ত্রিপলী,
আজও তোমাকে তুমি বলেই, সম্বোধন করলাম। ক্ষমা করো।
গত কয়েক দিন তুমি ভালো নেই। বিশেষ করে কাল থেকে। অথচ একটু ভালো থাকা, একটু শান্তিতে থাকার জন্য তুমি, আমি সবারই কতনা নিরন্তর প্রচেষ্টা ! ক’দিন আগেও যারা ভালো ছিলোনা, শান্তিতে ছিলোনা আজ তারা কত সুখী, কত আনন্দ তাদের জীবনে ! এটাতো আমারও হতে পারতো ! অন্যের সুখ দেখে আমাদের কত না ভাবনা।
আচ্ছা ত্রিপলী একবার ভাবতো, নিতান্তই ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয়ই হোক পৃথিবীতে যত ভালো মানুষগুলো আছে, যত ভালো মনগুলো আছে, যত ভালো চিন্তাগুলো আছে, ভালো কাজগুলো আছে, ভালোসব প্রাপ্তিগুলো, সুখগুলো, আনন্দ, বেদনা, ভালো যা কিছু আছে তার কোন একটিও কি একদিন দুই দিনে হয়েছে ? হঠাৎ কোন একটা আলোড়ন, বড় কোন একটা ধাক্কা, ঝড় ব্যতীত হয়েছে ?
জানি কথাগুলো তোমার ভাল্লাগছেনা। তবুও প্লীজ একটু কষ্ট করে পড়ে নিও।
বছর দশেক আগেকার কথা। ধর নামটা “এস” আমার বড় ভাই। আমি তাকে দাদা ডাকি। তার একটা ফুটফুটে মেয়ে আছে। শুচি। বয়স দেড় বছর। চৈত্রের কোন এক সকালের শেষ বেলায় দাদা গোসলের আগে ঘরের চালে উঠেছেন শুকনো মরিচ উল্টিয়ে দেয়ার জন্য। বেশ সময় ধরে দাদা চালে। মা চিল্লাচিল্লি, চিৎকার চেঁচামেচি করছেন নেমে আসার জন্য। দাদা নামছেন না। অনেকক্ষণ চেঁচামেচি করার পর মা হঠাৎ শুচিকে নিয়ে খালি গায়ে শুইয়ে দিলেন চৈত্রের কাঠ ফাটা উত্তপ্ত রোদের উঠানে। দাদা তা দেখে আকাশ থেকে পড়লেন যেন। রাগে মা’র সাথে চিল্লাতে লাগলেন। দাদা যতই চিল্লান মা শুচিকে উঠায় না। আমিও বকতে শুরু করলাম। মার একটাই উত্তর কেউ ধরবিনা শুচিকে। ভাবীতো রীতিমতো জন্মের কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন। দাদার চিৎকারের প্রেক্ষিতে এবার মা দাদাকে বলছেন- সামান্য ২/৪/৫ মিনিটের জন্য তোর মেয়েকে রোদে রেখেছি বাবা হয়ে এতেই তোর সহ্য হয়না, আর সেই সকাল থেকে তুই গরম টিনের চালে এই রোদে মরিচ নাড়ছিস্ তাতে আমার কেমন লাগছে বুঝতে পারিস এবার ? দাদা সুরসুর করে নেমে এলেন।
পৃথিবীর কোন মানুষ, জাতি, রাষ্ট্রই বিনা আলোড়নে, বিনা ক্ষতিতে লাভবান হয়নি- ভালো কিছু পায়নি। হোক সে ক্ষতিটা সাময়িক কিংবা স্থায়ী, অল্প কিংবা বিস্তর।
ত্রিপলী, আমার ধারণা তুমি ভালো না থাকার মধ্যেও ভালো আছ- এবং খুব ভালো। কামনাও করি তাই- সবসময় ভালো থাক। কিন্তু এ-ও ধারনা করি- আমার অজান্তে তোমাকে দে’য়া শোক সইবার নয়। বড় শোকটা বুঝি তোমার ক্ষতির শোক- সামাজিকতার শোক। জানিনা তা কী ? শুধু ধারনা করতে পারি আমার প্রতি তোমার ধারণা পাল্টে যাবার কিছু আগে কিংবা পরে তোমার উপর দিয়ে বয়ে গেছে কোন কালবৈশাখী। যা আমার অভিপ্রেত ছিল। যার কথা আমি তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম- “১৫ দিনের মধ্যে তোমার একটা দুঃখ আসতে পারে”। আমি মনে প্রাণে চেয়েছিলামও তা। চেয়েছিলাম কেউ তোমাকে, তোমার স্বামীকে তোমাদের জীবনটাকে ধরে জোরে প্রচণ্ড জোরে একটা ঝাকুনী দিক। তোমার, তোমার স্বামীর হুঁস ফিরুক। জানিনা সেটাই হয়েছে কী-না।
চেয়েছিলাম তোমার উপর দিয়ে এমন একটা ঝড় ছুঁয়ে যাক যা তোমার সব কষ্টের গ্লানী মুছে দিয়ে যাবে। সাময়িক একটু কষ্ট হবে হয়তো। তাতে কী ? তোমার স্বামীতো হবে ঘরমুখো- তোমার মুখো। যেমনটি শুচি’র কষ্ট হয়েছে ঠিকই কিন্তু সমস্যাটারতো সফল সমাধান !
