সবারই মাঝে মাঝে হিংসে হয়; অনেক কিছুই হিংসে হয়।
কিন্তু আমার যে জিনিসটা নিয়ে হিংসে হচ্ছে; লোককে বললে লোকে বলবে পাগল

গত ভোরে স্বপ্ন দেখেছিলাম "সেলিনা হোসেনের" কোলে মাথা রেখে গল্প শুনছি।
সপ্নে তিনি আমার মা ছিলেন নাকি নানী; মনে নেই। পরম মমতায় মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে গল্প শোনাচ্ছেন; আদরে ঘুমানো অবস্থাতেই চোখে ঘুম ঝড়ে পড়ছিল যেন টুপ টুপ করে।
আমি সত্য সত্যি সেলিনা হোসেনের ছেলে-মেয়ে এবং নাতি-নাতনীদের হিংসা করি; খুব খুব খুব হিংসা। কেন তিনি আমার নানী বা আম্মু হলেন না; চিন্তা করলেই কষ্ট হয়। বুক ফাটা কষ্ট

সেলিনা হোসেনের বই খুব বেশী পড়া হয়নি আমার; কিন্তু যে কয়টা পড়েছি, পড়ার সময় মনে হচ্ছিলো যেন আম্মু বা নানী আমাকে গল্প শোনাচ্ছেন।
কি মমতা! কি মমতা!!
না জানি সেলিনা হোসেনের ছেলে-মেয়ে-নাতি-পুতিরা কত্ত ভাগ্যবান।
সেলিনা হোসেনের মতন মা-নানী সবার হয়না; আর সেলিনা হোসেনও ঘরে ঘরে জন্ম নেন না।
আমি সেলিনা হোসেনের ছেলে-নাতি হলে কোনোদিন অন্য কারো বই পড়তাম না।
সেলিনা হোসেনের কোলে শুয়ে থাকতাম; আর তিনি পড়ে পড়ে শুনাতেন তার লেখা।
সবার আগে আমাকে; বই আকারে ছাপা হবার বহু আগেই।
ভাবতেই কেমন যেন লাগে; চিনচিনে একটা কষ্ট অনুভূতি হয় হৃদয়ের কোনে।
তার এত্ত এত্ত বই হয়তো এই জনমে পড়ে শেষ করতে পারবো না; পরজনম বলে যদি কিছু থাকে; তবে সেখানে তার কথা মনে থাকবে কিনা জানিনা। পরজন্ম যদি আসলেই থাকে তবে আমি সেলিনা হোসেনের নাতি-ছেলে হয়ে একটিবার মাত্র জন্মাতে চাই।
তবে যদি পরজন্ম না থাকে; বরং স্বর্গ-নরক-পাতাল-দোজগ বলে কিছু থাকে; তবে যেখানেই ঠাই হোক না কেন, সে রাজ্যের মালিকের কাছে আমার একটাই অনুরোধ রবে, হুর পরী সারাব গেলমান আমার কিছু চাইনা, আমাকে তুমি সেলিনা হোসেনের বই গুলো পড়তে দিও।
যেহেতু অনন্তকাল সেখানে থাকতে হবে; তাই সেগুলো শেষ হলে অন্যদের বইগুলো দিও।
ইহকালে সেগুলো কিনতে বা পড়তে পারিনি; পরলোকের যদি না পড়তে পারি, তবে এর চাইতে বরং মানুষ হয়ে না জন্মানোই ভালো ছিল আমার

মানুষ হয়ে না জন্মে এর চাইতে আমি বরং সেলিনা হোসেনের চশমা কিংবা কলম হতাম। তার চোখের বা হাতের সাথে নেচে-দুলে তার সমগ্র লেখার প্রথম এবং একনিষ্ঠ পাঠক হতাম।