মানুষের জীবনে অনেক আনন্দের ঘটনা ঘটে, ঘটে দুঃখের ঘটনা। তবে পার্থক্য হল, বেশির ভাগ আনন্দের ঘটনাগুলি যেভাবে সবার সাথে শেয়ার করা যায়, সব দুঃখের ঘটনাগুলি কিন্তু মোটেও তেমন নয়। আনন্দের মুহূর্তের কথাগুলো যদি বলি, তাহলে এমন মুহূর্ত আমাদের জীবনে আসলে খুব কমই ঘটে, যেখানে অনেক বন্ধু-বান্ধব মিলে সেইসব মুহূর্তের টুকরাগুলি স্মৃতিতে সযতনে লালন করা যায়। স্টাডি ট্যুর বা শিক্ষাসফর তেমন উপলক্ষ তৈরি করার জন্য সর্বোত্তম উপায়। ২০১৪,তখন ফেব্রুয়ারী মাস। শাবিপ্রবি’র ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ১২তম ব্যাচ ন্যাশনাল স্টাডি ট্যুর এ যাবে ঠিক হল। স্থান বান্দরবান-কক্সবাজার-সেন্ট মাটিন। প্রতি বছর শাবিপ্রবি’র প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট ৪র্থ বর্ষে ন্যাশনাল স্টাডি ট্যুর এ যায়। ডিপার্টমেন্ট এবং ছাত্রছাত্রীদের যৌথ স্পন্সরশীপে স্টাডি ট্যুরগুলো সম্পন্ন হয়। ঠিক হল আমাদের ব্যাচ মার্চের ১০-১৭ তারিখ স্টাডি ট্যুর এ থাকবে। আমাদের সঙ্গে থাকবেন আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক ড.মোঃ মনিরুল ইসলাম স্যার ও তাঁর স্ত্রী। স্যার মেড্যামদের সহ আমাদের ৩২ জনকে বহনকারী বিশ্ববিদ্যালয় বাস ১০ তারিখ রাতে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন এ নামিয়ে দিল। শুরু হল আমাদের যাত্রা। আমরা এজেন্ট ঠিক করে রেখেছিলাম তাই পরদিন সকালে চট্টগ্রাম স্টেশনে নেমেই দেখি আমাদের জন্য বাস রেডি। গন্তব্য বান্দরবান। উল্লেখ্য আমাদের ব্যাচের বেশিরভাগেরই এই প্রথমবার চট্টগ্রামে আসা। তাই বান্দরবানের দিকে যতই যাচ্ছিলাম মুগ্ধতা গ্রাস করছিলো আর ভাবছিলাম আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ কতই না বৈচিত্র্যময়! বান্দরবান পৌছে হোটেলে উঠে পরদিন গেলাম নীলাচল । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪০০ ফুট উঁচু সেই স্থান। যেতে হয় খোলা জীপে করে। ভয়ংকর আঁকাবাঁকা আর রোমাঞ্চকর সেই রাস্তা। নীলাচল গিয়ে প্রকৃতির এতো সৌন্দর্য আর নীল আকাশের বিশালতা কাছ থেকে দেখে মনে হল অপূর্ণ মানবমনকে খানিকটা পূর্ণতার সাধ দিতেই বুঝি বিধাতা এতো ভয়ংকর সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছেন। যেদিকে চোখ যায় মনে হচ্ছিলো উঁচু উঁচু পাহাড় আকাশে হেলান দিয়ে আমাদের যেন অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। এই জায়গা এতো উঁচু যে এখান থেকেই নীলগিরি যাওয়ার রাস্তা দেখা যায়। ফিরে আসার সময় স্বর্ণ মন্দিরে গেলাম সবাই। এখানেও পর্যটকদের ভীড় কম