ছেলের বয়স ৩৫ ছুই ছুই কিছুদিন পরে সেভ করলে বয়সটা বুঝা যেতে পারে,কারন দাঁড়িতে পাকা আভা ভেসে এসেছে,তাই ইদানিং ছেলেকে নিয়ে মা-বাবার ভীষন রকমের টেনশন হচ্ছে। ছেলের উচ্চতর শিক্ষার কথা ভেবে এতোদিন মেয়ে দেখার নামটি মুখে নেয়াতো দূরে থাক মনে চিন্তা ও করেনি, আর এদিকে ছেলের মাথায় ও বিয়ে টিয়ে নিয়ে কোন ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা বলতে তেমন কিছু অনুভব করা যাচ্ছেনা। তবুও মা-বাবার দাইত্ব থেকে ছেলেকে বিয়ে দেয়া দরকার তাই পাত্রী দেখার জন্য তিন চারজন ঘটক লাগানো হয়েছে। ছেলে বিদেশী নামি দামি বেশ কিছু ডিগ্রী অর্জনকারী তাই ছেলের জন্য অন্তত দেশীয় দু,চারটা ডিগ্রী প্রাপ্ত মেয়েতো চাই। তাছাড়া ছেলে দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বলে কথা তাই তার সাথে স্টাটাস মেন্টেন করতে অন্তত মোটামুটি পর্জায়ের মেয়ে দরকার।
যাইহোক অবশেষে মেয়ে খুজে পাওয়া গেছে মেয়ে ভালো সুধু শিক্ষিত ই না তিনি ও ভালো একটা কম্পানীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। ব্যাটে বলে লেগে গেছে ধুম ধাম বিয়ে, বাদ পরেনি কোন সোসাইটির মানুষ, শুধু বাদ পরেছিলো এলাকার ছোটলোকের দল,কারন এরা আর জাইহোক অন্তত এই ধরনের বিয়েতে একবেলা খাবার যোগ্যতা নিয়ে জন্মেনি।
বিয়ে হলো, হানীমুন হলো, আরো কতোকি, তবে দু জন-ই ভীষন রকমের ব্যাস্ত সেটা ভূলে গেলে চলবেনা।দু জনের জব পজিশন যেহেতু দু মেরুতে তাই জব এর ব্যাস্ততার সুবাদেই আলাদা থাকতে হচ্ছে দু জনকে।
স্যার অনেকদিন পরে আজ আবার নিজেকে মুক্ত ভাবতে শুরু করেছেন আর মনে মনে ভাবছেন নাহ আসলে জীবনটাতো একদম ই খারাপনা, ভালোইতো,বড্ড দেরী করে ফেলেছি বোধ হয়।
বেশ কিছুদিন অবসার এর পরে আজ স্যার ক্লাশ নিলেন, ক্লাশে লক্ষ করলেন তার ছাত্র ছাত্রীরা বেশ চোখা চুখি করছে তাকে নিয়ে। এভাবে চলতে থাকে পূর্বের ন্যায় বেশ কিছুদিন।
স্যার কয়েকদিন ধরে খেয়াল করলো নন্দিনী নামের মেয়েটা ক্লাশে আসছেনা, তবে কি মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেলো, নাকি সত্যি সত্যি আমার প্রতি তার দুর্বলতা কাজ করতো? ধুর ছাই এসব আমি কি ভাবছি, হতে পারে মেয়েটা আসুস্থ বা কোন ইম্পর্টেন্ট কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে, এতো বাজে চিন্তা করে লাভ নেই, ঝামেলা মিটে গেলে হয়তো আবার নিয়মিত ক্লাশে আসবে।
কিছুক্ষন পরে মনে হলো এসব আমি কি ভাবছি, অনেকদিন হয়ে গেলো শায়লা (বিবাহিত স্ত্রী) কে একটা ফোন করে ঢাকায় আসতে বল্লে খারাপ হতোনা, সামনে পরীক্ষার ঝামেলা আছে প্রশ্ন করার ও একটা প্যারা আছে সুতরাং কোন ভাবে ই আমার যাবার সুযোগ নেই,আতএব দেরী না করে এখন ই ফোন করে ফেলি।
- হ্যালো শায়লা তুমি কি কিছুদিনের জন্য ঢাকায় আসতে পারবে?
