২০১২ ইং সালের জানুয়ারী মাসের ৪ তারিখ “www.4chan.org” নামের ইমেজ সাবমিশন ওয়েবসাইটে একটি ইমেজ ভেসে ওঠে, আর তাতে লেখা থাকে।
এই মেসেজটি সাইন করা থাকে ৩৩০১ নামে আর সাথে প্রথম সংকেত হিসেবে থাকে একটি সিকাডা (ঘুগরা পোকা) – এর ছবি।
আর এই ভাবেই সূত্রপাত হয় ইন্টারনেটের মধ্যে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে জটিল, আশ্চর্যজনক, সুপরিকল্পিত এবং অদ্ভুত এক ধাধার সিরিজের।
২০১২ ইং সালে জানুয়ারী মাসে শুরু হওয়া এই ধাধার কার্যক্রম প্রায় ১ মাস মত চলে। নতুন ধাধা নিয়ে ২০১৩ ইং সালের ৪ই জানুয়ারী মাসে আবার এর আবির্ভাব ঘটে, যা কতদিন চলে বলা যায় না। ২০১৪ ইং সালের জানুয়ারী মাসের ৪ তারিখ আবার এর আবির্ভাব ঘটে ধারণা করা যা এখনও পর্যন্ত চলছে কারণ ২০১৫ ইং এখনও পর্যন্ত নতুন কোন ধাধা আসে নি।
কি আছে এই ধাধায়
কি আছে এই ধাধায় এটা বলার চেয়ে বলা সহজ কি নেই এই ধাধায় – কবিতা, শিল্পকর্ম, সঙ্গীত, অনুমাননিভর্র কথাসাহিত্য, অষ্ঠাদশ শতকের অজ্ঞাত এবং রহস্যময় সাহিত্য, মায়ান ক্যালেণ্ডার, দর্শন, গণিত, ক্রিপ্টোগ্রাফি, সংখ্যাতত্ব, প্রযুক্তিবিদ্যা, তথ্য নিরাপত্তা, স্টেগেনোগ্রাফি এবং প্রাচীন পাণ্ডুলিপি। এই ধাধার সূত্রপাত ইন্টারনেটে হলেও এর কার্যক্রম পরিচালিত হয় টেলিফোনে, সঙ্গীতে, অপ্রকাশিত এবং দুস্প্রাপ্য বইতে, ডিজিটাল ছবি এমনকি বিভিন্ন জায়গায় ছাপানো কাগজের মাধ্যমেও কিন্তু এর সবটাই লুকানো হয়েছে এনক্রিপশন এবং এনকোডিং করে। এই ধাধাটি শুধুমাত্র কম্পিউটারে বসে সমাধান করা যাবে না, এর জন্য প্রতিযোগীকে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে হবে। ধাধার সূত্রগুলো কিউআর কোড হিসেবে লাগানো থাকে টেলিফোন/ইলেকট্রিক পোল অথবা ডাকবাক্সে। এর জায়গা ইউএস, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, স্পেন, রাশিয়া, জাপান, পোলাণ্ড, মেক্সিকো এবং দক্ষিণ কোরিয়া-তে ছড়িয়ে আছে।প্রতিটি ধাধা এবং সূত্র একটি নির্দিষ্ঠ সময়ে এবং পর্যায়ক্রমে শেষ করতে হয়, এতে কোন ধরণের ভুল গ্রহনযোগ্য নয় বা কোন ভাবেই আবার পুনরায় শুরু করা যাবে না।
ছবিতে লুকানো ধাধা
কেন সিকাডা ৩৩০১ রহস্যময়
এই সিকাডা ৩৩০১-কে বলা হয় “ইন্টারনেট যুগের সবচেয়ে বিস্তৃত এবং জটিল ধাধা”। “দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট” তাদের “ইন্টারনেটের শ্রেষ্ঠ ৫ অমীমাংসিত রহস্য” হিসেবে একে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজ অবধি কারা সিকাডা ৩৩০১ নামের ধাধার কার্যক্রম পরিচালনা করছে বা কেনই বা করছে তার কোন কারণ জানা যায় নি, এমনকি কারা এর বিজয়ী এবং তাদের নিয়ে কি করা হয়েছে তা জানা যায়নি। কেউ কেউ দাবী করেছে তারা ধাধার কিছু অংশ সমাধান করেছে কিন্তু যেই তারা মিডিয়া বা ইন্টারনেটে এই দাবী করেছে তাদের তত্ক্ষণাত প্রতিযোগীতা হতে বাদ দেওয়া হয়েছে।
কারা এর পিছনে বা কি এর উদ্দেশ্য এই ব্যাপারে যে ধারণাটি শক্তপোক্ত তা হল এটা কোন ইন্টিলিজেন্স এজেন্সী বা গোয়েন্দা সংস্থা যেমন – NSA, CIA, MI6 এর কাজ। এছাড়াও অন্যান্য ধারণার মধ্যে আছে, এটা কোন কর্পোরেশনের কাজ অথবা কোন ব্যাংক যারা ক্রিপ্টোকারেন্সী নিয়ে কাজ করছে অথবা কোন গুপ্তসংঘ, আবার এমনও ভাবা হয় এটা কোন হ্যাকার গ্রুপের কাজ যারা কোন বিশ্বব্যাপী অনৈতিক কাজের জন্য জড়ো হচ্ছে।কেউ কেউ আবার একে কোন বৈশ্বিক সন্ত্রাসী গ্রুপের কাজ বলেও মনে করে। কিন্তু এই সবের কোন সত্যতা জানা যায়নি। তবে শুধুমাত্র একবার তারা নিরবতা ভেঙ্গে জানায় তারা কোন অনৈতিক কাজের জন্য এই প্রতিযোগীতার আয়োজন করে নি।
