ভাবছি এরপর থেকে মসজিদ, মাদ্রাসা কিংবা লিল্লাহ বোর্ডিং এ চামড়া না দিয়ে সরাসরি ট্যানারি মালিক বা এপ্যাক্স, বাটা কোম্পানীকে দিয়ে দিব। কারন এই শুয়োরদের নাকি খুব দুর্দিন চলছে, একজোড়া চটি স্যান্ডেল ৩০০০ টাকা বেচেও নাকি ওদের বউ বাচ্চারা খাবার পাচ্ছে না। গত কয়েক বছর ধরে ঈদ আসলেই মানুষ রুপি এই খচ্চর গুলি ব্যাবসায় মন্দার কথা বলে গরিবের হক মেরে খাচ্চে,মৌসুমী ব্যাবসায়ী গরিব, বেকার ছেলেগুলিকে পথ এ বসিয়ে দিচ্ছে। অথচ এই 'মন্দা জুতা' ব্যাবসায় অরিওন, গ্লোব, ক্রিসেন্ট সহ নতুন নতুন কোম্পানি আসছে। জুতা কিনতে যেখানে ক্রেডিট কার্ডের EMI করতে হচ্ছে, সেখানে ওরা চামড়ার দাম কমাইতে কমাইতে এখন রীতিমত ফ্রিতে নেয়ার ধান্দায় আছে।
প্রত্যেক ঈদে এই শয়তান গুলি 'আন্তর্জাতিক' বাজার এর দোহাই দেয়। ওদের কথায় মনে হয় পৃথিবিতে মানুষ জুতা পরা ছেড়ে দিয়ে , খালি পায়ে হাটা শুরু করছে, অথবা পৃথিবির জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে দিন কে দিন, তাই ওদের ভাত জুটছে না এখন। আসল কথা হল এরা কুরবানির সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে একরকম কাচামালের খরচ ছাড়া ব্যবসা করছিল। হাজারিবাগ থেকে ২৪ বছরেও টানারি না সরিয়ে কোনরকম ফ্যাক্টরি কমপ্লায়েনস ছাড়া দিনের পর দিন গরিবের হক লুটে উনাদের যে অভ্যাস তৈরি হয়েছিল, এখন আদালতের লাথি আর সরকারের বাড়ি খেয়ে গত বছর সাভারে ট্যানারি স্থাপনের খরচাটাও নিজের পকেট থেকে করতে চাচ্ছে না। চামড়ার দাম কমিয়ে ইন্ডাইরেক্টলি পাবলিকের কাছ থেকে, বা আরো নিদিস্ট করে বললে গরিবের হক মেরেই সেটা করবে বলে গো ধরেছে।
আর আমাদের প্রবল পরাক্রমশালী সরকারও এক রহস্যময় নিরাবতা পালন করছে। আমার কথা, সরকার যদি সত্যিই মনে করে জুতা বেচে ট্যানারি মালিকরা তাদের বউ বাচ্চার ভাত কাপড় দিতে পারছে না। তাহলে সামনের বছর থেকে 'চামড়ার দাম' নির্ধারণ নাটক না করে,যাকাত বোর্ডের মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন জারি করুক যে 'এখন থেকে আপনার কুরবানীর চামড়া ট্যানারি মালিকদেরকে জাকাত/সাদকা হিসাবে দান করুন'! এতে করে অন্তত প্রন্তিক/ মৌসুমী চামড়া ব্যাবসায়ী গরিব বেকার ছেলেগুলি পথে বসবে না।আর ঈদের সময় আমরা এমনিতেই গরিবদের সাহায্য করি,তাই নাম মাত্র চামড়ার টাকা ছাড়াই না হ য় পকেট থেকে আর হাজার খানেক টাকা বেশি দিলাম।
তবে আমার মনে হয়, এদের এই গরিবের হক মারা ব্যাবসার বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ হওয়া উচিত। সেটা হতে পারে অহিংস উপায়েই, যেমন ধরুন -
১। সামনের ঈদে নাম মাত্র মুল্যে বিক্রি না করে, আপনার কোরবানির পশুর চামড়া মাটিতে পুতে ফেলুন ।
২। সম্মিলিতভাবে চামড়া নিয়ে গিয়ে ওদের ট্যানারি বা করপরে্ট অফিসের সামনে ফেলে আসুন। চিরকুটে লিখে আসুন ' চামরা শিল্পের দুর্দিনে সমব্যথি হিসাবে ফ্রি দিয়ে গেলাম'।
৩। কিংবা সবার ফেসবুক ওয়ালে প্রতিবাদ মুলক স্ট্যাটাস - 'আপনার চামড়া লিল্লাহ বোর্ডিং এ না দিয়ে ট্যানারি মালিকদের দান করুন'।
কিন্তু চোখের সামনে এভাবে গরিবের হক নস্ট করলে আমরা নিজেরাও এর দায় এরাতে পারবো না।
তাই আসুন আমরা আরও মানবিক হই, কুরবানীর চামড়া গরিবদের না দিয়ে, মিসকিন ট্যানারি মালিকদের সাদকা হিসাবে দিয়ে দেই। যাতে ওরা বউ বাচ্চা নিয়ে খেয়ে পরে বাচতে পারে।আর তাতে যদি ওদের এই গরিব ঠকানো 'চামড়া বানিজ্য' বন্ধ হয় এবং কিছু মানুষের হাহাকার ঠেকানো যায়, তাই বা কম কিসে!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:২৭