যুগে যুগে এমনটা অপ্রত্যাশিতই। হযরত আয়েশা (রাঃ) কে কাফিররা কেন খোদ মুসলিমদের মধ্যেই অনেকে তাঁকে বাক্যবাণে জর্জরিত করতো। তিনি আহত হতেন। ধৈর্য ধারন করতেন। সাময়িক একটু লাঞ্ছনা, অপবাদের বিনিময়ে তিনি পেয়েছিলেন অপার সুখ-শান্তি। তাঁর এই ঘটনা নিয়ে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে নাযিল করলেন আয়াত।
জানিনা আমার দ্বারা তুমি কীভাবে, কতটা শাস্তি পেয়েছ। যতটা পেয়েছ ততটা হয়তো কামনা করিনাই। যত কম দুঃখই পাওনা কেন তুমি আর পারবেনা আমাদের সম্পর্কটাকে মেনে নিতে- আমি তা মানি। তবে তোমার জীবনে এতটুকু স্থায়ী কষ্ট হউক তা কখনোও চাইনি, চাইতে পারিনা।
প্রায় প্রতিদিনই ২/১ বার কথা হতো আমাদের। সবসময় খেয়াল রাখতে চেষ্টা করতাম- “মানুষ যখন কাউকে উপদেশ দেয়, তখন নিজের স্বার্থটা রেখেই তা অন্যকে দেয়”- কথাটা যেন আমার জীবনে ঠাঁই না পায়। জানিনা এর মধ্যেও কোন ত্র“টি ছিলো কী-না। জানিনা কোথায় কী জেনেছ। মিথ্যে ধারনা না করে (সে যে কাউরো উপর হোক সে তোমার স্বামী কিংবা অন্য কেউ) তাকে বোঝার চেষ্টা কর, নিজেকে বুঝতে চেষ্টা কর, সময় দাও, সময় নাও।
তুমি “মানুষ চিনতে ভুলকর”- এটা কি ঠিক ? ভুল করতে করতেই তো মানুষ- মানুষ হয়। সে ভালো কিংবা মন্দ।
তোমার ধারনা- তোমার কাছে আমি নিজেকে নীচু করেছি। মন্দ কী তাতে ? না হয় হলামই নীচু। ঝড় তো সব কিছুকেই লণ্ডভণ্ড করে দেয়, ঝড় পরবর্তী সময় ? সবকিছু নতুন করে, নিজের মতো করে গোছানো য়ায়। যায় যাক না কিছু হারিয়ে তাতে কী ?
(বেশী ঘনিষ্ট কেউ ভুল বুঝলে যা হয়- তোমার বেলায় যেমনটি হয়েছে) কাল রাত ১১:০০ টার দিকে মনটা ভীষন খারাপ হলো। খুউব বেশী কষ্ট পেলেও আমি কাঁদতে পারিনা। কাল কেন যেন চোখের পাতাগুলো ভিজে গেল। বুঝতে পারিনা তোমার জন্য না-কি সন্তানের মৃত্যুর জন্য ? মিলাতে পারিনা। দুটোই তো তোমাকে ঘিরে। ওহ দুঃখিত আমার তো সন্তান নেই। নেই তবে আমার অনেক গুলো সন্তান। কাল রাত ৯:০০ টার দিকে প্রদর্শনী থেকে আমার ছবিটা ফেরত নিয়ে আসি। ছবিটার বিষয় ছিল .. .. .. নাহ্ থাক। বরং বলি ওটাতে কী ছিল। ওটাতে এঁকেছিলাম আমার হৃদয় দিয়ে দেখা তোমার মুখের ৬ টি ভঙ্গি। তুমি রাগলে কেমন, হাসলে কেমন, ব্যস্ততায় কেমন, ক্লান্ত থাকলে.. .. ..। ছবিটা ফেরত এনেছি ঠিকই কিন্তু বাসায় নয়। শিল্পকলা একাডেমীর সামনেই ওটা এনটি কাটার দিয়ে এফোঁড় ওফোঁড়.. .. ..। কয়েকজনে এটার ছবি নিয়েছে। চোখরাখ পত্রিকা কিংব ব্লগ সাইটগুলোতে, এনটি কাটার ব্যবহারের দৃশ্যটা অবশ্যই কেউ না কেউ প্রকাশ করতে পারে কারন এটা একটা জাতীয় প্রদর্শনী। আচ্ছা ত্রিপলী, একজন শিল্পীর কাছে তার শিল্পকর্মগুলোকি তার এক একটি সন্তানের মতো নয় ? আমি তা হত্যা করলাম কেন ?
তোমার কিংবা তোমার পরিবারের কোন এক পরিচিত কেউ (পরা..., অফিসার, জনতা ব্যাংক, মতিঝিল শাখা) আমাকে প্রায়ই ফোন করে। জানিনা তা কেন। আমি উদ্বিগ্ন থাকি।
পূণশ্চঃ এই লেখাটা তোমার কাছে আদৌ আমার কোন কৈফিয়ত নয়, নয় আমার প্রতি তোমার ভুল ভাঙ্গাতেও। আমি সে চেষ্টা করবোও না কোন দিন। আমার প্রতি তোমার ভুল ভাঙ্গাতে নয়, নিজের ভুলগুলো শোধরাতেই তোমার সাথে আমার এই ছ্যাবলামোপনাটা করা। জানিনা কী এমনটা করেছি, হয়তো ক্ষমাও করতে পারবেনা কোনদিন। তবুও ভালো থাকবা সবসময় শুধুমাত্র এই কামনা করছি।
ত্রিবেদী
ডিভি- বিজয়ী হলে আপনার করনীয় .. .. .. .. আমার অভিজ্ঞতার আলোকে .. .. .. ..
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১:২০