাই আপনাদের হয়ত শুনতে এত ভালো
লাগে।কিন্তু গরিবের গল্পগুলায় এইসবের কিছুই
থাকে না তাই অবহেলার চোখে নেয়া হয়।
আপনাদেরও দোষ নেই কারন যেখানে সবাই
প্রেমে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে হয়ত আপনি এই
গল্পগুলা পড়ে অন্য সবার থেকে প্রেমের বিষয়ে
বেশি জানতে পারেন।আর নতুন প্রজন্ম তো
শিখেছেই "প্রেমের কাছে কিছু টেকে না"
স্লোগান।তাহলে এই গল্প কি চিজ রে ভাই?আমি
জানি এখনো কিছু লোক আছে যারা গরিবের গল্প
শুনেন বা তাদের সাথেই যুক্ত।আমি নিজেও
তাদের মধ্য থেকে একজন।কথাগুলা তাদের জন্যই
বলা।
.
একটা মেয়ের সাথে আমার পরিচয় আছে প্রায় ৪
বছর ধরে।কিন্তু কোনদিন তেমন কথা হয় নি।হায়
হ্যালো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলো।কিন্তু বেশ
কিছুদিন ধরেই ওর সাথে কথা শুরু হলো ভালো
ভাবে জানলাম।বেশ ক্লোজও হয়ে গেলাম।
সবকিছুই শেয়ার করতাম।একদিন কোন এক কথার
পর্যায়ে জানতে পারলাম মেয়েটার ব্রেষ্ট
টিউমার হয়েছে।মাথাটা ঠিক রাখতে পারলাম
না।কি করব ভেবেও পেলাম না?অদ্ভুদ একটা সময়
যায় এই সময় যখন আপনি সমাবেদনা দিয়েও বলতে
পারবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে।আবার ওর সাথে
তালও মিলাতে পারবেন না।
.
মসজিদে শোয়া ছিলাম স্তব্ধ হয়ে গেলাম।চোখ
দিয়ে কয়েক ফোটা পানি ঝড়ে গেল।
অপারেশনের কথা জিজ্ঞাস করলাম বলল মার্চ
মাসে করার কথা কিন্তু এখন এপ্রিল প্রায় শেষের
দিকে এখন পর্যন্ত কিছুই হলো না।জানতে
চাইলাম কেন?বলল টাকার কারনে।
.
এতক্ষনে মনে পড়ল "হায় বড় শত্রুই তো পথের
বাধা"।মানি টাকার কথা বলছি।কিছুদিন আগেও
আমার এক বন্ধু ইনবক্সে নক দিলো "দোস্ত একটা
ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুকে বাঁচানোর জন্য কিছু
টাকা সংগ্রহ করতে হবে,তুই যা পারিস দিস।
রাজি হলাম।বন্ধুটা ছেলেকে বাঁচানোর জন্য
সাহায্য চেয়ে একটা স্ট্যাটাসও দিলো।কিন্তু
কিছুদিনের মধ্যেই ছেলেটা মারা গেল।খুব দুঃখ
লাগল।ছেলেটা শিশুকালেই এই পৃথীবির মায়া
ছেড়ে চলে গেল।আর আসবে না।মনে মনে
ভাবলাম এই ছেলেটা আশেপাশে ছিল বলে
জানতে পেরেছি কিন্তু ওর মতো না জানি কত
ছেলে মেয়ে সাহায্যের অভাবে মারা যাচ্ছে।
মনে সফট ফিলিংস জাগলেও কিছু করার নেই।
.
আসলে এইসব মানুষগুলো মারা গেলে "৪ দিনের
খরচ" নামের একটা ফরমালিটিস আছে তাও পূরন
করতে পারে না।কিভাবে করবে টাকার অভাবেই
তো মারা গেল এখন এই টাকা দিয়েই কি "৪
দিনের ফরমালিটিস পূরন করবে?উহু জিনিসটা
মিলে না।এইসব লোকদের স্রাধ্যে হয়ত ৪০০-৫০০
মানুষ এসে বিরিয়ানি খেয়ে বলবে না "খুব মজা
হয়েছে ভাই,কে রাঁধল?কয়টা গরু জবায় দিলেন?এই
জায়গায় আবার অদ্ভুদ একটা ব্যাপার আছে তা
হলো স্রাধ্যটা গরিবের দোয়ার জন্য করা হয়
কিন্তু দেখা যায় গরিবরা গেলেই ভ্রু-ক্ষেপ হয়ে
উঠে।এখানেও গরিবকে অবহেলা।
.