নয়। বিকালে গেলাম মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স । এক কথায় অপূর্ব!। প্রবেশ পথে “সম্প্রীতির বান্দরবান” শিরোনামে বিশাল একটা সাইনবোর্ড। সৌজন্যেঃ বান্দরবান সেনা রিজিওন । তাতে শুভা পাচ্ছে চাক, মারমা, বম, খুমী, তঞ্চঙ্গা, বাঙ্গালী, পাংখোয়া, ত্রিপুরা, খেয়াং, চাকমা, ম্রো, লুসাই প্রত্যেক জাতি সত্তার পৃথক পৃথক দম্পতীর ছবি। এখানে আছে ক্যাবলকার, প্যাডেল বোট ভ্রমণ, মিনি চিড়িয়াখানা, জুলন্ত সেতু, প্রাকৃতিক লেক ইত্যাদি। লেকের উপর দিয়ে যাওয়া জুলন্ত সেতুতে সবাই ছবি তুললাম। বান্দরবানে মানুষ দেখলাম সবাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। জায়গায় জায়গায় আর্মি ক্যাম্প চোখে পড়ল। আমরা যে জীপটাতে ছিলাম, তাঁর ড্রাইভার আমাদের থেকে তিন চার বছরের বড় হবে। সম্ভবত চাকমা উপজাতির। সে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নানা কিছু জানতে চাইল। সব বললাম। এ পার্বত্য অঞ্চলে কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেই, নেই শিক্ষাদীক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা...... এতে সে দুঃখ পাচ্ছে, বুঝতে সময় লাগেনি। হোটেলে আসতে আসতে সন্ধ্যা। ক্লান্ত লাগছিল তখন। কিন্তু আমার কিছু বন্ধুদের শরীর তখনও ক্লান্ত নয়। ওরা সন্ধ্যা পর বের হল বান্দরবানের বাজার দেখতে, আমরা হালকা চা-নাশতা খেতে নিচে নামলাম। বাজার থেকে ওরা কিনে আনল কোয়ার্টার প্যান্ট,তুলনামূলক অনেক সস্তা দামে। রাতে ঘুমের পর পরদিন সবাই চাঙ্গা। এবার গন্তব্য নীলগিরি হিল রিসোর্ট। ৫০ টাকা করে প্রবেশ টিকেট। বলা চলে পাহাড়ি সৌন্দর্য উপভোগের “ ওয়াচ টাওয়ার “ সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত এ নীলগিরি হিল রিসোর্ট । অনেকটা কাশ্মীরের দুর্গম পার্বত্য এলাকার মতো । সিলেটের সর্বোচ্চ পাহাড়গুলো মেঘের সাথে ঘেঁষা এসব বিশাল বিশাল পাহাড়ের হাঁটু সমান হবে কিনা সন্দেহ। বান্দরবানে দুইদিনের ভ্রমণ শেষ। এবার কক্সবাজার যাত্রা। উঁচু উঁচু পাহাড় থেকে আকাশের বিশালতা দেখার পর এবার সমুদ্রের বিশালতা দেখার পালা। এযেন পাহাড় বিলাস থেকে সমুদ্র বিলাস! মার্চের ১২ তারিখ বিকালে বাসে পৌঁছলাম কক্সবাজার। কলাতলির পাশে হোটেলে সব লাগেজ রেখেই স্যার আর মেড্যাম এর পিছু পিছু ৩০ জনের দল ছুটল সমুদ্র বিলাসে। আমার জন্য সেটি ছিল বিলাসের চেয়েও বেশি কিছু। এই প্রথম সমুদ্র দেখছি আমি। কেউ কল্পনাো করতে পারবে না কেমন লাগছিলো আমার। সবাই মোটামোটি তৈরি হয়ে এসেছে পানিতে নামার। আমিই একমাত্র আবেগের ঠেলায় কিছুই আনিনি সঙ্গে, না থ্রি কোয়ার্টার না স্পঞ্জ স্যান্ডেল। বিচ এ গিয়েই সবার সাথে দৌড়ে সোজা পানিতে ঝাঁপ। স্যার সহ বাকিরা তখন ব্যস্ত বিচ এ ফুটবল খেলায়। