আমাদের ছোটবেলায় প্রতিদিন নিয়ম কইরা দিনের বেলায় চুরি হইত আর রাতের বেলায় ডাকাতি।ডাকাতরা বেবাক কিসিমের মুখোশ পইরা, অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া আইসা স্বর্ণালংকার, টাকাকড়ি থেকে শুরু কইরা শ্বশুরবাড়ি থেকে আসা পিঠাপুলি পর্যন্ত লুট কইরা লইয়া যাইত।
সেই সময় কালাইয়ার রুটির দোকানই ছিল যাবতীয় খবরের উৎস। কালাইয়ার রুটির দোকানই তখনকার সময়ের একমাত্র টেলিভিশন,স্থানীয় পত্রিকা, ফেসবুক।সবার আগে সর্বশেষ সংবাদ পাওয়া যাইত সেই রুটির দোকানে।গতরাতে কোন এলাকায় কার বাড়ীতে কিভাবে ডাকাতি হইছে,কি কি নিয়া গেছে এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য,উপাত্ত আমরা
সকাল বেলা রুটি আনতে যাইয়া রুটির সাথে বাড়ীতে নিয়া আসতাম।তারপর সারাদিন বাড়ীতে-গাড়ীতে-মাঠে-ঘাটে-হাটে ডাকাতদের নিত্যনতুন কীর্তিকলাপ আলোচিত হইত।সর্বত্র লোকমুখে ডাকাত এবং ডাকাতির এমনসব শৈল্পিক বর্ণনা শুইনা মনে হইত ডাকাতি যেন এক বিরাট শিল্প এবং একেকজন ডাকাত যেন বিরল প্রতিভার অধিকারী।ফলে আমার মনে ডাকাতদর্শনের এক অদ্ভুত ইচ্ছা জাগে।তারপর হঠাৎ প্রযুক্তির ধাক্কায় পাল্টে গেল জনজীবন।বাড়ীতে বাড়ীতে ডিশ লাইন,হাতে হাতে মোবাইল ফোন অভিশাপ হইয়া দাঁড়াইল নিখিল বাংলা ডাকাতদলের জন্য।রাতের বেলা মানুষ কখন ঘুমাইবে সে অপেক্ষা করতে করতে ডাকাতরাই একসময় ঘুমাইয়া যাইত।ফলে সেদিনের মত আর ডাকাতি করা হইত না।এভাবে আস্তে আস্তে হারাইয়া যাইতে লাগল ডাকাতির মত বিরাট শৈল্পিক কাজকারবার।ফলে ডাকাতদর্শনের সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য কোনটাই আমার হইল না।
বড় হইয়া এক বড় ভাইয়ের কাছে আমার ছোটবেলার সেই অদ্ভুত ইচ্ছার কথা জানাইয়া আফসোস করতেছিলাম।বড় ভাই কইলেন,আমি নাকি মানসিকভাবে অসুস্থ,আমার সুস্থতা দরকার। তাই তিনি আমারে পরামর্শ দিলেন,আমি যেন প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উইঠা প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করতে যাই।তাইলে আমার মনে এ ধরণের আজে বাজে ইচ্ছা আর জাগ্রত হইবেনা।
বড় ভাইয়ের পরামর্শমত আমি প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের পাশাপাশি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট হসপিটাল,
ক্লিনিক এসবও পরিদর্শন করলাম।বেশ কিছুদিনের মধ্যেই আমি হাতেনাতে ফল পাইতে লাগলাম।ডাকাতির মত একটি বিলুপ্তপ্রায় শিল্প এখনো টিকিয়া আছে দেইখা বেশ আশ্বস্ত হইলাম।অবশেষে আমার মানসিক দৈন্যদশা কাইটা গেল।আমি সম্পূর্ণরুপে সুস্থ হইয়া উঠলাম। ডাকাত দেখবার মত কোন ধরণের আজে বাজে ইচ্ছা আমার মনে এখন আর জাগ্রত হয়না।