-কেন আরিফ? তুমি জানোনা যে আগামি মাসে আমার প্র্মোশনের পসিবলিটি আছে! এই সময় আমি যদি কোন কিছু মিসটেক করি তবে সারাজীবন তার খেসারত দিতে হবে, তাছাড়া এমন সুযোগ জীবনে আর না ও আসতে পারে।
-নাহ, ঠিক আছে, তার পরে ও যদি সময় করতে পারো তবে চেষ্টা করে দেখো,
-দেখো আরিফ ছেলে মানুষি আমার একদম ই পছন্দ না, তাছাড়া তুমি আমি কেউ ই ২০,২২ বছরের ছেলে মেয়ে না।
- ওকে,
ফোন রেখে আরিফ সাহেব খুব আনমনে বসে আছেন, আর ভাবছেন এমন বিয়ে না করাইতো ভালোছিলো, শুধু শুধু একটা বাড়তি ঝামেলা নিয়ে ফালতু টেনশনে পরে গেলাম, ভাবতে ভাবতে কোন ফাকে দু চোখের পাতার মিলন হয়ে গেলো তা আরিফ সাহেব টের পাননি।হঠাৎ নরম শুরে কে জেনো ডেকে উঠালো, স্যার আসতে পারি?
- হ্যাঁ আসো আসো, তা এতোদিন কোথায় ছিলে, তোমাকেতো অনেকদিন ধরে ক্লাশে দেখছিনা, কোন সমস্যা নাতো?
-জ্বী, স্যার মানে একটু সমস্যা ছিলো, কাজীনের বিয়ে নিয়ে খুব ব্যাস্তছিলাম,তাই ক্লাশে আসা হয়নি।
- তা হঠাৎ করে আমার রুমে? বলো কি হেল্প করতে পারি তোমার?
- না মানে স্যার আমি এই কয়েকদিন ভালোভাবে ক্লাশ করতে পারিনি তাই আপনার সাথে দেখা করতে আসলাম।
-আচ্ছা, বুঝতে পেরেছি, বসো, আমি এখন ও প্রশ্ন রেডি করতে পারিনি, রেডি হলে তোমাকে জানাবো, এক কাজ করো তোমার ফোন নাম্বারটা আমার ঐ ডায়রীতে লিখে রেখে যাও, প্রশ্ন রেডি হলে আমি তোমাকে ফোন করে জানাবো।
- আজ তাহলে উঠি স্যার?
- হ্যাঁ, আর শুনো ফোন খোলা রেখো, আমি যাতে ফোন করলে তাড়াতাড়ি চলে আসতে পারো।
এই সেই নন্দিনী, যার সাথে শুধু আরিফ স্যার এর সাথে-ইনা প্রায় সব স্যারদের সাথে ই তার গুড রিলেশন।আর এটা নিয়ে তার ক্লাশের সবাই ই তাকে প্রায় ক্ষেপায়ে থাকে, এমনকি কিছুদিন আগে তার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে এই ব্যাপার নিয়ে ঝগরা হয়ে রিলেশন ব্রেকাপ হয়ে গেছে। কারন তার বয়ফ্রেন্ড আন কালচার, সব ব্যাপারে তাকে সন্দেহ করে। আজকালকার রিলেশনে সন্দেহ বলে কিছু থাকতে নেই, কারন ছেলে মেয়ে সমান অধিকার, ছেলেরা যদি রাত ১২ টা পর্যন্ত আড্ডা দিতে পারে তবে মেয়ে হয়ে কেনো পারবেনা। তাছাড়া রুপম একটা খ্যাত ও বটে, তানাহলে স্যারদের সাথে ছাত্রীদের সাথে রিলেশন থাকা খারাপতো কিছু না।এটা নিয়ে রুপম সন্দেহ না করলে ও পারতো। আর জাইহোক এমন একটা খ্যাত মার্কা পোলার সাথে নন্দিনীর রিলেশন মানায়না।
আরিফ সাহেবের মনটা আজ অনেক ভালো, কারন সবার আগে তার প্রশ্ন করা হয়ে গেছে, তিনি তার একটা কপি জমা ও দিয়ে দিয়েছেন, আর বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পর্যন্ত তার কোন প্রশ্ন রিফিউজ করেনি।
তাই মনে মনে ভাবছেন, এই আনন্দের খবরটা শায়লাকে দেয়া উচিৎ আর যদি শায়লার কাজের ব্যাস্ততা কিছুটা কমে থাকে তবে আমি ই আগামী মাসে একবার গিয়ে শায়লাকে দেখে আসবো।
- হ্যালো সায়লা তোমার কাজের খবরকি?