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছিলো, তাই সবাই হোটেলে চলে আসলাম। প্যান্টের পকেটে তখন প্রায় ১ কেজি সমুদ্রের বালি। আসার সময় অনেকের স্যান্ডেল খুঁজে পাওয়া গেল না, হারিয়ে গেল বালুর মহাসমুদ্রে। এখনো মনে পড়ে, বিচ থেকে কিছু দূরে কোমর পানিতে আমরা আর সমুদ্রের বড় বড় ঢেউয়ের ঠেলায় আমরা বিচ এ গিয়ে পড়ছি, সামনে টকটকে লাল সূর্য। সন্ধ্যা পর হোটেলের চারটা রুম এর সবগুলো বাথরুম এ ভিড়, কে কার আগে গোসল করে বালিমুক্ত হতে পারে। একঘণ্টা পর আমি সুযোগ পেলাম। ততক্ষণে যে যার মতো ছোট ছোট গ্রুপ করে বেড়িয়ে পরেছে। শেষমেষ আমি আর আজাদ একসঙ্গে বের হলাম। বিচ এর কাছের দোকানগুলোতে গেলাম। দুকানগুলো নানা ধরণের অলঙ্কার আর সোপিসের। বোন আর কাজিনদের জন্য এগারো জুড়া কানের দুল কিনলাম, আজাদ তাঁর বোনের জন্য এক জুড়া কিনল। এরপর আমরা হাটতে হাটতে ঈনানি বিচ এর রাস্তার দিকে গেলাম। পথে দুইধারে অনেকগুলো ফাঈব স্টার হোটেল চোখে পড়ল। দুইজনে কিছু সময় বাইরে দাঁড়িয়ে এসব হোটেলগুলো দেখলাম। কিন্তু তখন একবার ও কেন আমাদের দুইজনের কারোরই ভিতরে যেয়ে হোটেলগুলো দেখতে ইচ্ছা হল না... এখনো অবাক হই। হয়তো কোন অজানা ভয় কাজ করেছিল। ইনানি বিচ এর রাস্তার দিকে এক জায়গায় দেখলাম ভাঁজা গলদা চিংড়ি, নানা ধরণের ভাজা সামুদ্রিক মাছ, ভাঁজা কাঁকরা ইত্যাদি নিয়ে বসেছে একটা ঠেলা গাড়িতে করে । আমরা সিলেট থেকে এসেছি শুনে বিক্রেতা আমাদের ভাঁজা কাঁকড়া অফার করল। আজাদের মুখ দেখেই বুঝলাম, সে খেতে চাচ্ছে। আমার অনিচ্ছায় বেচারার ইচ্ছাও মরে গেল। দুই জনে দুইটা বড় ধরণের চিংড়ি খেলাম। রাত দশটার মধ্যে স্যার এর নির্দেশ মোতাবেক ফিরে আসলাম সবাই। ডিনারের পর সবাই বের হল আবার। সেদিন বন্ধু সুপন এর জন্মদিন ছিল। রাত বারটায় বিচ এ স্যার ম্যাম সবাই মিলে কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করা হল। এর পর চলল আড্ডা। এখনও মনে পড়ে, রাত দেড়টায় কক্সবাজার সি বিচের সেই দৃশ্য, চাঁদের টানে সমুদ্র অনেক দূর চলে গেছে। এটাকে ভাঁটা বলে। একটি মেয়েকে একা অনেক দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। বিশাল জলরাশির দিকে তাকিয়ে আছে সে । পরনে আবার সাদা ড্রেস। গহীন রাত। আমরা মাত্র তিনজন তখন বিচে। মেয়েটির এমন অদ্ভুত এডভেঞ্চার এ আমরা খানিকটা হলেও শিহরিত হলাম। সাগরে তখনও জেলেদের ট্রলার ভাসছে। শিডিউল অনুযায়ী