কথা এইটা না।কথা হলো মেয়েটার জন্য আমি কি
করতে পারি।ফেসবুকে ইভেন্ট খুলব?মেয়েটার নাম
দিয়ে বলব "সেভ হার।নাকি মেয়েটার ছবি তুলে
ক্যাপশন দিয়ে পোস্ট করব "এই আপুটির ব্রেষ্ট
টিউমার।উনি যাতে ভালো হয়ে যায় দোয়া
করবেন।আমিন।
না এইসবের কিছুই করতে পারব না।ইনফেক্ট কিছুই
করতে পারব না।আমার আর ওর আপন লোকদের
চোখের জল দিয়ে জদি ওর অপারেশনের টাকা
জোগাড় হতো তাহলে কাঁদতে কাঁদতে চোখের
বাপদশা ছুটিয়ে ফেলতাম।হয়তোবা মেয়েটির
চিকিৎসা আল্লাহর রহমতে হয়ে যাবে।কিন্তু ওর
মতো যে আরো কত মানুষ সমস্যায় ভুগছে তাদের
কি হবে?কিছুই না।মনে শুধু সমাবেদনা জাগবে।
আর অপেক্ষা করতে হবে কখন পৃথীবি থেকে
বিদায় নেয়।যাতে মনের সাথে আপোষ করা যায়
"আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে" এই বলে।
.
কোন জায়গাতেই গরিবের দাম নেই।থাকবেই বা
কিভাবে তারা তো নিতে জানে দেয়ার মতো
ক্ষমতা আল্লাহ তাদের দেন নি।হ্যা অবশ্য দোয়া
করতে জানে।কিন্তু বড়লোকের কি আর দোয়ায়
পেট ভরে তাদের পেট শুধু টাকায় ভরে।একটা ঘটনা
এখনো মনে পড়ে "একদিন এক উকিলের চেম্বারে
বসে ছিলাম।আরকি পার্ট টাইম জব করতাম।তো
একজন লোক দরজা নক করে বলছে "বাবা তুমি
আজকা আইতে কইসিলা আমার স্ট্রেচার কিনার
লাইগা কিসু টাকা দিবা।উকিল সাহেব ভ্রু-ক্ষেপ
করে এমনভাবে গালি শুরু করলেন যাতে লোকটি
তার জায়গা-সম্পত্তি চেয়ে বসেছেন।লোকটি খুব
ভয় পেয়ে চলে গেলেন।মনটা খুব খারাপ হয়ে
গিয়েছিল।তারপর তিনি বলতে লাগলেন "বুঝেছ
আরজু এইসব লোক ধান্দা বাজ।ভিক্ষা চাইলে তো
কম টাকা দিবে তাই স্ট্রেচার কেনার বাহানা
করল।অবাক হলাম।আমার নিজের চোখেই তো
দেখা লোকটির ২ পা নেই।স্ট্রেচার টাও ভেজ্ঞে
যাওয়ার উপক্রম তাহলে এটা কি তার চোখে পড়ল
না?আল্লাহ মালুম।কিন্তু কিছুক্ষণ পর আরেকজন
স্বনামধন্য লোক এসে তার কাছে টাকা চাইলেন
নগদ টাকা দিয়ে দিলেন।আসলে তাদের কাছে
টাকাটা ফ্যাক্ট মানবতা বলতে শুধুই ফাকা মাঠ।
.
এখন কথা হলো আমারও জদি কোনদিন কোন
জটিল রোগ হয় তাহলে কারো কাছে সাহায্য
চাইব না।কারন সাহায্যের বদলে সমাবেদনা
কাজ করে না।আর যেদিন শেষ নিশ্বাস নিব
সেদিন একটা অট্ট হাসিতে মেতে উঠব।কারন
আমার জীবনের গল্পটা শোনার মতো মানুষ
থাকবে না।
.
লেখায়- Muhammad Arju (পথহীন মুসাফির)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:০৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এতো কাঁদাও কেনো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬




আয়না হতে চেয়েছিলে আমার। মেনে নিয়ে কথা, তোমায় আয়না ভেবে বসি, দেখতে চাই তোমাতে আমি আর আমার সুখ দু:খ আনন্দ বেদনা। রোদ্দুরের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে আলোয় আলোকিত মনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×