১ পর্ব:
Click This Link
২ পর্ব:
Click This Link
প্রায় দুদিন হতে চললো।সাবমেরিন B59 টি সারগাসো সমুদ্রে লক্ষহীনভাবে ভাসছে।মাসানুকভ তার কাজের ফাঁকে ফাঁকে রেডিও সেন্টারে যাচ্ছেন।ক্যাপ্টেন সভোলনেস্কি দিনের বেশিরভাগ সময়ই রেডিও সেন্টারে কাটান।অদ্ভুদ ব্যাপার হচ্ছে সারাটা সময় তাকে মায়ামী বেতারের বার্তা শুনতে হচ্ছে।কমান্ডার ভেসিলি ক্রুদের বেশ উজ্জিবিত রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন।একটিবারও কাউকে বুঝতে দিচ্ছেননা যে তারা এখন হাইকমান্ড থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন।এরই মাঝে আমেরিকা বিশাল একটি নথি প্রকাশ করে যাতে স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যায় রাশিয়া জাহাজের মাধ্যমে কিউবাতে নিউক্লিয়ার বোমার যন্ত্রংশ পরিবহন করছে ।
রেডিওতে এই সংবাদটি প্রচার হওয়ার সাথে সাথে ক্যাপ্টেন তার কমান্ডারদের সাথে আলোচনা শুরু করলেন।ক্যাপ্টেন বুঝতে পারলেন আর চুপ করে বসে থাকার সময় নেই।হয় সামনে নতুবা পেছনে যেতে হবে।কমান্ডার ভেসিলি ও মাসানুকভ সামনে এগিয়ে যাওয়ার মত প্রকাশ করলেন।ক্যাপ্টেন এমনটাই চেয়েছিলেন।কয়েক ঘন্টা বাদে রেডিওতে প্রচার হল প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি আজ রাতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন দেবেন।ক্যাপ্টেন দু ঘন্টার জন্য যাত্রা বিরতি ঘোষনা করলেন।
ক্যান্টিন রুমে মাসানুকভ বেশি সময় থাকেননা।আজ ভেসিলিকে পেয়ে আলোচনা শুরু করলেন।
-কমান্ডার ভেসিলি!কি ভাবছেন ?গত দুদিন হল আপনাকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে?
-জ্বি আমার আশংকা সত্যি হতে যাচ্ছে দেখে খানিকটা বিচলিত।
-কিসের আশংকার কথা বলছেন?
-আমেরিকা হয়তো কোনভাবে বুঝে ফেলেছে কিছু সাব কিউবাতে যাচ্ছে।যদিও আমরা আর্ন্তজাতিক সমুদ্রের ভেতরেই আছি তবু আমেরিকা এমন কিছু চাচ্ছিল যাতে জাতিসংঘকে বোঝাতে পারে যে আর্ন্তজাতিক রেখার উপরেও তারা তাদের নিরাপত্বার লক্ষে কন্ট্রোল রাখতে পারে।এখন আমেরিকা ঠিক সেটিই পেয়ে গেছে।আজ রাতে বোঝা যাবে কি ব্যবস্থা নেয় তারা।
অক্টোবর ২২।প্রেসিডেন্ট কেনেডি প্রখমবারের মত জাতির সামনে স্নায়ু যুদ্ধে আমেরিকার অবস্থান তুলে ধরলেন।এই বিখ্যাত স্পিচটি কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস স্পিচ নামে পরিচিত।পুরো আমেরিকা টিভি এবং রেডিওর সামনে।একই সাখে চারজন রাশিয়ান সামরিক অফিসার।
‘’It shall be the policy of this Nation to regard any nuclear missile launched from Cuba against any nation in the Western Hemisphere as an attack by the Soviet Union on the United States, requiring a full retaliatory response upon the Soviet Union’’
কেনেডি একটি কোয়ারেন্টাইন এলাকার কথা ঘোষনা দিলেন যার ভেতরে কোন রাশিয়ান জাহাজ প্রবেশ করতে পারবেনা।এই কোয়ারেন্টাই এলাকাটি হল পুরো কিউবাকে বৃত্তের মাঝে ঘিরে রাখার মত।রেখাটি সারগাসো,গলফ অফ মেক্সিকো এবং ক্যারিবায়ান সাগরকে স্পর্শ করে।
