দুটো জিনিস মানুষ কখনও লুকাতে পারে না । নেশার মত নেশা করলে আর প্রেমের মত প্রেম করলে । সৈকতের ক্ষেত্রে দ্বিতীয়টি ঘটেছে । সে ঢাকার প্রেমে পরেছে । ঢাকার বেশীর ভাগ নাগরিকের ঢাকা আদি নিবাস না হওয়ায় এই শহরকে কেউ ভালবাসে নি । সবাই বারবনিতার মত ঢাকাকে ব্যবহার করেছে কিন্তু বুকে টেনে নেই নি ভালবেসে । সন্ধ্যে বেলার ঢাকার অলিগলি-রাস্তাগুলো ভরে যায় তারুন্যের জোয়ারে । অসংখ্য স্বপ্নদীপ্ত চোখ ঘুরাফেরা করে আশেপাশেই । ভালোই লাগে সৈকতের । আজ বৃহস্পতিবার রাত । , খুব গুরুত্বপুর্ণ আড্ডার সময় এখন বন্ধুদের মাঝে । কত স্বপ্ন যে উঠে আশে পাড়ার মোড়ের চায়ের আড্ডাগুলোতে । অসংখ্য তরুনের মধ্যে অগুনিত মতবাদ প্রকাশিত হয় । কখনও কখনও এখানেই ঘটে যায় ইউরোপের বিপ্লব কিংবা সমাজতন্ত্রের “লবন পরীক্ষা” । এদের মধ্যে উম্মোচিত হয় দেশের জন্য ভাবনা , উদ্দীপনা আর কিছু একটা করে ফেলার তীব্র আকাঙ্ক্ষা । বৃহস্পতিবার মুঠোফোন বারবার বেজে উঠবে বন্ধুদের কলে । সব বন্ধুরা ভেবে মরে । রাস্তা অনেক কিন্তু সঠিক রাস্তা কোনটা । পাওয়া যাবে কি নতুন কোন পথের সন্ধান । আলোর পথ , শান্তির পথ কি সুদূর পরাহত ।
এখন পর্যন্ত মিশন , ভিশন ঠিক হলো না জাতিটার । কোথায় যেন পরেছিলাম স্বাধীনতা অর্জনের অযোগ্যতার মাঝেও আমরা পেয়েছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন আমাদের স্বাধীনতা । যুদ্ধে হারাতে হয়েছে অনেক কিছুর মধ্যে আমাদের বুদ্ধিজীবি সুর্য সন্তানদের । হঠাত স্বাধীনতা পেয়েও আমরা পারি নি এতো বছরেও নিজেদের পরিকল্পনাগুলো গুছিয়ে নিতে । আমাদের পরে স্বাধীনতা অর্জন করে অনেক জাতি আমাদের থেকে অনেক উন্নত জীবন অতিবাহিত করছে । তরুনরা অনেক ইতিবাচক চাই যোগ্য নেতৃত্ব । যখন মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ায় গোটা দেশব্যাপী তৈরী করছিলেন বিশাল বিশাল রাস্তা , এয়ারপোর্ট আর সমুদ্রবন্দর তখন থেকে আজও আমরা সেই একই রাজনৈতিক সমস্যায় পরে আছি । গনতন্ত্র কে গ্রহন করার যোগ্যতাও রাখি না আবার ত্যাগ করার ক্ষমতাও নেই ।
কোথায় যেন বারবার খেই হারায় ফেলি জাতীয় জীবনে আমরা । কিসের যেন না পাওয়া আর অতৃপ্তি তাড়া করে আমাদের । দেশকে আমরা মৃন্ময়ী ভাবতেই বেশী পছন্দ করি । দেশ কে পূজা করি । দেশের কাছে অনেক চাওয়া আমাদের । অনেক আশায় আমরা দেশের পানে হাত পেতে বসে রই আর ভাবি কই দেশতো কিছুই দিচ্ছে না কিন্তু এই আমাদের নিয়েই যে আমাদের দেশ এটা বুঝতে চাই না । আমি চুরি করি মানে দেশ চুরি করে । আমি অন্যায় করি মানে দেশ অন্যায় করে । আমি একা সুখে থাকা মানে কিন্তু দেশ সুখে থাকা নয় । দেশের ব্যাপারে আমাদের ছাড় দেওয়ার প্রবণতা একেবারে শুন্য । ভারতে দেখেছি দেশের ব্যাপারে কেউ খারাপ কিছু বললে তাঁরা ছেড়ে কথা বলে না । সব কিছুর উপর তাদের দেশ । তাই গনতন্ত্রকে তাঁরা ধারন করতে পেরেছে সফল ভাবে ।
