somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংক্ষেপেঃ সুদানে ব্রিটিশ-মিশরীয় শাসনকাল

০২ রা আগস্ট, ২০১২ রাত ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৮৯৯ সাল। দীর্ঘদিনের মুসলিম শাসনের পতন ঘটিয়ে সুদানে প্রতিষ্ঠিত হয় অ্যাংলো-মিশরীয় শাসন। ইতিহাসে যা Anglo-Egyptian Condominium নামে পরিচিত। এই দ্বৈত শাসন চলেছে ১৮৯৯ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত। এই শাসনকালীন সময়ে সুদানের প্রতিটি গভর্নর জেনারেল ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক। অতএব, দেখা যাচ্ছে যে বাস্তবে এটি দ্বৈত শাসন ছিলোনা।
বিশ শতকের শুরুতে বিভিন্ন ব্রিটিশ উপনিবেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের যে সূচনা হয় তার প্রভাব সুদানেও পরিলক্ষিত হয়। ১৯১৬ সালে দারফুরের সুলতান আলী দিনারের সাথে ব্রিটিশ-মিশরীয় শাসিত সুদান সরকারের যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে আলী দিনার পরাজিত হন এবং তার কয়েকমাস পরে তাকে হত্যা করা হয়।
এরপর ১৯২২ সালে মিশরের স্বাধীনতা ঘোষণার সময় ব্রিটিশ সরকার সুদানকে নিজের হাতে রাখার নীতি গ্রহণ করে। ১৯২৩ সালে মিশরের সংবিধান রচনার সময় মিশরের রাজাকে সুদানের রাজা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। একই বছর সুদানের প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা আলী আবদুল লতিফ বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তা ও সহকারীদের নিয়ে “White Flag” দল গঠন করেন। যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল “Unity of the Nile Valley”। এই দল বছরজুড়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রাখে। পরের বছর মিশরীয় রেল ব্যাটালিয়ান বিদ্রোহ করলে ব্রিটিশ সেনাদল তাদের দমন করে। অবশেষে ১৯১৯ সাল থেকে শুরু হওয়া রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রশমন হয়। এ সময়ের পর থেকে “সুদানিদের জন্য সুদান” শ্লোগানের প্রতি সুদানের শিক্ষিত মানুষের আগ্রহ ক্রমেই বাড়তে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৩৮ সালে শিক্ষিত সুদানিদের নিয়ে গঠিত হয় “গ্রাজুয়েটস জেনারেল কংগ্রেস”। এই সগঠনের প্রথম মহাসচিব ছিলেন ইসমাইল আল আজহারী। যদিও কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার সময় ধারণা করা হয়েছিল এটি শুধু ব্রিটিশ স্বার্থ দেখবে কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, তারা মিশরীয় স্বার্থও বিবেচনা করেছে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অতটা সংশ্লিষ্ট না হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সুদান অনেক বেশি জড়িত ছিল। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সুদান বিষয়ে ব্রিটিশ-মিশরীয় সম্পর্কের আরো অবনতি হয়। ১৯৪৭ সালে মিশর ও ব্রিটিশ সরকার পৃথক ঘোষণার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে চলমান আলোচনা ভেঙ্গে দেয় এবং মিশর জাতিসংঘে সুদান বিষয়টি উপস্থাপন করে। কিন্তু এর কোন সার্থক সুরাহা হয়না।
ব্রিটিশ শাসনে উত্তর সুদানে উন্নয়ন হলেও দক্ষিণ সুদান ছিল অবহেলিত, পশ্চাদপদ ও অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্র। এছাড়াও দক্ষিণ সুদানের কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়ে দুই সুদান তৈরীর ব্রিটিশ “Divide and Rule” নীতির বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়।
১৯৫০ সালের নভেম্বরে মিশরের রাজা পার্লামেন্টে ১৮৯৯ ও ১৯৩৬ সালের চুক্তি বাতিলের আহবান জানান। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫১ সালে মিশর সরকার চুক্তিদ্বয় বাতিল ঘোষণা করে। কিন্তু ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ও তৎকালীন সুদান সরকার এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে। এর ফলে দীর্ঘদিনের সার্বভৌমত্ব ইস্যুটি সামনে চলে আসে।
১৯৫০ সালে গঠিত হয় “সুদান ওয়ার্কারস ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন” (SWTUF)। এই সংগঠনটি ব্রিটশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে এবং সুদানকে মুক্ত করার জন্য “ইউনাইটেড ফ্রন্ট” নামের কমিউনিস্ট ফ্রন্ট তৈরী করে।
১৯৫২ সালের বিপ্লবের মাধ্যমে মিশরের সরকার প্রধান হন জেনারেল নাগিব। তিনি ছিলেন সুদানের প্রতি সহানুভূতিশীল। তার আগ্রহ ও চেষ্টাতেই ১৯৫৩ সালে সুদান ও মিশরের রাজনৈতিক দলগুলো একটি সমঝোতায় পৌছে। এসময় মিশর ও সুদানের মাঝে দারুন ঐক্য সাধিত হওয়ায় ব্রিটিশদের পক্ষে আর নতুন কোন কৌশল অবলম্বন করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে ১৯৫৩ সালেই সুদানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ইসমাইল আল আজহারীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল ইউনিস্ট পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে। ১৯৫৪ সালে সুদানি পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশনে ইসমাইল আল আজহারী সুদানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন।
১৯৫৩ সালের পর থেকে ব্রিটিশ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হয় এবং তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিদায় করা হয়। এভাবে ৮০০ পদ শূন্য হয়। এই খালি পদগুলো সুদানি কর্মকর্তা দ্বারা পূর্ণ করা হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দক্ষিণ সুদানের মাত্র ৬ জন এই প্রশাসনে স্থান পায়। ফলে দক্ষিণ সুদানে ক্রমাগত বিদ্রোহ দেখা দেয় এবং সেখানে উত্তর সুদানি সৈন্যরা গুলিবর্ষণ করে। এতে জাতিগত দাঙ্গার সূত্রপাত হয়।
এরই মধ্যে ১৯৫৫ সালের আগস্ট মাসে সুদান পার্লামেন্টের প্রস্তাবের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ও মিশরীয় সৈন্যদের নভেম্বর মাসে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। একই বছরের নভেম্বরের ১০ তারিখে অনাস্থা ভোটে আজহারী পরাজিত হয়ে পদত্যাগ করেন, আবার ১৫ তারিখেই প্রস্তাবে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হন। ২২শে ডিসেম্বর সুদানকে একটি সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৫৬ সালের ১লা জানুয়ারী সুদান স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এভাবেই দীর্ঘ ব্রিটিশ-মিশরীয় শাসনের বেড়ী ছিন্ন করে সুদান স্বাধীনতার মুখ দেখে।
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×