ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার জন্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রীসভা থেকে অপসারণ সহ দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে অবহ্যতি দেয়া হয়েছে। সরকারের দৃষ্টিতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার জন্য তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা গ্রহণ। নিঃসন্দেহে এটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। লতিফ সিদ্দিকী কি বলেছে সেটা পুরোনো খবর। তিনি যে একটা মারাত্মক ও জঘন্য অপরাধ করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এ নিয়েও অনেকেই পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছেন। অনেকেই তাদের দায়বদ্ধতা থেকেই মানবতাবোধের কথা বলেন, লিখেন। পত্রিকার পাতা খুললেই বিভিন্ন সময়ে এই কলামগুলো চোখে পড়ে। এইতো কয়েকদিন আগে এক জাতীয় দৈনিকে এই বিষয়ে একটা কলাম ছাপা হল। তাতে এই বিষয় নিয়ে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে টেনে আনা হয়েছে। তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলা হয়েছে। তাদের ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করলে তারা নিদেনপক্ষে বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা যায়না, যা বর্তমানে মুসলমান সম্প্রদায় পাচ্ছে। হ্যা এটা একটা ভাল দিক যে, দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে বলা হচ্ছে। কিন্তু যারা দেশের মানুষের অধিকার নিয়ে ভাবেন তাদের কলমতো সবার অধিকার নিয়েই লিখবে। এই যে মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনায় আঘাত হানা হল সে নিয়ে কিন্তু কোন কথা নেই। এটা কেমন নীতি বোধগম্য নয়।
আমাদের দেশ একটা উদার ধর্ম নিরেপক্ষ দেশ। এখানে যদি সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় চেতনায় আঘাত করা হয় তবে আমার জানা মতে মুসলিম সম্প্রদায় কখনো তাদের মনের ক্ষোভ প্রকাশে বাধা হয়ে দাড়ায়নি। বরং অনেক ক্ষেত্রেই নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিক্ষোভকে দমিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু কিভাবে এই ফাঁক তৈরী হল? কিভাবে দলের একজন সিনিয়র মন্ত্রী এই কথা বলতে পারেন, নিজে একজন মুসলমান হয়ে? আপনি যে সম্প্রদায়ের কথাই বলুন না কেন, কিভাবে সুযোগ তৈরী হয় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার? যদি রাজনৈতিকভাবে দেখা হয় তবে, বিএনপি, জামাত কিংবা হেফাজত এ নিয়ে মাঠে নামছে। বিক্ষোভ করছে। আবার যদি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন তবে, দেশের কোটি মুসলমানের ধর্মীয় আবেগ, যা কোন ক্রমেই খাটো করে দেখা যায় না। যেভাবেই ধরা হোক না কেন, দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরী হয়েছে, যা কাম্য নয়।
অসম্প্রদায়িক, ধর্ম নিরেপক্ষ বাংলাদেশের সংজ্ঞা কি এই? কোন সম্প্রদায়ের ধর্মকে আঘাত করা, সেটা যে ধর্মই হোক। এর পূর্বেও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য দেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক ছিল। হেফাজতের সমাবেশ, তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ের বিভীষিকাময় পরিবেশ তা ভুলে যাবার নয়। এটা একটা স্পর্শকাতর বিষয়। যে কারও ধর্মের বেলায় এটা হতে পারে। ধর্মীয় অনুভূতি একটা ভিন্ন বিষয়, যা সব কিছুর উর্ধ্বে। কিন্তু কিভাবে হেফাজতের সমাবেশ সৃষ্টি হল? কিভাবে মানুষ ধর্মীয় বিষয়ে আঘাত করার সুযোগ পায়? আসলে আমরা কখনো ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেই না। যেভাবেই হোক না কেন, হেফাজতের ঐ ঘটনার পরে ধর্মীয় বিষয়ে এটা সুষ্ঠ আইন প্রণয়ন করা কি উচিত ছিল না, যাতে করে ভবিষ্যতে পুণরায় হেফাজত, বিএনপি কিংবা জামাত মাঠে নামার সুযোগ না পায়। কিন্তু আমরাই সেই পথ আবার তৈরী করে দিলাম। যার প্রেক্ষিতে পুণরায় ধর্মীয় চেতনায় আঘাত করার সুযোগ পেল লতিফ সিদ্দিকী। ফলে আবার সংঘাত।
ধর্ম সবার উপরে। কোন ধর্মের লোকই কোন ধর্মকে যেন কটাক্ষ করতে না পারে সে ব্যাপারে একটা কঠোর নীতিমালা প্রয়োজন। যাতে করে কখনোই সুযোগ তৈরী না হয়। এতে করে শুধু ইসলাম নয় অন্যান্য ধর্মের অধিকারও সংরক্ষণ হবে।
প্রধানমন্ত্রী যদিও একটা পদক্ষেপ নিয়েছেন, কিন্তু সেটা ক্ষণস্থায়ী। শুধুমাত্র আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর বেলায়। তিনি মন্ত্রী, সরকার দলীয় এমপি। তাকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হবে। এটাই কি সমাধান? সাধারণ লোকের কথা বাদই দিলাম, সুষ্ঠ আইন না থাকায় আজ যদি কোন সাহিত্যিক তার কলম বের করে কোন ধর্মের বিরুদ্ধে, কোন অভিনেতা অভিনয় করে ধর্মকে কটাক্ষ করে তবে এর সমাধান কি? সাহিত্যিকের বই বায়েজাপ্ত করা, অভিনেতার নাটক কিংবা সিনেমা বন্ধ করে দেয়া। কিন্তু এ দ্বারা দেশে যে সহিংসতা সৃষ্টি হবে তার দায় কে নিবে?
মূলত প্রত্যেক ধর্মের অধিকার সংরক্ষণ করার দায়িত্ব সরকারের। আজ বাংলাদেশ মুসলিম অধূষ্যিত দেশ বলে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ক্ষোভ প্রকাশের একটা সুযোগ পায়। কিন্তু অন্য ধর্মকে আঘাত করলে তারা সংখ্যালঘু বলে হয়ত ভয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে না, যা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মুসলমানদের বেলায় হয়। কিন্তু তাদের মনেতো ব্যাথা আছে। ধর্মকে কটাক্ষ করা কখনোই কাম্য নয়। এ ব্যাপারে ইসলাম ধর্মেও কঠোর বিধি নিষেধ আছে। পবিত্র কুরআনে সূরা আনআমে আল্লাহ তা’আলা বলেন, ”আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে তারা ডাকে তাদেরকে তোমরা গালি দিওনা; কারণ এতে তারাও সীমালংঘন করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দিবে।” এটা সত্যিই উন্নত শিক্ষা। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারে উচিত একটা সুষ্ঠ আইন প্রণয়ন করা যাতে করে কোন ধর্মের লোকই কোন ধর্মকে কটাক্ষ করার সুযোগ না পায়। আর এই ধর্মকে পুঁজি করে কেউ যেন সংঘাতের সৃষ্টি করতে না পারে।
(লেখাটি আজকের ভোরের কাগজ এ প্রকাশিত।)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:৫১