সাভারে 'জেনিয়া ইউনানি ল্যাবরেটরি' নামে একটি ওষুধ কারখানায় ইটের গুঁড়া মিশিয়ে তৈরি হয় বিভিন্ন জটিল রোগের ওষুধ। অন্যান্য 'কেমিক্যালের সঙ্গে ইটের গুঁড়া দিয়ে ট্যাবলেট, ক্যাপসুল ও সিরাপসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরি করা হয় কারখানাটিতে। এমনকি 'সকল কাজের কাজী' এই ইটের গুঁড়া দিয়েই তৈরি করা হয় যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটও। সব মিলিয়ে কারখানাটিতে উৎপাদন করা হয় ৮০ থেকে ৯০টি ওষুধ। তবে কারখানাটির পরিচয় ছিল জুস ও পানীয় উৎপাদক প্রতিষ্ঠান হিসেবে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে র্যাকবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের হাতে ধরা পড়েছে জেনিয়া ইউনানির কারসাজি।
গতকাল বুধবার সাভারের হেমায়েতপুরের ঋষিপাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভেজাল জুস ও পানীয় তৈরির অভিযোগে কারখানাটিতে অভিযান চালাতে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট, বিএসটিআই ও র্যায়ব কর্মকর্তারা হতবাক হয়ে যান। আদালত কারখানাটি সিলগালা করে দেন এবং দেড় লাখ টাকা জরিমানা, দুই কর্মকর্তাকে আটক ও মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনাকালে একই
আদালত হেমায়েতপুরের রাজ ফুলবাড়ীয়া এলাকার খাবারসামগ্রী তৈরির কারখানা ফাস্ট্রাক এগ্রো প্রোডাক্টস অ্যান্ড ফিড ইন্ডাস্ট্রিকে এক লাখ, জয়নাবাড়ী এলাকার মেঘনা বেকারিকে দেড় লাখ, শোভাপুর এলাকার কোমল পানীয় ও জেলি তৈরির কারখানা সুফল ফ্রুট অ্যান্ড বেভারেজকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন। এ সময় মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা, দুটি প্রতিষ্ঠানের দুই মালিকের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়।
র্যা ব-৪-এর একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত ভেজালবিরোধী অভিযানটি পরিচালনা করেন। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতটির নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশা। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরিদর্শক সাইদুর রহমান, র্যা ব-৪ সাভার ক্যাম্প কমান্ডার মেজর তারেক আজিজ আহম্মেদ ও ক্যাপ্টেন মেহেদী ইমাম প্রমুখ।
র্যাব ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, 'জুস ও হারবাল ওষুধ' তৈরির কারখানা জেনিয়া ইউনানি ল্যাবরেটরিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভেজাল জুস ও পানীয় তৈরি এবং ইটের গুঁড়া মিশিয়ে বিভিন্ন সিরাপ, যৌন উত্তেজক বড়ি, ক্যাপসুলসহ বিভিন্ন ওষুধ তৈরির অভিযোগে কারখানাটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কারখানার যন্ত্রপাতিও জব্দ করা হয়। কারখানাটিকে জরিমানা করা হয় দেড় লাখ টাকা। এ সময় কারখানার ব্যবস্থাপক জিন্নাহ মিয়া ও কথিত যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. খন্দকার মামুনুর রশিদকে আটক করা হয়। ভেজাল ওষুধ তৈরির এ কারখানার মালিক আবদুর রশিদ পলাতক রয়েছেন। আদালত তাঁর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা রজু করেছেন।
এর আগে ভ্রাম্যমাণ আদালত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবারসামগ্রী তৈরির অভিযোগে মেঘনা বেকারিকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেন। এ সময় কারখানার ব্যবস্থাপক রুহুল আমিন ও কর্মচারী রবিউল শেখকে আটক করা হয়।
পরে সুফল ফ্রুট অ্যান্ড বেভারেজকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জুস, জেলিসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী তৈরি এবং বিএসটিআইর সনদ জাল করার অভিযোগে সিলগালা করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয় ও আটক করা হয় কারখানার ব্যবস্থাপক আকমল হোসেন ও শ্রমিক হৃদয়কে। মালিক রেজোয়ান আহমেদ পলাতক থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে।
ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশা জানান, জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় আটককৃতদের সাভার নবীনগরের র্যাব ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে না পারলে আটককৃতদের কারাগারে পাঠানো হবে।
সুত্রঃ কালের কন্ঠ