মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এর শরয়ী বিধান- ০১
কয়েকটি সন্দেহের নিরসন
আমাদের দেশের কতিপয় আলেম এমএলএম এর ব্যবসাকে বিভিন্ন বিষয়ের সাথে তুলনা করে জায়েজ বানানোর অপচেষ্টা করছে। তাদের উদ্দেশ্য কী? হয়তো তারা এর সাথে জড়িত হয়ে অনেক লাভবান হচ্ছেন, না হয় অন্যদের জড়িয়ে দিয়ে দেশের মানুষকে সাবলম্বি করে দেশকে দারিদ্রমুক্ত(!) করতে চাচ্ছেন, নয়তো বা শ্রমবিহীন রুজির প্রতি আকৃষ্ট কতে জংগণকে বেকারত্বের দিকে ঠেলে দেয়ার হীন চক্রান্তে লিপ্ত আছেন। তারাই ভাল বলতে পারবেন তাদের উদ্দেশ্যের কথা। আমার মনে হয়, যেখানে দেশের শীর্ষস্থানীয় মুফতিয়ানে কেরাম এ পদ্ধতির ব্যবসাকে হারাম ফতোয়া দিচ্ছেন, সেখানে কিছু সংখ্যক স্বঘোষিত নামধারী মুফতীর এমএলএম এর ব্যবসাকে বৈধ বানানোর চেষ্টা তাদের দুনিয়াবী লিপ্সা ও ব্যক্তিগত স্বার্থ বৈ কিছুই নয়।
হাদীসে বর্ণিত ঝাড়ফুঁকের ঘটনার সাথে তুলনা
কেউ কেউ বিনাশ্রমে ইনকাম বা মুনাফার অংশিদার হওয়া বৈধতা প্রমাণ করতে গিয়ে বোখারী শরীফের কিতাবুল ইজারা থেকে একটি হাদীস পেশ করেন যে, সাহাবীদের একদল কোন এক সফরে ছিলেন। এক জায়গায় তাবু টানিয়েছেন। সেখানকার এক সরদারকে বিচ্ছু দংশন করেছিল। সরদারের লোকেরা সাহাবীদের জামাতের নিকট এসে বিষয়টি জানাল। এক সাহাবী সূরা ফাতিহা পড়ে ঝাড়ফুঁক করে একপাল বকরি অর্জন করল। সাহাবীদের কেউ কেউ বললেন, এগুলো বন্টন করো। কিন্তু যিনি ঝাড়ফুঁক করেছিলেন তিনি বললেন, এটি করব না যে পর্যন্ত না আমরা নবী (সাঃ) এর নিকট এ ঘটনা জানাই এবং লক্ষ করি তিনি আমাদেরকে কি হুকুম দেন। তারা এসে রাসূল (সাঃ) এর কাছে ঘটনা বর্ণনা করলেন। হুজুর (সাঃ) বললেন, তুমি কিভাবে জানলে যে সূরা ফাতিহাটি দোয়া? এরপর বললেন, তোমরা ঠিকই করেছ। বন্টন করো এবং তোমাদের সাথে আমার জন্য একটি অংশ রেখো।
উল্লেখিত ঘটনায় দেখা যায় একজন ঝাড়ফুঁক করলো আর সবাই মুনাফার অংশ নিল। এমনকি খোদ হুজুর (সাঃ) নিজেই তা নিয়ে দেখিয়ে দিলেন। সুতরাং শ্রম ছাড়া বিনিময় জায়েজ হওয়ার এটাই উজ্জল প্রমাণ।
উল্লেখিত যুক্তি একেবারেই নিরর্থক। এমএলএম এর কমিশনের সাথে বর্ণিত ঘটনার কোন রকম সাদৃশ্যতা নেই। কারণ, হাদীসের ঘটনায় একজনই ঝাড়ফুঁক করেছিল। যে ছাগপাল পেল সেগুলোর মালিক ঐ সাহাবীই। তিনি শ্রম দিয়েই তা অর্জন করেছেন।
এখানে একটু চুক্তিই হয়েছে। তা হলো চিকিত্তসার বিনিময়ে ছাগপাল। সবাই একসাথে ছিল বিধায় তাদেরকে খুশি করার জন্য ঐ সাহাবী ছাগপালগুলো সবার মধ্যে বন্টন করেছেন। আর কোরআনের আয়াত দ্বারা ঝাড়ফুঁক করে বিনিময় অর্জন করা জায়েজ প্রমাণ করার জন্য হুজুর (সাঃ) নিজেকে দেয়ার কথা বলেছেন। পক্ষান্তরে এমএলএম পদ্ধতির কারবারে কোম্পানীর নীতিমালার মধ্যে ইজারা চুক্তি সম্পাদন করার জন্য বিক্রি চুক্তিকে শর্ত রাখা হয়েছে। সুতরাং এমএলএম এর কমিশনের সাথে হাদীসের ঘটনার কোন প্রকার সামঞ্জস্য নেই।
কোন নির্দিষ্ট কাজের পুরস্কারের সাথে তুলনা
কেউ কেউ আবার কোরআনের আয়াত দ্বারাও এমএলএম এর কারবারকে বৈধ করার চেষ্টা করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে-
قالوا نفقد صواع الملك ولمن جاء به حمل بعير وأنا به زعيم
তারা বলল, আমরা বাদশাহর পানপাত্র হারিয়েছি এবং যে কেউ এনে দেবে সে এক উটের বোঝা পরিমাণ মাল পাবে এবং আমি এর জামিনদার হলাম।
সূরা ইউসুফ-৭২।
এ আয়াত দ্বারা এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, কোন নির্দিষ্ট কাজের মজুরী কিংবা পুরস্কার নির্ধারণ করে যদি এই মর্মে ঘোষণা দেয়া হয়, যে ব্যক্তি এ কাজ করে দেবে সে এই পরিমাণ মজুরী বা পুরস্কার পাবে। তবে তা জায়েজ হবে। যেমন অপরাধীদেরকে ধরার জন্য কিংবা হারানো বস্তু ফেরত দেয়ার জন্য এ ধরণের পুরস্কার সাধারণত প্রচলিত আছে। যদিও এ জাতীয় লেনদেন ফিকাহশাস্ত্রে বর্ণিত ইজারার সংজ্ঞার