বল্গার চাদগাজী সাহেবের আমেরিকান প্রাইমারী নিয়ে দেয়া একটি পোস্টের কমেন্ট করতে গিয়ে ভাবলাম এ বিষয়ে একটি পোস্টই দিয়ে ফেলি। আর সেই ভাবনা থেকেই আদার ব্যাপারী হয়ে জাহাজের খবর নেয়ার মত ,মার্কিন মুলুকের নির্বাচন নিয়ে আমার মত যদুমদুর এই পোস্ট প্রসব।
যাই হোক, কিছু বিশেষ কারনে বা আকাংখা থেকে বাংলাদেশের মানুষের একটা বিরাট অংশ মনে প্রানে চান বা বিশ্বাস করেন, হিলারী এবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবে। তবে আমার মনে হয় ২০০৮ মতো হিলারী ডেমোদের প্রার্থী বাছাইতে টিকবেন না শেষ পর্যন্ত।তাছাড়া হিলারী তো পরের কথা এবার ডেমোদের কোন প্রাথীই সুযোগ পাবে কিনা সন্দেহ আছে।তার কারন গত ৮ বছরে ওবামার রক্ষনশীল নীতি ২০০৮ এর বিশ্বমন্দা কাটিয়ে মার্কিন অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতা দিলেও ,বিশ্বব্যাপি মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তা ঝুকি বেড়েছে। তাছাড়া রাশিয়ার উত্থানে বিশ্বে মার্কিন আধিপত্য হুমকির মুখে পড়েছে।
তাই এবার মার্কিন নাগরিকদের ভাবনায় একজন শক্তিশালী 'ডানপন্থি আমেরিকান' ই প্রেসিডেন্ট হিসাবে স্থান পাবে বলে আমার ধারনা। কারন পুতিন এবং রাশিয়ার উত্থান মার্কিন আধিপত্য ও বিশ্বব্যাপি তাদের ব্যাবসা বিনিয়োগের সুযোগকে সংকুচিত করে দিচ্ছে ক্রমাগত। তাই দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্তিতিশীলতার স্বার্থেই আমেরিকানরা চাইবে তাদের আধিপত্য বজায় থাকুক।আপনার মনে হতে পারে এই আধিপত্য না থাকলে কি ক্ষতি হবে। উদাহারন এই বাংলাদেশ থেকেই দেয়া যায়, খেয়াল করে দেখুন ৯০ এর দশক থেকে ২০১০ পর্যন্ত বাংলাদেশের তেল,গ্যাস সহ পুরো জ্বালানিখাতটাই ছিল আমরিকান তেল কোম্পানির দখলে। অথচ ২০১২ থেকে এখন পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র সহ বিভিন্ন সেক্টরে রাশিয়ান কোম্পানি গুলো সুযোগ পাচ্ছে। অনেকে বলতে পারেন , এগুলো শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সিধান্তে হয়েছে। হয়তো সেটা কিছুটা সত্যি, কিন্তু শেখ হাসিনা বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতা আমলে নিয়েই এই সিধান্ত নিয়েছেন। মানে ধরুন যদি মার্কিন প্রভাব যদি ৯০ দশকের মত থাকতো তাহলে হয়তো তিনি এই পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র আমেরিকান কোম্পানিকে দিতে বাধ্য হতেন।
এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়া ও আই এস ইস্যুতে ওবামার পদক্ষেপ বিশ্ব রাজনীতি ও সামরিক ইসুতে আমেরিকার স্বক্ষমতাকে দুর্বল ও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যার ফলে আমেরিকা তার মিত্রদের কে ধরে রাখতে চ্যালেন্জের মুখে পরবে অচিরেই। মোট কথা আমেরিকানদের এবারকার একটা বড় ইসু হল বিশ্বব্যাপি তাদের 'ভিভিআইপি প্রিভিলেজ' ধরে রাখা। আর এজন্য তাদের দরকার একজন 'কট্টর প্রেসিডেন্ট' যিনি রশিয়ার উত্থান ঠেকাবেন। আর সেই দিক দিয়ে আমার আপনার ঘৃনার পাত্র ট্রাম্প যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন , তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু নাই। তবে আমি হলপ করে বলতে পারি, এই ট্রাম্প যদি সত্যি প্রেসিডেন্ট হয়েও যান তবে তিনি মুসলামানদের যুক্তরাস্ট্রে প্রবেশের ব্যাপারে যেটা বলেছেন , সেটা উনি বাস্তবায়ন করতে পরাবেন না কোন ভাবেই, কারন বৈশ্বিক বাস্টবতায় সেটা করার কোন সুযোগ নেই। আসলে ওটা ছিল 'স্বস্তা জনপ্রিয়তা' অর্জনের চটকদার কৌশোল যা রাজনীতি বিদরা সবসময় করে থাকেন।এবং এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে ওনার ঐ কৌশল বেশ ভালই কাজ করছে।
তবে বাংলাদশে যারা হিলারীর জন্য মুখিয়ে আছেন, তাদের জন্য তেমন আশা নেই এমনিতেই উপরে উল্লেখিত কারনে। তারপেরও আরো একটা বিষয় হল, মুখে যতই 'জেন্ডার ইকুয়ালিটি' বলে ফেনা তুলুক বাস্তবে আমেরিকানরা কোন নারীকে 'প্রেসিডেন্ট' হিসাবে নেয়ার মত উদার মানসিকতায় আসে নাই। তারা এখন পর্যন্ত 'মি: প্রেসিডেন্ট' বলেই অভস্থ 'মিসেস প্রেসিডেন্ট' এর কথা ওরা এখনও ভাবেনা সেটা ২০০৮ এই প্রমানিত , কারন আমার হিসাবে ২০০৮ ই ছিল হিলারীর সবচেয়ে ভাল সুযোগ। কারন যুদ্ধবাজ রিপাবলিকান বুশের পর একজন ডেমো নারী হিসাবে হিলারি হয়তো বেস্ট চয়েস ছিল ঐ সময় , বাট আমেরিকানরা এক অখ্যাত আফ্রিকানকে প্রেসিডেন্ট বানাইছে , তারপরেও একজন সাবেক ফার্স্ট লেডি যিনি প্রশাসনের খুব কাছে ছিলেন, রাজনীতিতে পরিচিত তাকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে গ্রহন করতে পারে নাই।এবারও হিলারীকে হটিয়ে স্যান্ডির আবির্ভাব সেই একই ঘটনার জানান দিচ্ছে।তবে দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি ঘটে। তবে যেই প্রেসিডেন্ট হোক আমাদের মত দেশের প্রতি ওদের দৃস্টিভংগীতে তেমন কোন হেরফের হবে না।ওরা সবসময় চাইবে এদেশে আধিপত্য বজায় রাখতে, আর আমাদের 'দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদরাও' সেই সুযোগ দিতে মুখিয়ে আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৯