আজ হঠাৎ মনে পরলো সন্ধায় তাকে দেখে, সেদিনের সেই কথা জা আমাকে যতটা অবাক করেছিল তার চেয়েও অনেক বেশি করেছিলো নির্বিকার এক খন্ড পাথরের ন্যায় ।
বিষয়টা অতি সংক্ষেপে খুলে বলছি-
মাস ছয়েক আগের কথা। মা বাবা সহ পুরো পরিবার গিয়েছিলো নানা বাড়িতে সপ্তাহ খানেকের জন্য আর আমাকে রাখা হয়েছিলো বাড়িটা পাহারা দেবার জন্য।
আমার বাবারা সাত ভাই হওয়ার কারোনে চাচাত ভাই অনেক।একই জায়গায় আলাদা আলাদা ভাবে পাশা পাশি বসবাস আমাদের-
তাই কষ্ট করে রান্নার ঝামেলায় যেতে হয় না আমাকে।
বাড়িতে কেঊ না থাকার সুবাদে চলছে আড্ডা হরহামেসা।আমার বাড়িতে মোট তিনটে গেট। একদিন ফিরতে খানিকটা দেরি হয়। মেইন গেট দিয়ে ঢুকার সময় দেখি-
আমার রুমের বারান্দায় একটা লোক বসে বসে টিঊবওল খুলে ও সেই সাথে ঊঠানের এক কোনে অকেজো অবস্থায় পরে থাকা পুরোনো ৩-৪ টা টিন গুরিয়ে মুরিয়ে ছোট করে গছাচ্ছে নিজের মনে করে নিয়ে যাবার জন্য।
তার পর কোন প্রকার শব্দ না করে বাসা থেকে আস্তে করে বের হয়ে মেইন গেটটা লাগিয়ে দিয়ে পেছন গেটে এসে প্রায় শব্দ করেই ঢুকলাম।
তখন তারা হুরা করে পালাতে গিয়ে মেইন গেট বন্দ পেয়ে ফিরে আসলো আবার আমারই কাছে।
মোবাইলের আলোতেও স্পষ্ট চিন্তে পারলাম তাকে !
সে আমার মেইন গেটের সামনেই ছোট্ট এক চার চলা টিনের ঘড়ে থাকে যাকে আমার পুরো ফ্যামেলি অনেক বিশ্বাষ করে !!!
আমিও তাকে চাচা বলে ডাকি অতি শ্রদ্ধার সাথে ।
পেশায় সে একজন রিক্সাচালক।অভাবি বলতে যা বোঝায় সবটাই আছে তার মধ্যে।চার ছেলে মেয়ে নিয়ে তার সংসার।বঊটা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে। দুই ছেলে এক মেয়ে ছোট ছোট ।
আমি হতবাক হয়ে নিস্পলক চোখে তাকিয়েছিলাম তার দিকে,সেও কোন কথা বলছিলো না। আমি স্বপ্নেও ভাবিনি কখনো তার দ্বারা এমন কাজ হয় বা হতে পারে !!!
বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের এলাকায় ছোট খাট চুরি হচ্ছিল যার কারনে এলাকার যুবক পলাপান খুজছিলো তারে।
আমার আর কিছুই জানতে রইল না বাকি।
অথচ , কি আজব কিছুই বললাম না তাকে , পারলাম না কিছু করতে সীমাহীন মমত্বের টানে ও বড় অসহায় এই সমাজে-যার দিন এনে দিন খেতে হয়। তার পরেও আমাদের এলাকায় তার রয়েছে অনেক সুনাম একজন মোটা মুটি ভালো মানুষ হিসেবে।যার নামে কোন ক্লেম ছিলো না ইতিপূর্বে।
আমি চাইনি তার এই শেষ সম্বল সম্মান টুকো নষ্ট করতে। আমি পারিনি ভালো মানুষ রুপি এই অসহায় মানুষটিকে লোক সমাজে ঊলংগ আকারে তুলে ধরতে।
জানিনা ঠিক করেছিলাম কিনা ???
সেদিন নিজেই তার পালিয়ে যাবার রাস্তা করে দিয়ে!!!
এই নিয়ে বেশ কিছুদিন অপরাধবোধ কাজ করেছিল।
আজ সন্ধায় দেখা হয়েছিল তার সাথে অনেক দিন পর।
ডেকে নিয়ে গেলো চায়ের দোকানে-
তারপর বল্ল সত্যি সেদিন আমি চাইনি তা করতে!!
তোমার চাচি অসুস্থ ছিল মাথা ঠিক ছিল না আর এইসব যারা করে ওরাই বলেছিলো ওগুলো এনে দিতে পারলে আমাকে ১০০০ টাকা দেবে- তাই।
আমি দেখলাম তার চোখের কোনায় কিছুটা জল আর ভীসন অপরাধবোধ।
আমি শুধু বললাম ঠিক আছে ব্যাপার না।
তবে আজ কেনো জানি মনে হচ্ছে সেদিন কোন ভূল করি নাই।
আসলে কি তাই ???
নাকি এইটা আমার এক ধরনের আবেগ ???
তবে কেন জানি ভালো লেগেছে তার এই আত্বসমর্পণ ও ভূলটা বুঝতে পেরে দেখে।