সকাল ১০ টা।চট্টগ্রামের রাজপথে সূর্য্য বরাবরই তার নিঃশ্বাস ফেলে চলেছে।কোন এক জায়গা হতে কোনমতে ভীড় ঠেলে এক লোকাল টেম্পুতে স্থান পেলাম।গন্তব্য বিমানবন্দর।আমরা ভিতরে ঠাঁই পেলেও ১০-১২ বছরের এক শিশুকে দেখলাম গাড়ীর পা-দানিতে দাঁড়িয়ে থাকতে।কিছুক্ষণ পরপর গাড়ীর টিনের অংশে সজোরে আঘাত এবং দিকনির্দেশনা দিতে দেখে বুঝতে পারলাম,ছেলেটি এই গাড়ী পরিচালনা কমিটির কনিষ্ঠতম সদস্য। আদর করে যাকে আমরা নাম দিয়েছি "হেলপার"। হেলপার সে যেই হোক তার সাথে প্যাসেন্জারের একটা ঝামেলা হবেই।আমিও অপেক্ষা করছিলাম এরকম কোন দৃশ্য দেখার জন্য।বরাবরের মতই দেখিলাম কয়েকজন যাত্রী এবং হেলপার বালকের মাঝে ভাড়া নিয়ে কিছুক্ষণ উত্তপ্ত,উদ্ভট কথাবার্তা চলল।তার মধ্যে একজন অতি উৎসাহী, মহান হৃদয়ের মানুষ(!) কথাবার্তায় আবদ্ধ না থেকে কষে চড় বসিয়ে দিলেন শৈশব হারানো হেলপারের গালে। ততক্ষণে আমরা পৌছে গেছি বিমানবন্দরে।এক এক করে সকলেই নামল।যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করলাম,এ পেশায় কেন? বালক কেবল দুটো শব্দই উচ্চারণ করেছিল 'বাবা অসুস্থ '।
অসুস্থ শুধু তাঁর বাবাই নয়, অসুস্থ আমরা সকলেই।আমরাই অসুস্থ করে তুলেছি এ সমাজকে আর অসুস্থের ভান ধরেছে এ সমাজের বাবারা।
হোটেল,বাড়ী,গাড়ী, রাস্তাঘাট কিংবা দোকানপাট সহ সর্বত্র যে মানুষগুলোকে আমি আপনি অযথা গালিগালাজ করছি এমনকি গায়ে হাতও তুলছি,একবারও কি ভেবে দেখেছি তাদের মনের অবস্থাটা কি,কতটুকু বঞ্চনা নিয়ে তাঁরা এ পেশায় এসেছে?
আর কথা না বাড়িয়ে সকলেই ছুটলাম বিমানবন্দরের দিকে। কারণ সেখানে তখন অশ্রুসিক্ত নয়নে অপেক্ষা করছে মানবতা।না,মানবতা কোথাও থেকে আসে নি।কিছুক্ষণ পরেই উড়াল দেবে উন্মুক্ত গগনের উদ্দেশ্যে।আর কাঁদছে কেন জানেন? অপমানিত করে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে....
১/১/২০১৬
চট্টগ্রাম