>>সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে ৯৫.৯% আমেরিকার বাসগৃহে কমপক্ষে একটি করে টেলিভিশন সেট আছে।
>>সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে ৯৯.৮% আমেরিকার বাসগৃহে কমপক্ষে একটি করে রেফ্রিজারেটর আছে।
>>সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে ৮৫ % আমেরিকার বাসগৃহে কমপক্ষে একটি করে ব্যক্তিগত গাড়ি আছে।
>>সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে ৯৫.১% জাপানিজ বাসগৃহে কমপক্ষে একটি করে রঙ্গিন টেলিভিশন সেট আছে।
>>সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে ৯৯ % জাপানিজ বাসগৃহে কমপক্ষে একটি করে রেফ্রিজারেটর আছে।
>>সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে ৮৫% জাপানিজ বাসগৃহে কমপক্ষে একটি করে ব্যক্তিগত গাড়ি আছে।
উপরে যা যা বললাম সবই আমেরিকান ঘরবাড়ির আজকের বা আজকের কাছাকাছি সময়ের পরিসংখ্যান। এগুলো দেখে আমাদের কী??
আসলেই তো, আমেরিকা ধনী দেশ, নাগরিকরা সচ্ছল আর শিক্ষিত, জ্ঞানে-গুনে আমাদের তুলনায় তারা অনেকগুণ এগিয়ে।
ওদের কথা বাদ দেই, আসেন তাকাই, জাপানের দিকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের অবস্থা বলছি। সারাদেশে কোনও রকমের অবকাঠামো বলতে তেমন কিছু নেই, উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে, জনগণের খাদ্যের জোগান দিতে তারা হিমশিম খাচ্ছে, দুনিয়াতে তাদের ইমেজ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে! এমন অবস্থায় পড়লে আজকে আপনি আমি কী করতাম? নিশ্চয়ই আপনি বলবেন, কেন আমরা তো স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে এরকম বা এর থেকেও বেশি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করে এসেছি!!
আপনার কথা ১০০ ভাগ সত্যি, আমি বলব ১০০ ভাগের ও বেশি সত্যি!! (এবং এটাই সত্যি)।
আমরা চ্যালেঞ্জ জয় করেছি, কিন্তু এরপরে কি করেছি আর জাপান কি করেছে? সেটাই কয়েকটা কথায় জানাচ্ছি।
যখন জাপানের নেতারা দেখলেন যেহেতু এখন মানুষ জানে জাপানের উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে, জনগণের আমাদের উপরে আস্থা আসতে সময় লাগবে। আমরা বাইরে থেকে পণ্য আমদানি করব আবার আমাদের দেশেও তৈরি করব, তবে আমাদের তৈরি পণ্যের গায়েও লেখা থাকবে “মেইড ইন জার্মানি” বা “মেইড ইন ব্রিটেন”। এইভাবে কয়েক বছর কেটে যাওয়ার পরে নেতারা সিদ্ধান্ত নিলেন, এখন সময় হয়েছে, সবাইকে জানানোর। তারপরে তারা একযোগে ঘোষণা দিলেন, আগের সকল পণ্যের মধ্যে জাপানে তৈরিকৃত পণ্যও ছিল। এবং গুণে ও মানে তারা আর জার্মানি বা ব্রিটেন থেকে পিছিয়ে নেই। এবং এখন থেকে তাদের আর বাইরে থেকে পণ্য আমদানি দরকার হবে না, দেশের প্রয়োজন দেশেই মেটানোর সক্ষমতা তারা অর্জন করেছেন।
এই কথা শুধু জাপান নয়, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে।
এখন আমার একটা বিষয় জানার আছে... আমাদের দেশের কোনও নেতার মাঝে কি একবার ও মনে হয়নি যে, একটা দেশের মাথা তুলে দাঁড়ানোর জন্যে একটা না একটা জেনারশনকে কিছুটা ছাড় দিতে হয়েছে। যেহেতু আজ পর্যন্ত কারো এই বিষয়টা মাথায় আসেনি (আমি ধরে নিচ্ছি, কারণ, নিজের চোখে তেমন কিছু দেখতে পাইনি তাই!!) তাই কে বা কারা হতে যাচ্ছে সেই জেনারেশন আমাদের দেশে?
আমার মাথায় এই চিন্তা এসেছে এইভাবে, আজ যুক্তরাষ্ট্রে বা জাপানে যখন একটা শিশু জন্মায় সে দেখে তার ঘরে কিছু জিনিস আছে যেগুলো হচ্ছে কমন (যেমন টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গাড়ি)।
আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী অধিকাংশ লোকের ঘরে এই জিনিস কোনও শিশুই প্রায় দেখে না (এখন টেলিভিশন সেটের সংখ্যা বেড়েছে,[ >>সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে ৪৬% বাংলাদেশি বাসগৃহে কমপক্ষে একটি করে টেলিভিশন সেট আছে। কিন্তু পরের দুইটার সঠিক কোনও তথ্য আমি পাইনি ]। তাদের জীবনের অর্ধেকের বেশি কেটে যায়, কিছু স্বপ্নের পেছনে, যে সকল বেসিক জিনিসগুলো নিয়েই তার জন্মানো উচিত ছিল। কিন্তু, স্বাধীনতার পরে এই প্রায় পঞ্চাশ বছরেও আমাদের সেই সৌভাগ্য হয়নি!!
তাই, আমার একটাই প্রশ্ন “আমরা কী হতে পারি সেই জেনারেশন, যারা তাদের চিন্তায়, শ্রমে আর নিষ্ঠায় পরবর্তীদের জন্যে খুব উন্নত কিছু না পারলেও কিছু বেসিক জিনিস রেখে যেতে পারব???
আজকে আর কোনও জোকস নয়, কারণ আগামীবছর আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করতে যাচ্ছি, আর আমাদের বর্তমান অবস্থা এইরকম, এটাই সবচেয়ে বড় জোকস!!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৫৫