-আরিফ তুমি কিন্তু জানো এ মাসে আমি খুব বিজি থাকবো, আগামী মাসে ফ্রী হবো, তার পরে ও তুমি বারবার আমাকে অফিস টাইইমে ফোন করো।
কেনো তুমি রাতে ফোন করতে পারোনা?
-আচ্ছা সায়লা তুমি কাজ করো, আমি তোমাকে রাতে ফোন দিবো,এখন রাখি কেমন?
আরিফ সাহেব এর মনটা ই খারাপ হয়ে গেলো তিনি চেয়েছিলেন শায়লাকে তার আনন্দের খবরটা দিবে, সেটা আর হলোনা,উল্টা আরো মনটা ই খারাপ হয়ে গেলো। আরিফ সাহেব মনে মনে ভাবতে লাগলেন তার থেকে বরং নন্দিনীকে একবার কল করলে ই ভালো হয়, বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো নন্দিনী স্যারের বাসায় উপস্থিত
-স্যার আমাকে ডেকেছিলেন?
- হ্যাঁ, বসো,তোমার জন্য একটা ভালো খবর আছে, প্রশ্ন রেডি হয়েছে, এক কপি জমা দিয়ে দিয়েছি, আর তোমার জন্য এক কপি রেখে দিয়েছি। যাবার সময় মনে করে ঐ ডায়রীর ভেতরে থাকা পেপার্স গুলো নিয়ে যেও।
- থ্যাংকিউ স্যার, স্যার আপনার জন্যা আমি নিজের হাতে রান্না করে নিয়ে এসেছি, আজ আপনি আমার সামনে বসে খাবেন।
- আচ্ছা দাও দেখি কি নিয়ে এসেছ।
খাওয়া দাওয়া শেষ স্যার আরো কিছু আশা করছেন নন্দিনীর কাছ থেকে, নন্দিনী কোনমতে স্যারের হাত থেকে মুক্ত হয়ে ঝটপট ডায়রীর ভেতর থেকে পেপার্স গুলো নিয়ে বের হয়ে পরলো।
পরীক্ষার হলে গিয়ে নন্দিনীর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরার মতো অবস্থা, একি মাত্র ২/৩ টা প্রশ্ন বাদে আর কোন পশ্ন কমন পরলোনা? তাহলে কি স্যার নন্দিনীর সাথে প্রতারনা করলো?
পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে নন্দিনী আবেগ মিশ্রিতো কন্ঠে ফোনে স্যারকে জানালো পরীক্ষার প্রশ্নের কথা। স্যর নন্দিনীকে শান্তনা দিয়ে বললেন তুমি যেই পেপার্স গুলো নিয়েছো সেগুলো ছিলো গত বছরের প্রশ্ন, অসুবিধা নেই তুমি ২ দিন পরে সন্ধার দিকে আমার বাসায় এসো, ততো দিনে তোমাদের পরীক্ষার খাতা আমার হাতে এসে যাবে, আমি থাকতে তোমার চিন্তা নেই।
যেই কথা সেই কাজ স্যারের হাতে পরীক্ষার খাতা এসে জমা হলো, আর নন্দিনী এসে ও হাজির হলো, স্যার নন্দিনীর খাতা বের করে দিয়ে ব্ললেন এই নাও খাতা ইচ্ছা মতো সব উত্তর গুলো এই পেপার্স দেখে লিখে দাও। লেখা শেষ হলে আমাকে জানাবে আমি পাশের রুমে আছি,
এদিকে নন্দিনী ও আট দশটা মেয়েদের মতো বোকা না সে তার বন্ধুদেরকে এস এম এস করে আরিফ স্যারের বাসার আসে পাসে থাকার জন্য বলে দিলো। নন্দিনীর লেখা শেষ হতে না হতে ই স্যার এসে উপস্থিত, সোন নন্দিনী দুনিয়াতে কেউ ই কোন বেনিফিট ছাড়া কাজ করেনা, আশা করি তুমি খুব ম্যাচিউর আধুনিক মেয়ে, সুতরং আমাকে বেনিফিটেড করা তোমার দাইত্ব...........................................................................
কিছুক্ষনের মধ্যে ভীর জমে গেলো আরিফ স্যারের বাসার সামনে, এবং সকালে জাতীয় পত্রিকার হেডলাইন হয়ে গেলো *** বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের হাতে ছাত্রী ধর্ষনের স্বীকার, উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য কে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন আমরা ব্যাপারটি তদন্ত করে দেখবো, ইতি মধ্যে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, কিছুদিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিলে আমরা ব্যাপারটির যথাযথ ব্যাবস্থা নিবো