এদের অনেকের সরাসরি কোন একটি বিশেস কোন দল বা মতাদর্শকে ধারন বা সমর্থন করে কথা বলেন যেমন, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ ,প্রয়াত পিয়াস করিম কিংবা আরাফাত বা শম রেজাউল ইত্যাদি। তবে এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার কিছুটা নিরপেক্ষতার ভান ধরে উভয় পক্ষের মুন্ডুপাত করেন, এবং উচ্চ মর্গীয় রাজনিতীর কথা বলেন।হানাহানির রাজনিতীর বিপরীতে স হ অবস্থানের কথা বলায় উনারা নিজেদের সুশীল হিসাবে ভাবতে ও উপস্থাপন করতে চেস্টা করেন। সত্যি বলতে কিছুটা সফল হয়েছিলেনও বটে, মানুষ এদের কে নিরীহ সুশীল ভাবতে শুরুও করেছিল। এদের অন্যতম একজন ছিলেন মাহামুদর রহমান মান্না, যিনি জাসদ, বাসদ হয়ে আওয়ামী লিগে এসেছিলেন এবং সেখান থেকে পরিত্যক্ত হয়ে সুশীল বনে যান। শুরু করেন এটিএন বাংলায় টক শো পরিচালনা এবং বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় কলাম লিখা।
এরপর অতীত রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে যখন কিছুটা সুশীল ইমেজ ও পরিচয় তৈরি হল , তখন তিনি গঠন করলেন 'নাগরিক ঐক্য' নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন যেটার মুল স্পিরিট ছিল হানাহানির রাজনীতির বিপরিতে একটি উচ্চমর্গীয় সুশীল রাজনৈতিক প্রচেস্টা। সচেতন মানুষের অনেকেই আশা করেছিলেন এরা হয়ত রাজনীতিতে সফল না হলেও একটা গুনগত পরিবর্তনের সুচনা করতে পারবেন।
মান্না সাহেবও ঢাকা সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে, তার মিশনে ততপর ছিলেন।এতক্ষন যা বললাম সেটা ছিল পুরো বিষয়টার একটা ব্যাকগ্রউন্ড যা আপাত দৃস্টিতে খুব স্বাভাবিক ঘটনাপ্রবাহ । কিন্তু গতপরশু মান্না সাহেবের অডিও শোনার পর আমার মনে কতগুলি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে -
ক।মান্না সাহেবের মত সুশীলরা তো হানাহানির রাজনীতির নিন্দা করেন। হরতাল অবরোধের রাজনিতীর বিপরীতে ,উনারা তো শান্তির কথা বলেন টকশো তে।রাতের বেলায় বিএনপি আওয়ামীলিগের পিন্ডি উদ্ধার করেন দেশে হানাহানির জন্য। তাহলে উনি খোকা সাহেব কে হরতাল অবোরধ কন্টিনিউ করতে উতসাহ দিলেন কিজন্য ? উনারা দিনের বেলায় শান্তির জন্য মিছিল করবেন আর রাতে সহিংস আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলবেন এটা কোন ধরনের ভন্ডামি ?
খ। মান্নাদের মত সুশীলরা টকশোতে শিক্ষা প্রতিস্ঠানে ছাত্র রাজনীতির নামে সন্ত্রাস , সহিংসতার বিপরীতে শিক্ষার পরিবেশ নিস্চিত করতে বিএনপি আওয়ামি লীগকে নসিহত করেন। সেই মান্না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হল দখলের পরামর্শ দিচ্ছেন এটা কোন ধরনের সুশীলতা?