আমেরিকা তার পরিকল্পনায় পুরোপুরি সফল হয়ে গেল।ঘোষনার সাখে সাথেই আমেরিকার ৪০টি ডেষ্ট্রয়ার ,৪টি এয়ারক্রাফ্ট এবং ৩৫০টি যুদ্ধ বিমান পুরো কোয়ারান্টাইন এরিয়ায় অভিযান শুরু করলো।
অক্টোবর ২৩।রাশিয়ান B59 সাবটি আমেরিকার চোখ ফাঁকি দিতে সমুদ্রের তলদেশে অবস্থান নিল।এদিকে আমেরিকাও চুপ করে বসে নেই।পুরো এরিয়াতে জাহাজ থেকে একের পর এক সোনার বোম নিক্ষেপ করে চলেছে ।সোনার বোম এমন একটি বোম যা শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে তলদেশে লুকিয়ে খাকা সাবমেরিন ডিটেক্ট করতে পারে।কিছু দিনের মাঝে আমেরিকান নেভি একটি নির্দিষ্ট এলাকা খুজে পেল যেখানে একটি সাবমেরিন লুকিয়ে আছে।সাবের অফিসার এবং ক্রুরা প্রচন্ড কষ্টে সময়গুলো পার করতে লাগলেন কারন ব্যাটারি চার্জ প্রায় শেষ হবার পর্যায়।রিচার্জের জন্য সারফেসে ওঠার সুযোগ নেই। এয়ার কন্ডিশনিং কলাপ্স করেছে চার্জের অভাবে।পুরো সাবের তাপমাত্রা দাড়িয়েছে ৫০ থেকে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।ডিজেল রুমের অবস্থা আরো সঙ্গিন।সেখানে ৭০ এর উপর।এবং এই অবস্থা কয়েক মুর্হুতের জন্য নয়,ঘন্টার পর ঘন্টা।তবুও কোন অফিসার কিংবা ক্রুর কোন অভিযোগ নেই।প্রকৃতপক্ষে সাবটি তৈরি করা হয়েছে আর্কটিকের হীম শিতল পানিতে চলার উপযোগী করে।এর এয়ারকন্ডিশনিং সারগাসোর তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে আনার মত নয়।তার উপর আবার ব্যাকআপ জেনারেটর বন্ধ চার্জের অভাবে।কয়েক ঘন্টার মাঝে জাহাজে তীব্র পানির অভাব শুরু হয়ে গেল।শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকের সারাদিনের জন্য বরাদ্দ হলো মাএ এক গ্লাস পানি।অফিসার এবং ক্রুরা এত অসহনীয় পরিস্থিতিতের ভেঙ্গে পড়লেননা।এরই মাঝে মরার উপর খাড়া ঘা হলো সোনার বোমগুলো।বোমগুলো বিকট আওয়াজ করে বিষ্ফোরিত হয়।মাসানুকভের মনে হয় যেন কেউ হ্যামার দিয়ে তার মাথায় বাডি দিচ্ছে।রেডিও অফিসার ভ্লাদিমিক আরো একটি দুঃসংবাদ দিয়ে গেলেন।কিউবার উপকূলে একটি আমেরিকান যুদ্ধ বিমান বিদ্ধস্থ হয়েছে রাশিয়ান ক্ষেপনাস্রের আঘাতে।
২৪ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট কেনেডি যুদ্ধের প্রস্তুতির ঘোষনা দিলেন।সামনে এখন শুধু পারমানবিক যুদ্ধ।ক্যাপ্টেন সভোলনেস্কি ৩দিন পর ধৈয্য হারিয়ে ফেল্লেন।সাবের অসহনীয় পরিস্থিতি,সোনার বোমের তীব্র শব্দে তিনি আর নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারলেননা।চোর পুলিশ খেলতে খেলতে তিনিও ক্লান্ত।আমেরিকান নেভি বুঝে ফেলেছে এই অবস্থায় বেশিদিন লুকিয়ে থাকা রাশিয়ানদের পক্ষে সম্ভব নয়।তাই তারা পরক্ষ্যভাবে সোনার বোম দিয়ে মানষিক যন্ত্রনা দিতে লাগলো ।
