প্যারিস থেকে নিখিলেশ
(মান্না দে'র কফি হাউজ থেকে অনুপ্রাণিত)
রমা,
তোমায় কি নামে ডাকলে এখন শোভন শোনায়
একদম জানা নেই আমার। আসলে কি জানো,
একজন শিল্পপতির স্ত্রী'র প্রতি লেখায় কোন সম্বোধনে
তার আভিজাত্য অটুট থাকে, সেটা কি করে
জানবে বলো- রুই ডি ফ্লচ, প্যারিসের সামান্য এক
পথশিল্পী। ছোট্ট এক পার্কে বসে যে সকাল থেকে
রাত অব্ধি একে চলে ফর্সার চোটে,
ফ্যাকাসে হয়ে থাকা শেতাঙ্গী রমণীর
খোলাপিঠের ফরমায়েশি পোর্ট্রেট; তার এরকম রমা
বলা-ঢের অভব্যতা। জানি মেমসাহেব কিংবা
ম্যাডাম বললেই সব চুকে বুকে যেত;
কেমন শ্রদ্ধা, ভক্তি এসে যেত শুনলেই! কিন্তু কেন যেন পারিনা।
লিখতে গেলেই মনে পড়ে যায়
এই মদমোয়াজেলের আদরে আদরেই একদিন
আমি যুবক থেকে পুরুষ হয়ে উঠেছিলাম!
রমা, মনে পড়ে
আর্ট কলেজের তথাকথিত জিনিয়াস
নিখিলেশ স্যানাল যখন ক্যানভাস হাতে নিত,
তখন কত কে আসত ছবির নায়িকা হতে?
তাদের নয়নের গান, পায়নি তুলির স্পর্শ আমার!
শুধু একটি মুখ, একে গেছি অসজ্রবার।
অতীত টতীত মনে আনি না একদম,
ও শুধু পোড়াতেই জানল! খুব ভালো করেই জানি
আর কারো বাহুলগ্না রমা আজ শুধুই
মাংসল শিল্প কোন, বিলিয়নিয়ারের দৃষ্টিসুখের ইনভেস্টমেন্ট!
আর আমার দেখার জন্যে অবশিষ্ট কেবল
ছোট্ট এই পার্ক, তার সবুজ অন্ধকার!
রমা, কেমন চলছে তোমার সংসার?
একাকী আমার থেকে বোধহয়
অনেক, অনেক ভাল। জানো রমা, আমি কিন্তু
ইচ্ছে করে অকৃতদার নই। খুব করে চেয়েছি
একটা বিশ্বস্ত শরীর কিনতে, হোক যেনতেন
শুধু একটা সতেজ শরীর। কিন্তু এই
দু কুড়ি বয়স পার করেও,
আজো কোন রমণীকে বোঝাতে পারিনি,
রোজ অন্ধকারে আমারো ইচ্ছে হয় খুব
দীঘল চুলের সাগরে মুখ গুজে দিতে। খুব বিশ্বাসের,
খুব আপন কারো খোলা পিঠে আদরের
হাত বুলাতে। স্বপ্নগুলো থেকে যায়।
আমিও তাই রাতভর স্বমেহন সেড়ে
সকাল হতেই আর্টের ব্যাগটা নিয়ে বসে পড়ি
পার্কের বেঞ্চিতে। রমা, কোনদিন যদি
প্যারিসে বেড়াতে আসো, রুই ডি ফ্লচের এই
পার্কটাতে এসো। খোলা চুলে সাহেবি গাউন শোভিত
তোমার আরেকটা পোর্ট্রট আঁকব!
নিখিল
(চিঠিটা কখনো পৌছায় না রমা’র হাতে, কেননা নিখিল জানেনা রমা এখন মনোবিকার নিরাময় কেন্দ্রে।)
উৎসর্গ: নিখিলেস প্যারিসে । যার সুন্দর আইডি নেমটি দেখে আমার মাথায় এই কবিতার আইডিয়াটি এসেছিল বছর দেড়েক আগে।
বি.দ্র: কবিতা আপলোড করেছি শেষবার প্রায় ছ'মাস আগে। অনেকে এখন আর মনেই করতে পারে না হয়ত, আমি এখনো কবিতা লিখছি