গ।টকশোতে মান্নারা গলা ফাটিয়ে দুই দলের মুন্ডুপাত করে বলে, এদের দেশের প্রতি কোন মায়া নেই , মানুষের প্রতি কোন দায়ব্ধতা নেই শুধু বোঝে ক্ষমতা।সেই সুশীল মান্না কিভাবে বলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা করে দুই চারটা মারা গেলে ক্ষতি নাই। বিএনপি নেতা খোকা, ছা্ত্রদের পরিনতির বিষয়ে যেখানে কিছুটা ইতস্তত করছেন ,সেখানে জনদরদী সুশিল হয়ে মান্না কিভাবে ছা্ত্র হত্যার ইন্দন দিচ্ছেন ?
ঙ।রাতের বেলায় মান্নারা দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থার অধপতন, সেশন জট নিয়ে কথা বলে আকাশ বাতাস ভারি করে ফেলেন, অথচ উনি খোকাকে পরামর্শ দিচ্ছেন যেভাবেই হোক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করতে হবে। হায় খোদা এর নাম সুশীলতা !
গ।টকশোতে মান্নারা দেশের যাবতীয় অশান্তির জন্য দুই নেত্রিকে দায়ী করেন। অথচ নিজেই খোকা কে পরামর্শ দিচ্ছেন তারা যেন কিছুতেই হরতাল তুলে না নেন।কতবড় হিপোক্রেট ভাবা যায়?
ঘ। মান্নাদের রাজনৈতিক মিশন ছিল দুই দলের বাইরে তৃতীয় রাজনৈতিক ধারা তৈরি করা। কিন্তু ফোনে তিনি খোকাকে লোক সাপ্লাইয়ের জন্য অনুরোধ করেছেন।বি টিমের সা্পোর্টে আর একটা টিম হলে ,সেটাকে কি বি টিমের এক্সটেনশন ছাড়া অ্ন্য কি বলা যায় ?
চ।মান্নারা গনতন্তের জন্য আহাজারি করে আকাশ বাতাস ভারি করে ফেলেন, কিন্তু ফোন আলাপে স্পস্ট ,এরা আকুলতায় থাকেন ,কোন ফকরুদ্দিন মইনউদ্দিনের সাথে সাক্ষাতে ।ধিক ওদের এই বহুরুপি চরিত্রকে।
সবশেষে একটাই উপল্বধি , নস্ট রাজনীতির উপর বিশ্বাস আস্থা মানুষের উঠে গেছে প্রায়। কিন্তু রাতের টকশো তে সুশীল পরিচয়ধারী ভন্ডরা, এই নস্ট রাজনীতিবিদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। বরং মনন ও বিশ্বাসে এরা বিএনপি আওয়ামীলগের চেয়ে ভয়ংকর স্বারথপর, সেটা মান্না আর খোকার আলাপে সপ্সট , কারন খোকা যেখানে কর্মিদের অসুবিধা, ছাত্রদের জিবন নিয়ে ভাবছেন সেখানে এই নিরীহ সুশীলের ভেক ধরা ভন্ডটা সহিংস আন্দোলনের উতসাহ দিচ্ছে।
আসলে এরা কাক কিন্তু ময়ুর সাজার চেস্টা করেছে মা্ত্র। এরা সুযোগের অভাবে সুশীল , কিন্তু সুয়োগ পেলে হয়তো এরা বিএনপি আওয়ামী লিগের চেয়ে বেশী নৈরাজ্য করতে দ্বিধা করত না।
এখন আমার কাছে কেন জানি মনে হয়, শেখ হাছিনা বা খালেদা জিয়া হয়তো এতটা দায়িত্হীন না, কিংবা বিএনপি আওয়ামীলিগের নেতারা বা তাদের রাজনীতি হয়তও এতটা সংঘাতময় হতনা, যদি না তাদের আশেপাশে মান্নার মত সুযোগ সন্ধানী সুশীলদের উস্কানি, কুপরামর্শ না থাকতো।
তাই এসব ভন্ড সুশিলদের কুপরামর্শমুক্ত হোক আমাদের রাজনীতি। দেশে শান্তি ফিরে আসুক রাজনীতিবিদের সুমতিতে, সেটাই আমরা প্রত্যশা করি।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:২০