শিক্ষা হচ্ছে, পাঁচটি মৌলিক অধিকারের একটি, যদি সেটা হয় সুশিক্ষা। কিন্তু যদি সেটা সুশিক্ষা না হয়???
আরে এসব কী বলি, আমার মাথা-টাথা কোয়ারিন্টিনে থেকে পুরোটাই গেছে। দেখি একটু ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি আবার!
একটু জীবনের শুরুর প্রাথমিক শিক্ষার দিকে নজর দেই। প্রথমেই বলে নিচ্ছিল, শহরের সকল নাগরিক সুবিধাদি প্রাপ্ত মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত যারা আছেন এবং তাদের সন্তানেরা এই পোস্টের উদ্দেশ্য না। আমরা এর একটু বাইরে গিয়ে তাকাবো আজ।
পোস্টের শুরুতে একটা প্রশ্ন করি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যারা সহকারী শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী তাদের কি ধরণের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা লাগে বাংলাদেশে বলে আপনারা মনে করেন?
আমি বলে দিচ্ছি-
পুরুষদের জন্যে স্নাতক আর মহিলাদের জন্যে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণগণ আবেদন করতে পারেন (এবং নিয়োগ পাবেন ও পাচ্ছেন)। কোনও প্রশ্ন আছে, কারো? থাকা উচিত!
একটু আপডেট আছে, এখানে পুরুষ আর মহিলা উভয়ের জন্যে যোগ্যতা স্নাতক করে নতুন বিধিমালা ৩রা এপ্রিল, ২০২০ তারিখে স্বাক্ষরিত হয়েছে। আশা করি পরের বছরে সেটা ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু, তাহলে আগে যারা নিয়োগপ্রাপ্ত, মানে যারা এখন আছেন শিক্ষকতায়, তারা?? তাদের ক্ষেত্রে কি এরকমটা মনে করা হয়েছিল একজন পুরুষ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করলে যতখানি যোগ্য, একজন মহিলা উচ্চ মাধ্যমিক ডিগ্রি অর্জন করেই ততখানি যোগ্য? নাকি এটা ধারণা করা হয়েছিল যে প্রাথমিক শিক্ষা এমন কোনও কিছু না যেখানে শিক্ষাগত যোগ্যতা দরকার হয়?? আমার তো মনে হয়, দ্বিতীয়টাই সঠিক।
কেন প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে এত কথা বলছি? কারণ, প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে একটা বাচ্চার জীবনের পরবর্তী অধ্যায়গুলোর শেইপ আপনি পরিবর্তন করে দিতে পারবেন। আমাদের যারা বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষক আছেন, তাদের দিকে একটু তাকাইঃ
>> ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের তথ্য মতে ২০১৭ সালে টোটাল কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে কেবলমাত্র ৫০.৪৩১% ছিলেন প্রশিক্ষিত আর বাকিরা প্রশিক্ষিত নন।
>> বাংলাদেশে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে ২০০৯ সালে ৫৮.৪০৮% শিক্ষক ছিলেন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত (যেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ)
[আরও একটু তথ্য যোগ করি, দেখতে চেয়েছিলাম যারা বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষক আছেন তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা আসলে কেমন?? দুর্ভাগ্য বলেন আর সৌভাগ্য বলেন, এরকম কোনও তথ্যই নেই!!]
যেহেতু আমাদের বর্তমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ৬৪.৯% মহিলা শিক্ষক, আপনারা প্রথমেই বুঝতে পারছেন, আমরা যেহেতু বিধিমালার মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে কম শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি, সেখানে শিক্ষার মানে তারতম্য থাকবেই।
আবার তাদের মধ্যে অর্ধেককে দেইনি কোনও ধরণের প্রশিক্ষণ।
এই দুইটা বিষয় জানার পরে, কোনোভাবে কি মনে কোনও ধরণের ভয় আসার কথা? বোধহয় না, এইসব এই দেশে ব্যাপার না!!
তাতে গোটা ব্যাপারটা কী দাঁড়াল?? আমরা ইচ্ছা করেই চাচ্ছি (যেহেতু বিধিমালাই এইরকম), আমাদের কোমলমতি বাচ্চাদের জীবনের শুরুতেই মেরুদণ্ডটা ভেঙ্গে দিই, তাহলে আর একটা বড় জনগোষ্ঠী থেকে ভালো কেউ আসবে না। আরে ভাই, সরাসরি বলে দিলেই তো হয়, সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করলে আপনি প্রতারিত হবেন!!
এতক্ষণ তো সমস্যার কথা বললাম, এবার আসুন দেখি কি করা যায়...
আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে এখনো ধারণা যে শিক্ষক হচ্ছে মোটামুটি একটা নিম্ন শ্রেণীর সামাজিক জীব, যে থাকলে আমাদের কিছু উপকার হয়, তবে না থাকলে তেমন কোনও ক্ষতি হবে বলে মনে হয়না!! এই ধারণা যে আমার হয়েছে, তার পেছনে কারণ আছে। কেউ এখনো যদি এমন হয় যে অন্য কোথাও কাজ কর্মে ঠিক সুবিধা করে উঠতে পারছে না, তখন আমরা তাকে এই পরামর্শ দেই যে শিক্ষকতার জন্যে একটা ট্রাই সে করে দেখতে পারে। এর পেছনেও কারণ আছেঃ
১। সরকারি চাকরি (অনেক সুযোগ সুবিধা, শুধু ঘুষটা হয়ত খাওয়া যাবে না!! )
২। ব্যাপকহারে গণদুর্নীতির কারণে, আপনি চাইলেই আপনার পোস্টিং যেখানেই দেয়া হোক, বদলির ব্যবস্থা সহজেই করতে পারবেন (ওহ! ঘুষ শুধু এইখানেই চলবে )
৩। বাচ্চারা অধিকাংশ সময়েই শিক্ষকদের কাছ থেকে কিছুই নিজেরা নিতে পারবে না, তাদেরকে দিতে হবে, আর সেটা করতে হয়না, প্রায় কখনোই।
৪। প্রাথমিক শিক্ষকদের পারফরম্যান্স এর কোনও মূল্যায়ন করা হয়না (মূল্যায়ন বলতে দুইটা বিষয়- প্রথমত তারা আসলে শেখাতে আগ্রহী কিনা আর দ্বিতীয়ত তাদের শেখানোর সামর্থ্য কতখানি)
আরও অনেক কতগুলো কারণ আছে, সেগুলো নিয়ে আর একদিন লিখব। আজ আর ইচ্ছে হচ্ছে না, কারণ, এইসব আবোল-তাবোল চিন্তা করে মাথা ব্যথা হয়ে যাচ্ছে! কিন্তু, প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কি এসব নিয়ে কোনও চিন্তা আছে???
তারাও জাতিকে গণ অশিক্ষিত করে রাখার মাস্টারপ্ল্যানের কোনও অংশ কিনা কে জানে, নাকি এসব আসলে তাদেরই মস্তিষ্কপ্রসূত??
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:০৯