অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল একাত্তরের বধ্যভূমিতে যাব । গতকাল আমার স্বপ্ন পূরণ হল । জানিনা এই বধ্যভূমির কথা সবাই জানেন কি না । এটি সুনামগন্জ জেলার জগান্নাথপুর উপজেলার শ্রীরামিসি গ্রামে অবস্থিত । যখন বাড়ি থেকে শ্রীরিমিসির বধ্যভূমির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম তখন আমার মনে হয়েছিল আমি যেন আমার শিকরের টানে যাচ্ছি । তখন মনের মধ্যে এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছিল যা ভাষায় প্রকাশ করার নয় । আমরা যখন শ্রীরামিসি বাজারে পৌছলাম তখন একজন বয়োজষ্ট কাছে জিজ্ঞাসা করলাম তখন তিনি আমাদের দেখিয়ে দিলেন আমরা যখন ধীরে ধীরে বধ্যভুমির কাছে পৌছতে লাগলাম তখন আমাদের মধ্যে অন্যরকম চেতনা কাজ করতে শুরু করল । বধ্যভুমির পাশে পৌছে দেখলাম সেখানে শান শান নীরবতা বিরাজ করছে । আমার কাছে মনে হয়েছে আমার অতি প্রিয়জনরা নাকি ঘুমিয়ে আছে , মনে হয়েছে হয়ত একটু শব্দ পেয়ে তাদের ঘুম ভেঙ্গে যাবে । ১৯৭১ সালে ৩১ শে আগস্ট মুক্তিযোদ্ধের উত্তাল দিনে সারা বাংলাদেশের মত পাকবাহিনী শ্রীরামিসির নিরীহ মানুষের উপর হায়েনার মত ঝাপিয়ে পড়ে । নিরীহ মানুষরা প্রান বাঁচানো ভয়ে যে যেদিকে পারে সেদিকে ছোটতে শুরু করে । পাকি জারজরা বাহিনী শ্রীরামিসিসহ আরও আশে পাশের গ্রাম থেকে প্রায় একশত মানুষকে ধরে নিয়ে শ্রীরামিসির বাজারের উচ্চ বিদ্যালয়ে জরো করে পরে বাজার থেকে দুইশ বা তিনশ গজ দুরে হিরন মিয়ার পুকুর পাড়ে হাত পা বেধে এক সাথে লাইন করে দাঁড় করিয়ে বাশ ফায়ার করে হত্যা করে পাকবাহিনী । দুই বা তিন দিন পরে পাকবাহিনী চলে গেলে মানুষ তাদের স্বজনদের খুঁজ করতে গিয়ে আবিষ্কার হয় এই বধ্যভুমি । তখন স্বজন হারা কান্নায় চার পাশের আকাশ ভারি হয়ে যায় । এখান থেকে পাকবাহিনীর হাতে নিহিত স্বজনদের নিয়ে পরে কবর দেওয়া হয় । আজও কালের সাক্ষী হয়ে , মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে শহীদদরে স্মরণে স্থাপিত স্মৃতি স্তম্ভ গুলি । আমরা হিরন ও সাত্তার মাষ্টারের খুঁজ করলাম যারা ছিল এই স্মৃতিস্তম্ভের পরিকল্পনাকারি ও তত্ত্বাবধায়নকারী তবে সাত্তার মাষ্টারকে পাওয়া যায়নি আমরা পেয়েছিলাম হিরন মিয়া কে , উনার সাথে আমরা অনেক কথা বলে আমরা জানতে পারলাম ৭১রে উনার বয়স ছিল ১১ বছর এবং তারা প্রতি বছর ৩১শে আগস্ট"' শ্রীরামিসি হত্যা দিবস "'পালন করে , শহীদদের আত্নার মাগফেরাত ও সিন্নি সালাত করে । সেখানে আমরা শহীদদরে উদ্দেশ্যে স্মৃতি স্তম্ভে স্যালুট জানাই ও এক মিনিট নীরবতা পালন করি । বাড়িতে ফিরতে কিছুতেই মন চাইছিল না ,আমার মনে হয়েছিল আমার প্রিয়জনদের ছেড়ে কোথায় যাব এবং আমি শুনতে পাচ্ছিলাম আমার স্বজনরা যেন আমায় ডেকে বলছিল আবার এসে দেখে যেও । দুঃখ ভরা ক্লান্ত মন নিয়ে বাড়ি ফিরলাম । লেখা শেষ করার আগে গানের সুরে বলে যাই , যে মাটির নিচে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তিসেনা , তরা দেনা তরা দেনা সে মাটি আমার অঙ্গে মাখিয়ে দেনা ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৪২