পরের দিন সেন্ট মাটিন যাওয়ার কথা। সেখানে থাকব দুইরাত। পরের দিন জাহাজে চড়ে বসলাম। প্রচণ্ড ভিড়। আমাদের সিটগুলো মানুষে ঠাসা। মেয়েরা ছাড়া ডেকের সিটগুলোতে আর কেউ বসল না। বাকি সবাই সোজা জাহাজের ছাঁদে। পানি কেটে কেটে এগিয়ে চলছে জাহাজ। আশেপাশে যত ট্রলার, অন্যান্য জাহাজ দেখা যাচ্ছে, সবগুলোতে বাংলাদেশের পতাকা লাগানো। মাঝসাগরে গিয়ে একটু একটু ভয় লাগলো। চারিদিকে পানি আর পানি। দূরে সাগরের সীমান্ত ঘেঁষে মায়ানমারের পাহাড়ের সাড়ি দেখা যাচ্ছে। মাঝসাগরের আরেক অপরূপ দৃশ্য হচ্ছে- সামুদ্রিক পাখি। সারি সারি সাদা সাদা সামুদ্রিক পাখি তখন জাহাজের পিছু নিয়েছে। যাত্রীরা ব্রেড, বিস্কুট ইত্যাদির টুকরা ছুঁড়ে দিচ্ছে আর পানিতে পরার আগেই উড়ন্ত অবস্তায় পাখিগুলো সেগুলো ঠোট দিয়ে ঝাঁপতে ধরছে। এসব অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে করতে প্রায় দুই ঘণ্টা পর পৌছলাম স্বপ্নের সেই দ্বীপ- সেন্ট মাটিন। ৮ বর্গ কিলোমিটারের অপরূপ একটি দ্বীপ। কটেজ এ উঠে লাঞ্চ এর পর পর শুরু হল সেন্ট মাটিন দেখা। আমরা যে হোটেলে লাঞ্চ করেছি,সেখান থেকেই সমুদ্রের গর্জন শোনা যায়। লাঞ্চটা সেরেই দলবেঁধে সেদিকে গেলাম। ধু ধু বাতাস। এখানে সেখানে ডাব নিয়ে বসেছে। দ্বীপটির অপর নাম নারিকেল জিঞ্জিরা হলেও ডাবের কদরই এখানে বেশি। এর প্রধান কারণ বিশুদ্ধ পানির অপ্রতুলতা আর মিনারেল ওয়াটার এর বোতলগুলোর দাম এখানে দ্বিগুণ। ডাবগুলোর দাম ও কম নয় একেবারে, প্রতিটি ২৫-৪০ টাকা। তবে ৪০ টাকা ডাবের পানি একা শেষ করা যায় না। সারা বিচ জুড়ে কক্সবাজারের মতো ছাতার দীর্ঘ সাড়ি। ঘণ্টাপ্রতি ভাড়া ৪০ টাকা। কক্সবাজারের রেট। কিছু কিছু বন্ধু ছাতার নিচে শুয়ে শুয়ে সমুদ্র দেখতে লাগলো। আমরা কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করে কটেজ এ চলে আসলাম। সবার মোবাইল এর ব্যাটারি চার্জে লাগানো। সন্ধ্যা পর ছোট ছোট দল বেঁধে আবার বের হলাম। এবার আমি, আজাদ, রকি, সৌরভ, ইমরান আর পলাশ এক দলে। বলে রাখি, সেন্ট মাটিন এ বিদ্যুৎ নেই। তাই রাতে দ্বীপটা জ্বল জ্বল করে, জেনারেটর, চার্জার লাইট আর মোমবাতির মোহময় আলোতে। ছোট একটা টং এর মতো দোকানে বসে সবাই ডালপুরি আর চা খেলাম। আশেপাশে অনেকগুলো শুটকির দোকান। তবে কক্সবাজার থেকেই শুঁটকি কেনা ভাল, দাম ও কিছুটা কম। রাতে ডিনারের পর সবাই নীরব সমুদ্রের কোল ঘেঁষে হাঁটছি। বুঝলাম, সমুদ্রের কেমন যেন একটা টান আছে। এমন সময় সমুদ্রের হঠাৎ গর্জন কেমন যেন হাহাকার আর আর্তনাদের মতো লাগলো। চমকে উঠলাম। সমুদ্রের ও দুঃখ আছে? হয়তো বা আছে । তখন রাত প্রায় ১ টা। ট্রলার এ করে জেলেরা তখন ও জাল ভর্তি মাছ এনে তীরে ফেলছে। কিছু কিছু ট্রলার দ্বীপ থেকে অনেক দূরে, তখন ও ব্যস্ত মাছ ধরায়। হয়ত মনে মনে কত আকুতি,এই নীল দরিয়া থেকে মুক্তির, স্ত্রী- সন্তানদের কাছে পাওয়ার। কিন্তু নীল দরিয়া বন্দী করে রেখেছে তাদের। হাঁটতে হাঁটতে জেটির দিকে এগিয়ে গেলাম। এখানে দিনের বেলা সব জাহাজ এসে থামে, আর রাতে বসে পর্যটকদের আড্ডা। গিয়ে দেখি স্যার- ম্যামসহ ব্যাচের প্রায় সবাই জেটিতে বসে আছেন। উপরে পূর্ণ চন্দ্র আর বিশাল সাগরে তার প্রতিফলিত স্নিগ্ধ আলো...... রাতের সেন্ট মাটিনকে আরও সুন্দর করে দিয়েছে। বসে পরলাম আমরা। গল্প হচ্ছে, জোকস হচ্ছে। আমার দৃষ্টি চাঁদের দিকে। চাঁদ কোন অদৃশ্য শক্তিবলে যেন সমুদ্রকে টানছে। প্রকৃতির মধ্যে কি নিবিড় সাবলীলতা। রাত আড়াইটার দিকে সবাই ফিরে আসলাম কটেজে। পরেরদিন একদম ভোরে উঠেই যে যেদিকে পারল, ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে দ্বীপ দেখতে চলে গেল। আমি, আজাদ আর সৌরভ... তিন বন্ধু তিনটা সাইকেল নিয়ে পুরো দ্বীপ চক্কর দিতে লাগলাম । ঘণ্টা প্রতি ৪০ টাকা ভাড়া। ঘুরতে ঘুরতে বিচ এ আসলাম। এমন সময় বাকি বন্ধুদের ফোন, তাড়াতাড়ি আসো। আমরা হুমায়ূন আহমেদের কটেজ “সমুদ্র বিলাস ” এ যাচ্ছি। সাধারণভাবে এখানে প্রবেশ সংরক্ষিত। তবে হয়তো আমাদের জন্য প্রবেশ সহজ ছিল। হুমায়ূন আহমেদ স্যারের এ কটেজগুলো সবচেয়ে ব্যয়বহুল। এক রাত থাকতে লাগে ৩০০০-৩৫০০ টাকা। সেন্ট মাটিন এ অন্যান্য কটেজের রেট ১২০০-১৫০০ টাকা। সমুদ্র বিলাস থেকে বের হয়ে সবাই লাল সূর্য দেখতে এবং ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সেন্ট মাটিন এর মানুষগুলো অনেক মিশুক। যে কাউকে আপন করে নিতে পারে অল্প সময়ে । তারা অনেক ধার্মিক ও। আমাদের ঘুরাঘুরিতেই ছয়টা মসজিদ চোখে পড়ল। সন্ধ্যা পর কিছু ঘুরাঘুরি করে আবার ডিনার আর জন্য হাজির হলাম। আজ রাতই সেন্ট মাটিন এ শেষ রাত, কাল সকালে আবার কক্সবাজার যাত্রা। রাতে বারবিকিউ পার্টি হল। বন্ধু তারেকের ফানি ওয়াজ মাহফিল হল। তার অয়াজ এ ভিড় লেগে গেছিল । অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা এসেছিল, তারা কাছে এসে দেখতে লাগলো, তারেক সত্যি সত্যি অয়াজ করছে কিনা, নাকি রেকর্ড বাজাচ্ছে। নিশ্চিত হয়ে তার অয়াজ এর মোবাইল রেকর্ড কেউ কেউ নিল। পরের দিন একটু খারাপ লাগলো সবার। যদিও সেন্ট মাটিন এ এসে প্রায় সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম, সবার পেট খারাপ হয়ে গেছিলো, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি হঠাৎ খেয়ে, তবে জীবনের অন্যতম সেরা দুটি রাত কাটিয়েছি এই দ্বীপে। বিচ এ যে যেভাবে পেরেছে, নিজের নামটি বালুতে লেখে এসেছে। হয়তো জোয়ারের টানে মুহূর্তেই নামগুলি মুছে গেছে, কিন্তু স্মৃতির জোয়ার এ সেন্ট মাটিন আমাদের হৃদয় থেকে কখনই মুছে যাবে না। কক্সবাজার এ ফিরে এসে রাতে দলবেঁধে সবাই ছুটল টুকটাক বাজার করতে। কাক্সবাজার এ বাজার করতে সবার পছন্দ- বার্মিজ মার্কেট। কলাতলি থেকে টমটমে ১৫ টাকা করে ভাড়া। বলে রাখি, বার্মিজ মার্কেট গুলোতে শুঁটকি, আচার, নানা ধরণের শো-পিস, কাপড়, ব্যাগ থেকে শুরু করে প্রায় সব কিছু পাওয়া যায়। এসব দোকানের প্রায় সকল দোকানগুলোতে বিক্রেতারা উপজাতি নানা গুষ্টির মেয়েরা। তবে দরদাম এ তারা খুব দক্ষ। শুঁটকি পছন্দ না হলেও কিনতে হল। পরিবারের সবার জন্য টুকটাক কেনাকাটা হল। আচার ও কেনা হল। কাপড় তুলনামূলক সস্তা এখানে, কাপড়ের কোয়ালিটি ও ভাল। আম্মার জন্য একটা চাঁদর কিনেছিলাম। ২৫০ টাকা। এই চাঁদর সিলেট এ ১০০০-১২০০ এর কমে পাওয়া যাবে না। অনেক এ অনেক কিছু কিনল। মেয়েদের অলঙ্কার সম্পর্কে আমার তেমন ধারণা নাই। তবুও বোন আর কাজিনদের জন্য বেশ কয়েক জোড়া ব্রেসলেট কিনলাম। আমার বন্ধুরা ও কিনল। অনেকে সুন্দর সুন্দর ব্যাগ ও কিনল। বার্মিজ মার্কেট থেকে ফিরে রাতে ডিনারের পর দল বেঁধে সবাই গেলাম বিচ এ, আজ ই কক্সবাজার এ শেষ রাত। সমুদ্রকে অশান্ত মনে হল। অস্থির ঢেউগুলোর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বিদায় জানালাম কক্সবাজারকে। জানি হয়ত অনেকের একা একা অনেকবার আসা হবে বান্দরবান, সেন্টমাটিন আর কক্সবাজার এ। কিন্তু জীবনের প্রথম পাহাড় বিলাসে, সমুদ্র বিলাসে স্যার- ম্যাম সহ এতো বন্ধুদের পেলাম, ছোট্ট জীবনের এ যে অনেক বড় একটি পাওনা, অনেক মধুর সে স্মৃতি। বন্ধু মানিকের মা-বাবার সেই আপ্যায়ন ও ভুলার নয়। ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ১২তম ব্যাচের যে সমস্থ বন্ধুরা নানা কারণে ন্যাশনাল স্টাডি ট্যুর এ যেতে পারেনি , তোমরা আসলে কখনো অনুভবই করতে পারবে না, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তোমরা কি মিস করেছো । সাতটা দিন স্বপ্নের মতোই কেটে গেল। স্টাডি ট্যুর শেষে যেদিন সিলেট এসে পৌঁছলাম, সিলেটের তখন নবরূপ। বিশ্বকাপ উপলক্ষে তখন বর্ণিল সাঁজে সেজেছিল প্রানের নগরী সিলেট। সেই সাত দিনের স্টাডি ট্যুর এর পর বাংলাদেশকে কেন জানি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ভালবাসি।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:১৭