সিকাডা ৩৩০১ – এর আয়োজক আর তাদের উদ্দেশ্য যেমন রহস্যাবৃত ঠিক তেমনি যারা রহস্যাবৃত কারা এই প্রতিযোগীতায় সাফল্য অর্জন করেছে।অনেকেই এতে অংশগ্রহণ করেছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ দাবী করেছে তারা এটি সমাপ্ত করেছে। কিন্তু এটা পরিষ্কার নয় যে কতজন পাশ করেছে বা তারপর কি হয়েছে। গুজব আছে এরপর তাদেরকে একটা ইমেইলের মাধ্যমে দেখা করতে বলা হয় এবং গ্রুপ অথবা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হয়।
জোয়েল এরিকসন (Joel Eriksson):
জোয়েল এরিকসন একজন সিকিউরিটি রিসার্চার যিনি দাবী করেছেন যে তিনি এই ধাধাগুলোর অনেকটাই সমাধান করেছেন। “ফাস্ট কোম্পানী” ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি জানান, প্রথমে তিনি এটাকে একটা মজা মনে করে শুরু করেন কিন্তু তারপরেই তিনি বুঝতে পারেন এর গভীরতা এবং এটি কতটা জটিল এবং কঠিন। সিকিউরিটি রিসির্চার হিসেবে তার আগে থেকেই ক্রিপ্টোগ্রাফি এবং স্টেগোনোগ্রাফি সম্পর্কে ভালো ধারণা ছিলো। রহস্যের জট খুলতে গিয়ে তাকে সমাধান করতে হয়েছিলো ইন্টারনেটে বিভিন্ন ধরণের ছবি বা টেক্সটে থাকা লুকানো তথ্যকে, তাই নয় এই ধাধা তাকে বাস্তব পৃথিবীতে নিয়ে আসে। এই প্রক্রিয়ায় তাকে ১৪টি বিভিন্ন জায়গায় থাকা ধাধা সলভ করতে হয় যেগুলো একটি সিকাডা এবং কিউআর কোড হিসেবে থাকতো।
ইলেকট্রিক পোলে লাগানো সিকাডা ৩৩০১ এর ধাধা (ওয়ারশ্, পোলাণ্ড)
তবে ভৌগোলিক বাধার কারণে তার পক্ষে সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব হয় নি, সে ক্ষেত্রে বন্ধুদের সাহায্য গ্রহণ করে। এই সব ধাধাগুলো সমাধান করে সে আবার ইন্টারনেটে ফিরে আসে তবে এইবার ইন্টারনেটের সবচেয়ে গভীর জগতে যা “ডিপ/ডার্ক ওয়েব” নামে পরিচিত(বি:দ্র: ডিপ/ডার্ক ওয়েব কি তা নিয়ে ব্লগে লেখা আছে তাই এই ব্যাপারে বিশদ লেখলাম না)। এই পর্যায়ে তাকে একটা আ্যানোনিমাস টর নেটওয়ার্কের ঠিকানা দেওয়া যেখানে গিয়ে সে দেখতে পায় একটা হতাশাজনক মেসেজ যাতে বলা হয় এই অর্গানাইজেশন এমন কাউকে গ্রহণ করবে না যে শুধুমাত্র নিজেরা ধাধাগুলো সমাধান না করে অন্যদের সাহায্য নিয়েছে।
সিকাডা ৩৩০১ এর ব্যাপারে জোয়েল-এর শ্রদ্ধামিশ্রিত মতামত হল তারা বেশ সুসংগঠিত এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন একটি গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠান। তাদের বিভিন্ন ধরণের ধাধাগুলো দেখে তার ধারণা তারা কোন সরকারী বা ইন্টেলিজেন্স প্রতিষ্ঠান নয়, বরং তারা কোন ক্রিপ্টোএনার্কি মুভমেন্ট বা হ্যাকার গ্রুপের সাথে সংশ্লিষ্ঠ।
পরিশেষে, শুধু এটুকুই বলা যতদিন পর্যন্ত সিকাডা ৩৩০১ নিজেরা আত্মপ্রকাশ করবে না ততদিন পর্যন্ত কিছুই জানা যাবে না। তারা লুকিয়ে আছে ইন্টারনেটের গভীর জগতে যেখানে আপনার-আমার প্রবেশ নিষেধ। তারা যে কেউ হতে পারে, হয়ত আপনার পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া কোন ব্যক্তি, হতে পারে এলিভেটরে আপনার পাশে দাড়ানো কোন রমণী, হতে পারে বন্ধু কিংবা শত্রু। হয়ত তারা কোনদিন সামনে আসবে আর হয়ত তারা থেকে যাবে পর্দার আড়ালে চিরদিনের জন্য।
বিশেষ দ্রষ্ঠব্য:
সামু বর্তমানে বিশাল একটি ব্লগ, এর আর্কাইভে উপরোক্ত বিষয় নিয়ে অন্য কোন পোস্ট থাকতেই পারে, যদি থাকে তবে আমি আন্তরিক ভা্বে দুঃখিত, তবে উপরোক্ত পোস্টটি কোন কপি-পেস্ট নয়। এর তথ্যসূত্র সম্পূর্ণ ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:৫১