বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই জাতির পিতা, রাষ্ট্রের
স্থপতি, সফল রাষ্ট্রনায়ক, জাতীয় বীর বা বিশ্বব্যাপী
জনকল্যাণমূলক অবদান রাখা ব্যক্তিত্ব্যের ব্যাপারে
কোন দ্বিধা, বিভক্তি কিংবা অনৈক্য সাধারণত দেখা যায়
না। বহুমত-পথের অনুসারী হয়েও জাতীয় ব্যক্তিত্বকে
সমানভাবে সম্মান ও শ্রদ্ধায় অভিষিক্ত করা হয়।
প্রথমত এটা সভ্যতার পরিচায়ক, দ্বিতীয়ত উদার,
মহত্ত্ব ও উন্নত মানসিকতার দৃষ্টান্ত। এ ধারা
গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার পথকেও করে সমৃদ্ধ, তা বলার
অপেক্ষা রাখে না। যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ওয়াশিংটন ও
আব্রাহাম লিংকন, ভারতে মহাত্মা গান্ধী, তুরস্কে কামাল
আতাতুর্ক এমনকি অকার্যকর রাষ্ট্রের তকমা যার গায়ে
সেই পাকিস্তানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ব্যাপারেও
নেই কোন বিভক্তি বা দ্বিধা-সংশয়। দলমত নির্বিশেষে
সর্বমহলে এসব ব্যক্তিত্ব সমানভাবে সম্মান পেয়ে
থাকেন। বাঙালী হিসেবে আমাদের বড়ই পরিতাপ ও
লজ্জার ব্যাপার হলোÑ মহান স্বাধীনতার স্থপতি,
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যাপারে
সব শ্রেণীর মানুষ সমানভাবে সব সময় শ্রদ্ধা প্রদর্শন
করতে পারিনি। এর জন্য দায়ী মূলত সঙ্কীর্ণ
মানসিকতা, হীনমন্যতা ও নষ্ট রাজনীতি।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কম নোংরা রাজনীতি হয়নি।
একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও পঁচাত্তরের
ঘাতকগোষ্ঠীর সমন্বিত অপচেষ্টায় দীর্ঘদিন এমন
দমবদ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছিল যে, সাধারণ
মানুষের বঙ্গবন্ধু শব্দটি উচ্চারণ করাই যেন ছিল
অপরাধ। অথচ যে মানুষটি শত নির্যাতন, অত্যাচার সয়ে
দেখিয়েছেন মুক্তির পথ, এনে দিয়েছেন একটি স্বাধীন-
সার্বভৌম দেশ; সেই মানুষটির নামে এমন অবজ্ঞা আর
অবমাননা! এ পর্যন্ত হলেও না হয় অকৃতজ্ঞতা,
কৃতঘœতার সীমা নির্ণিত হতো। কিন্তু যখন দেখা গেল
বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে শাহাদাতবরণের দিনে কোন
রাজনীতিকের হঠাৎ আবিষ্কার হওয়া, ভুঁইফোড় জন্মদিন
সাড়ম্বরে পালন করা হয়, তখন নোংরামির সীমা-পরিসীমা
নিয়ে নতুন করে ভাবার অবকাশ সৃষ্টি হয়। রাজনীতিক ও
মানুষ হিসেবে অনেকের দৈন্য আর অকৃতজ্ঞতার মুখোশ
খুলে পড়ে। জাতি হিসেবেও আমাদের ভব্যতা প্রশ্নবিদ্ধ
হয় বৈকি।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এমন বাস্তবতা যে কোন
শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে পীড়িত করে। এই বিভক্তি
দেশের সুশীল সমাজেও যখন দেখা যায় তখন তা হয়ে
দাঁড়ায় আরও গ্লানিকর। সাংবাদিক সমাজেও এর ঢেউ
লাগাটা অনভিপ্রেত। তবে দীর্ঘদিন পরে হলেও এ বিষয়ে
ইতিবাচক এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে জাতীয়
প্রেসক্লাবে এই মহান নেতার প্রতিকৃতি স্থাপনের মধ্য
দিয়ে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জাতীয়
প্রেসক্লাব সুশীল, শুভবুদ্ধি ও উন্নত মনমানসিকতার
প্রতীক। সেখানে দীর্ঘ সময় চেপে বসেছিল মুক্তিযুদ্ধের
চেতনার পরিপন্থী শক্তি। সম্প্রতি রাহুমুক্ত হয়ে
মুক্তমনা কতিপয় মানুষের নেতৃত্বে তা পরিচালিত হচ্ছে।
যাঁরা ধারণ করেন অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা;
যা এ দেশে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ
বাঙালী বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপনের
মাধ্যমে প্রকাশ পেল সাংবাদিক সমাজের দৃঢ় ঐক্য।
পাশাপাশি মহান নেতার প্রতি জানানো হলো নতুন করে
শ্রদ্ধা, সম্মান। এ উদ্যোগকে দেশবাসী স্বাগত জানায়।
এই মহৎ কর্মোদ্যোগকে আমরা অভিনন্দন জানাই।
বঙ্গবন্ধু কোন দল বা গোষ্ঠীর নন, তিনি এসবের
উর্ধে; এ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আবার তা ঘোষিত হলো।
শুধু প্রেসক্লাবেই নয়, দেশ-সমাজের সব ক্ষেত্রে এমন
সাম্মানিক সাম্যতা প্রতিষ্ঠিত হোক এবং তা অব্যাহত
থাকুকÑ এ আমাদের প্রত্যাশা।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৩