somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিন 'স্টুজি'র গপ্পো_শুরু

২৫ শে নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গল্পের নামকরণ টা বোধ হয় ঠিক হয় নি। আমার ভাইয়া আমাদের তিনজনকে বলে থ্রী স্টুজিস- আমার জীবনে ঘোরাঘুরির শুরু এই তিনের গ্রূপেই। প্রথম সফল দুঃসাহসিক অভিযানের পর সেই ঘটনাকে মনে রাখতে প্রতি বছর একটা ট্যুর করার সঙ্কল্প করি। নানান কারণে নির্ধারিত ডিসেম্বরের সেই দিনগুলো ঠিক না রাখতে পারলেও একটা ট্যুর করছি প্রতি বছর। সেই সূত্রেই কাল সকালে আমরা যাত্রা করব (কই যাব এখনো জানি না:P), আমাদের দুই স্টুজির সাথে একত্র হতে কাল ভোরে চট্টগ্রাম থেকে তৃতীয়জন এসে পৌঁছুবে- যাকে নিয়ে আজ বলব বলেই বসলাম।

একদম ঠিক দিন-তারিখ মনে নেই, জানুয়ারী ২০০৩ এর শেষের দিকের কথা। বুয়েট ভর্তির আগে চয়েস ফর্ম পূরণ ও মেডিক্যাল চেক আপ এই মর্মে এক গাদা সদ্য সাবালকত্ব অর্জন করা ছেলে-মেয়ে ইএমই ভবনের কোন এক তলায় ক্যাচড়-ম্যাচড় করছে। আমি গিয়েছিলাম বাবার সাথে- দুনিয়ার উপর মহা ত্যক্ত ভর্তি পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল না হওয়ায় (এক সময় আমি কঠিন আতেঁল ছিলাম- পড়াশুনা না করতে চাইলেও প্রথম স্থানটি আমার চাই ;):P)। এমনিতেই বিরক্ত তার উপর পেছনের বেঞ্চে শুনি কে যেন ঢাক-ঢোল পেটাচ্ছে। মেজাজের চরমে চড়ে পেছনে ফিরে দেখি একটা বাচ্চা সাইজের মেয়ে নিজের থেকে ডাবল সাইজের একখানা মোটা গ্লাসের চশমা চোখে এটেঁ টেবিলের উপর পরমানন্দে তবলা বাজাচ্ছে আর পক পক করছেX(- পাশে মনে হলো ভগ্নীগোত্রীয় কাউকে নিয়ে এসেছে। ভাবে সাবে মনে হলো বুয়েটে ঢুকে দুনিয়াখানা উদ্ধার করে ফেলেছে- রাগে আমার ব্রহ্মতালু জ্বলে যেতে লাগলX((

দিনটা খুব ভালো যায় নি। তার উপর যখনি সেই পেছনের বেঞ্চের তবলচির কথা মনে পড়ছিল, মনে মনে ঠিক করে ফেললাম- এ রকম ভয়ানক চীজ যে বিষয়ে পড়বে আমি অবশ্যই তার থেকে একশো হাত দূরে থাকব- তাই হয় আর্কিটেকচার ছাড়ব, নয় তো বুয়েট। তখন কি ঘুনাক্ষরেও ভেবেছিলাম ওই তবলচির প্যাক প্যাক আমাকে এখনো শুনতে হবে! অথচ কিছু দিন আগে যখন বললাম- skype টা ইনস্টল করে নে, আমায় বলে কী না- তোর পক পক শোনার জন্যে আমি skype ইনস্টল করতে পারবো না- কত্ব বড় আস্পর্ধা!!