অক্টোবর ২৭।মাইকে ঘোষনা এল।কমান্ডার ভেসিলি, কমান্ডার মাসানুকভ, সামরিক অফিসার লেভিস এবং স্পেশাল অফিসার রিভন ইমিডিয়েট রির্পোট করুন।প্রায় এক নিঃশ্বাসে সবাই ছুটে চললেন অপারেশন রুমে।যাওয়ার পথে মাসানুকভ রেডিও রুম হয়ে গেলেন।ভ্লাদিমিক জানালো এখনো মস্কোর সাখে কোন যোগাযোগ হয়নি।অপারেশন রুমে প্রত্যেক অফিসার এসে পড়লেন।ক্যাপ্টেন এক মুহুর্তের জন্য চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে কিছু একটি বললেন।হয়তো কোন ধর্মীয় বানী।তারপর শুরু করলেন...... কমরেড বিগত কয়েকদিন আমরা রাশিয়ার সাখে কোন প্রকারের যোগাযোগ করতে পারিনি।আমরা এখনো নিশ্চিত নই রাশিয়ার পরিস্থিত কি রকম।যাত্রার শুরুতে আমাকে নির্দেশ দেয়া ছিল যে আমি সেনা কমান্ডারদের মতামতের ভিত্তিতে যে কোন পদক্ষেপ নিতে পারবো।রাশিয়াকে যদি কেউ রক্ষা করতে পারে তবে সেটা আমি আপনি আপনারা।এভাবে শত্রুর ভয়ে লুকিয়ে থাকার চেয়ে বীরের মত যুদ্ধ করা আমার কাছে অনেক শ্রেয়।তাই আমার আদেশ থাকবে যেন আপনারা আমার এই মতামতে পূর্ন সহযোগীতা করেন।অফিসাররা সকলেই সমস্বরে বলে উঠলো ইয়েস কমরেড।চুপ রইলেন একজন।ভেসিল আরকিপভ।মুহুর্তের ভেতর অফিসার লেভিস এবং রিভন নিউক্লিয়ার রিয়েক্টরের সুইচ চালু করলেন।নিউক্লিয়ার র্টপেডোটি তার লঞ্চিং পজিশনে চলে আসলো ।
-কমান্ডার আপনার চাবিটি রিয়েক্টরের লকে সেট করেন।বললেন ক্যাপ্টেন সভোলনেস্কি
মাসানুকভ চিন্তা করারও সুযোগ পেলেননা।ইতঃস্তত ভাবে এগিয়ে দিলেন ক্যাপ্টেনের দিকে।সভোলনেস্কি মনিটরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন নিউক্লিয়ার র্টপেডো লঞ্চিং পজিশনে।তিনি লঞ্চিং বাটনে প্রেস করতে চাইলে প্রখমে তিনটি চাবি সেট করে অন করতে হবে।সভোলনেস্কি হাত বাড়ালেন ভেসিলির দিকে।
-না ক্যাপ্টেন এটি সম্ভব নয়।আত্ববিশ্বাসের সুরে জানালেন ভেসিল
-কিন্তু এটি আমার আদেশ।
-জ্বি কিন্তু নিউক্লিয়ার বোমা নিক্ষেপের দায়িত্ব আমাদের তিনজনের।এবং সামরিক আইন মতে আমাদের মাঝে কেউ যদি দ্বিমত পোষন করে তবে এটি বন্ধ করতে হবে।
-আপনি কেন আমেরিকাকে বাচাতে চাইছেন কমান্ডার!!
-দেখুন ক্যাপ্টেন আমাদের একটি ভুল হয়তো পরো সভ্যতার মানচিএ বদলে দিতে পারে।সরকার ভুল হতে পারে কিন্তু মানুষ নয়।আমাদের যুদ্ব আমেরিকান সরকারের সাথে।কোটি কোটি নিরীহ জনগনের সাথে নয়।
জীবনে এই প্রথমবারের মত ক্যাপ্টেন সেভেলনেস্কি তার স্বীদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হলেন।জয়ী হল ভেসিলি। তার সাথে পুরো মানব সভ্যতা।
পরের ইতিহাস খুব দ্রুতই শেষ করবো।সাবটি সমুদ্রপৃষ্টে ভেসে উঠলো।যেহেতু সাবটি কোয়ারেন্টাইন সীমানায় প্রবেশ করেনি তাই আমেরিকানরা কিছুই করেনি বরংচ পথ দেখিয়ে দিলো চলে যাওয়ার দিকে।এ ঘটনার অল্পকিছুদিন পরই রাশিয়া আর আমেরিকার আলোচনা শুরু হয়ে যায়।একে অপরের শর্ত মেনে নেয়।স্নায়ু যুদ্ধ থেমে যায় আর বহুবছর অপ্রকাশিত থাকে একজন সত্যিকারের মানবতাবাদীর নাম।ভেসিল আরকিপভ
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩০