তারকাখচিত সম্ভ্রান্ত আকাশ,সংরাক্ত নদী,বিটপী পাহাড়,গীতিছন্দময় সরু ঝর্ণা আর চপল অরণ্য।এরা সবাই প্রকৃতির অকৃপণ সৃষ্টি।প্রকৃতি সৃষ্টির অনবদ্য ও নিখুঁত পরম্পরা এরা।আমাদের আকাশটি জাগতিক সৃষ্টির রহস্য ও সম্ভাবনার গুপ্ত দুয়ার খুলে দিয়ে অস্থির যুবককেও একনিষ্ঠ ভাবুক হতে শেখায়।তেমনি বহু ঘাঁটের বহু বাকেঁর নিবিষ্ট খরস্রোতা নদীটি মাটি,জল ও পলিকে এক সাথে মিশিয়ে দিয়ে উর্বরতার মশালটি তর তর করে এগিয়ে যেতে শেখায়।বৈরী প্রকৃতিতে আত্মনিমগ্ন বিরাটাকায় পাহাড়টি ধৈর্য্য ও মনোসংযোগের পরম পরিচয় দিয়ে আমাদেরকে অটুট হতে শেখায়।তেমনি নিস্পন্দিত ঝর্ণার নিটোল ছলছলানি আমাদেরকে ছবিয়াল হতে শেখায়।আর রাজসিক সবুজ অরণ্য তো জীবন ও সৌন্দর্য চেতনারই প্রসূন বহিঃপ্রকাশ ঘটায়!! আকাশ,নদী,ঝর্ণা,পাহাড়,অরণ্য এরাই মানুষ আর অপরাপর জীব সত্ত্বার প্রকৃত শিক্ষক।ওরাই পারে টেকসই জীবন আর সংস্কৃতির স্থায়ী বেধিটি নির্মাণ করতে।মাটি-জল,পাথর-চর এ সবই মানব সভ্যতার অপরিহার্য অলংকার।পরিবেশ-প্রকৃতি-জীবনের এই ত্রিভুজীয় প্রেমেই পৃথিবীটা এত সুন্দর!!!এত বাঙ্কময়!!! ওদের বিকাশেই আমাদের স্বচ্ছল নিবাস।ওদের বিনাশেই আমাদের সর্বৈব সর্বনাশ।মহাজাগতিক যেকোন অশুভত্বকে নস্যাৎ করার ক্ষেত্রে এরাই আমাদের শেষ ভরসা।এই পৃথিবীকে নির্ভেজাল ও নির্মোহভাবে টিকিয়ে রাখতে হবে।আর এটা করার জন্যে দরকার এই প্রাকৃতিক শক্তিগুলোর মধ্যে পারষ্পারিক সহাবস্থান ও ঐক্যের সুশৃঙ্খল বিন্যাসকে সুনিশ্চত করা।প্রকৃতির প্রতি যদি আমরা সুবিচার না করি তাহলে আমাদের ধ্বংস সময়ের ব্যাপার মাত্র।আধুনিকতার দোহাই দিয়ে আমরা যেভাবে প্রকৃতির অস্তিত্বকে সংকটাপন্ন করে তুলছি এর প্রভাব হবে মারাত্মক।উন্নয়ন লাগবে সন্দেহ নাই।কিন্তু উন্নয়টা যাতে প্রকৃতিকে ক্ষেপিয়ে তুলে না করা হয়।পরিমিত ও সুস্থ উন্নয়ন পরিকল্পনা না করে গায়ের জোরে আকাশ ছোঁয়া অট্রালিকা বানালেই হবে না।পরিবেশ বান্ধবনীতি মান্য না করে আমরা যতই উন্নয়ন উন্নয়ন বলে আকাশ- বাতাশ প্রকম্পিত করি না কেনো, তাতে কোন চিড়া ভিজবে না।আজ চারদিকে দূষণের মহড়া চলছে।পৃথিবী জুড়ে জোর -জবরদোস্তির মাৎস্ন্য়ায় শুরু হয়ে গেছে।বাতাসের রন্দ্রে রন্দ্রে ঢুকে গেছে বিষাক্ত সীসা।সমুদ্রতটের নিরীহ বালুকারাশিগুলো কার্ণিভাল বীচের বুলডোজার চাপায় রক্তাক্ত।ধানী জমিনগুলো আজ রিয়েল এস্টেটের লুটেরা চোখের কাছে নজরবন্দী।সবে ধন নীলমনি আমাদের নিঝুম পাহাড়ের শরীরজুড়ে গজিয়ে উঠেছে রিসোর্ট-কটেজের মত এলিট ফাংগাসগুলো।সবচেয়ে বেশি কোপ পড়ছে আমাদের নদীগুলোর উপর।আমাদের বড় বড় নদীগুলো আজ দারুণভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত।সব কিছু আজ নষ্টদের দখলে।সমস্ত পৃথিবীটাই দূষণের উপর ভাসছে।দূষণের কষাতলে জর্জরিত ও অবহেলিত প্রকৃতির এই সব নিষ্পাপ সন্তানসমুহকে যদি আমরা বাচাঁতে না এগিয়ে আসি তাহলে পরিবেশ বিপর্যয়ের এইচ. আই. বি ভাইরাসে রসাতলে যাবে সমগ্র মানব সভ্যতা।শুধু সাহিত্য,সংগীত বা সৃজনশীলতার চৌকস চর্চাই নয় মৌলিক চাহিদার নন্যুতম প্রয়োজনটি পূরণ করার জন্যে হলেও আমাদের পরিবেশ ও প্রকৃতির সুস্থতার প্রতি খেয়াল রাখতেই হবে।বায়ু,পানি,মাটিসহ সকল উপাদানের দূষন রোধে ব্যক্তি,পরিবার ও রাষ্ট্রর সক্রিয় চিন্তা,চেষ্টা,ভাবনা আর সাধনার বিপ্লব ঘটানোর একান্ত প্রয়োজন।দিনের শুরুতে প্রকৃতির কোলে জন্ম নিয়ে দিনের শেষে যদি আমরা পরিবেশের পেটে লাথি দেই তাহলে পরিবেশও তার সমুচিত জবাব দিবে ঠিক সময়ে, ঠিক জায়গায়, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবেই।তাই পরিবেশ নষ্ট করে আধুনিকতা নয়।প্রকৃতির ক্ষতি করে লীলাবিলাস নয়।পরিবেশ আর প্রকৃতির যথাযথ মর্যাদা আর রক্ষা করেই আমাদেরকে আধুনিকতার নীল সমুদ্রে অবগাহন করতে হবে।তাতেই যদি আমাদের শেষ রক্ষা হয়।নইলে ব্যর্থ হয়ে যাবে আমাদের সমস্ত অর্জন।পরিবেশকে সমঝে না চললে ট্রাম্প টাওয়ারও এক সময়ে মুখ থুবড়ে পড়বে।মুখ থুবড়ে পড়বে 4D যুগের সর্বজনীন বিজয় উদ্যাপন।ঠিকমত প্রকৃতি পূজা না করলে আমাদের ইশ্বর পূজাও অর্থহীন হয়ে পড়বে।পরিবেশ ঠিক না থাকলে আমাদের নোবেল,অস্কার,গ্রামি,গোল্ডেন গ্লোব,বিশ্বকাপ,
প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেলগুলো ক্রমেই শ্রীহীন হয়ে পড়বে।প্রকৃতি ও পরিবেশের হক ঠিকমত আদায় না করতে পারলে অকালে ডুবে যাবে আমাদের খেয়ালী প্রমোদতরী।বাদ যাবে না রবীন্দ্রনাথের সোনারতরীটাও.......................................................................