যাই হোক, নানা কারণে আমার আর্কিটেকচার ছেড়ে এঞ্জিনীয়ারিং এ যাওয়া হলো না, ঢাকা ভার্সিটিতেও বাপ-মা ভর্তি হতে দিল না। ক্লাশ শুরু হওয়ার পর ছাত্রী হলে উঠে দেখি ওই মূর্তিমতী। আমাদের র‌্যাগ প্রদান অনুষ্ঠানে আমি যথারীতি সবচেয়ে বেশী বিরক্ত- কপাল কুচঁকে সবার দিকে তাকাচ্ছি আর দৃষ্টির আগুনে ভস্ম করে দেওয়ার অক্ষম চেষ্টা চালাচ্ছি। আর অন্যদিকে মিস তবলচি হেসে হেসে কুটিমুটি, আপুরা যাই বলে না কেন সে হাসতে হাসতে মরে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে বিরক্ত আপুরা ওর মুখে হাতে masking tape পেঁচিয়ে দেয়। কিন্তু তাতে যেন আগুনে আরো ঘি ঢেলে দেওয়া হলো। এ হেন বস্তুটি আগামীকাল সকালে ঢাকায় পৌঁছুবে:|। তা হোক- যা বলছিলাম এ হেন মূর্তিটি সর্বদাই যে কোন কিছু পন্ড করতে উস্তাদ। মনে আছে থার্টি ফার্স্ট নাইটে (২০০৪ শুরু হওয়ার আগের মুহূর্তে) কারা যেন ওর জ্বালা সইতে না পেরে হলের লনে ওকে গাছের সাথে বেঁধে রেখেছিল। ও এরকম করে কেন পরে যখন ওকে জিজ্ঞেস করতাম ও বলত, ওর জীবনের লক্ষ নাকি ছিল - অন্যদের irritate করা, বোঝেন অবস্থা :D

ছাত্রী হলে আমাদের structure করা গ্রূপে ওকেও প্রায়শই দেখা যেত এবং অবশ্যই একজন disturbing element এর ভূমিকাই পালন করত। ওর জ্বালায় প্রায়ই আমাকে সেই গ্রূপ থেকে উঠে আসতে হতো/:)X(। ও আর আমি দুজন যে দুই বিপরীত মেরুর মানুষ! আর দুনিয়াতে আমাকে জ্বালিয়েই যে ও সবচেয়ে বেশী আনন্দ লাভ করত।:|

তারপর কবে যে আমরা কীভাবে কীভাবে একটা ট্যুর প্ল্যান করলাম, একটা exciting ট্যুরের পর আবারো ট্যুর- অতি অল্প পয়সায় ট্যুর কীভাবে করা যায় তার সবচেয়ে ভাল উদাহরণ ছিলাম আমরা- আর কতটা ঝুঁকি নিয়েও কেমন করে সেগুলো উতরে যেতাম।

তারপর মেঘে মেঘে অনেক বেলা হলো। শুধু জানি এর ছয় বছর পর যখন বুয়েট থেকে বের হই- আমার সবচেয়ে কাছাকাছি যে মানুষটাকে দেখতে পেয়েছিলাম তা অনিন্দিতা, ঠিক সেই প্রথম দিনটার মতো।:) জানি না হয় তো ট্যুরই আমাদের কাছাকাছি এনেছিল, আর সেই প্রত্যেকটা ভ্রমণই ছিল এক কথায় awesome।
আশা করছি এবারেরটাও হবে।:)
-------------------------------------

ভাগ্যিস, অনিন্দিতা আমার একেবারে বিপরীত চরিত্র- আর ব্লগ পড়তে পছন্দ করে না। নইলে আমি কচুকাটা হয়ে যেতাম!
আমাদের তিনজনের একত্রে কোন ছবি নাই- দেওয়ার ইচ্ছা ছিল, শুধু তিনজনের হাত-পায়ের ছবি আছে।/:):P
ছবিটা অনিন্দিতার তোলা, আমাদের সেন্টমার্টিন ভ্রমণের সময়- সেবার আমার ক্যামেরা চুরি হয়ে যায় বলে কোন ছবি নেই :(
--------------------------------------------

তিন স্টুজীর ছোট্ট একটা ট্যুরঃ মাওয়ার চরে Click This Link
তিন স্টুজী এবার কুয়াকাটায়... Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:১৪
৫২টি মন্তব্য ৫২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×