সৈকত ভেবেই পায় না আজ তরুনরা যদি দেশের এই অপ সিস্টেম কে ক্লেইম করে সারাক্ষন , রাজনীতিকে ঘৃনা করে আর দেশমাতৃকা কে তুলে দেই দুষ্টদের হাতে প্রতিবার তবে সে প্রতিবাদ , প্রতিরোধ না করার অপরাধে সেই তরুনও সমান অপরাধী । আদর্শের , দর্শনের ও কর্মের সঠিক ব্যাখ্যা পেলো না যে যুবক সে কি ভেবেছে তার পূর্বপুরুষের কথা । সে তার এক হাজার বছরের গৌরবের ইতিহাসকে নাকি যে নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে সেটাই দেখে দেখে অভ্যস্থ হওয়ার রোগে পেয়েছে তরুনদের ।
গোড়ায় গলদ হচ্ছে নাকি ?? সৈকত ভেবে পায় না আর দশজনের মত । ভাল একটা অক্ষরজ্ঞানের বই নেই আমাদের এই শিক্ষা ব্যবস্থায় । “অ” তে অজগর । “অজগর টি ঐ আসছে তেড়ে” । অজগর তেড়ে আসার ভয় নিয়েই শুরু হয় আমাদের শিক্ষা নামের আলোর পথের যাত্রা । বৈজ্ঞানিক ও আধুনিক একটা আদর্শলিপি তৈরী করাটাই এখন মূল কাজ হয়ে দাড়িয়েছে । পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে যেমনে রাজনৈতিক নোংরামী এই জাতি করেছে তাতে এই আশায় গুড়ে বালি । কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ইতিহাস অতিপুরোনো । আমরা অনেক আগে থেকেই শিক্ষাগ্রহন প্রচলিত রেখেছি আমাদের সামাজিক ব্যবস্থায় । শতশত বছর আগেও এই দেশে শিক্ষার জন্য মানুষ দূর দূরান্ত যেত । গুরুগৃহ তে চলত পাঠদান । এখন দুনিয়া যেটাকে বিশ্ববিদ্যালয় বলছে তার ইতিহাস অনেক আগের আমাদের রয়েছে । পশ্চিমারা যেই ব্যাচেলর ডিগ্রির কথা বলে তার বাংলা মানে হলো স্নাতক । কেউ কি জানে এই স্নাতক মানে কি ??
শতশত বছর আগে দীর্ঘদিন শিস্য গুরুগৃহে যখন বিশ্ব, ভুগোল, বিজ্ঞান , কলা সম্পর্কে সম্মক জ্ঞান লাভ করতো তখন গুরু তাকে নদী থেকে স্নান বা গোসল করে আসতে বলতেন । সেই স্নান সম্পন্ন করা শিস্য কে বলা হতো স্নাতক । সেই কালের স্নাতক আর আজকের স্নাতকে বড় তফাৎ । ওই যে অজগর তেড়ে আশার দরুন পলায়ন প্রবৃত্তি কাজ করে শিক্ষার্থিদের মাঝে ।
এরকম অসংখ্য ছোটখাট সমস্যা কে এইসব পাড়া মহল্লার আড্ডাতেই আলোচিত হতে দেখে ভাবে জোয়ার একদিন আসবে । আর দাবিয়ে রাখা যাবে না ছাই চাঁপা আগুন । পরক্ষনই অপশক্তিদের পেশীশক্তি, আর্থিক বলের কাছে হেরে যেতে দেখে অপতিরোধ্য যৌবনকে । ঢাকার ছাত্র-চাকরীজীবিদের মেস গুলো যেন এক একটা বোমা’র মত । কত স্বপ্নবাজ, সৃষ্টিশীল , কর্মঠ কিছু কর্মী এই মাটির জন্য কাজ করে যাছে অনেকেই জানে না ।