১৯৬২ সালের অক্টোবরের শুরুর দিকের কথা ।রাশিয়ার কোলা বে উপকূল থেকে ৪টি সাবমেরিনার যাত্রা শুরু হচ্ছে।সময়টা আমেরিকা আর রাশিয়ার স্নায়ু যুদ্ধ শুরু হওয়ার চুড়ান্ত মুর্হুতের।এমন একটি গোপন মিশন শুরু হতে চলছে যার সর্ম্পকে শুধুমাএ সাবের ক্যাপ্টেন,কমান্ডার,রাজনৈতিক কমান্ডার এবং সামরিক অফিসার অবগত।সাবমেরিনের প্রত্যেক ক্যাপ্টেনকে একটি গোপন খাম দেয়া হল যেটা শুধুমাএ রাশিয়ার সমুদ্র উপকূল অতিক্রম করার পরই খোলা যাবে।চারটি সাবই(সাবমেরিন) পরিচিত B59 নামে।এমনি একটি সাবমেরিনের রাজনৈতিক কমান্ডার মাসানুকভ।সাহসী,দেশপ্রেমিক এবং সৎ একজন ব্যক্তি।পার্টি এবং দেশের জন্য জীবন দিতে দ্বিতীয়বার ভাবেনা।মাসানুকভ পুরো অপারেশনের তথ্য জানেন।কিন্তু তার মনে অনেকগুলো শংকা ভর করছে।তার একটি হল এত বড় অভিযানের জন্য সঠিক সাব নেয়া হল কিনা !!B59 রাশিয়ার সবচেয়ে অত্যাধুনিক পারমানবিক সাব কিন্তু কথনো এত লম্বা পথ অতিক্রম করেনি।তাছাড়া হ্যারিকেনের আশংকার কথাও শোনা যাচ্ছে ঐ আটলান্টিকের বুকে।অপারেশন রুমে এসব চিন্তা করতে করতে হঠ্যাৎ ক্যাপ্টেন সভোলনেস্কি এসে পড়লেন।মাসানুকভ দাড়িয়ে স্যালুট দিলেন।সভোলনেস্কি হলো অফিসারদের কাছে এক অতিমানবিক ব্যক্তি।লোকটির কথা বলার ধরন, ভাষা এবং সময়পযোগী সিদ্ধান্ত অবিশ্বাস্য রকমের।কম্পানির প্রত্যেক অফিসার তাকে ঈশ্বেরর মত মানে ।
অতিসন্তর্পনে সাবগুলো তাদের গোপন অভিযান শুরু করলো।এই সময়ে অপারেশন রুমে প্রবেশ করলেন সাবের কমান্ডার ভেসিল আরকিপভ।মাসানুকভ এবং সভোলনেস্কি দাড়িয়ে তাকে স্বাগত জানালেন।স্যার আপনি কি মস্কোর সাথে যোগাযোগ করেছেন ?কিছুটা আত্ববিশ্বাসের সুরে প্রশ্ন করলেন ভেসিল।হ্যাঁ কমান্ডার আজ ভোরের দিকে জেনারেল গোরস্কভের সাথে কথা হয়েছে।তিনিই আমাকে আপনাদের কথা বললেন।আপনাদের পেয়ে আমি খুবই আত্ববিশ্বাসী।ক্যাপ্টেন চোখের দিকে তাকিয়ে ভেসিল এবং মাসানুকভ খুব সম্মানিত বোধ করলেন।রেডিও অফিসার ভ্লাদিমিকের সাথে মাসানুকভের কিছু দিনের ভেতর ভাল একটা সুসম্পর্ক তৈরি হয়ে গেল।ভ্লাদিমিক তার শহর কাজানের ছেলে।মিশুক এবং আড্ডাবাজ ছেলে।কিন্তু কাজের ব্যাপারে খুবই সচেতন।রেডিও অফিসারের কাজ কয়েক ঘন্টা পর পর মস্কোতে তাদের অবস্থান জানানো।ভ্লাদিমিক রাশিয়ার উপর আমেরিকার খবরদারিতে খুবই বিরক্ত এবং পারমানবিক যুদ্ধের ব্যাপারে অতিশয় ভীত।আসলে ভীত হওয়াটাই স্বাভাবিক।আমেরিকা তার ইটালিয়ান এবং তুরষ্কের ঘাটি থেকে দুটি পারমানবিক বোম তাক করে আছে রাশিয়ার দিকে।রাশিয়ার কড়া প্রতিবাদ স্বত্বেও আমেরিকা একচুল সরে আসছেনা।এদিকে UN এ আমেরিকা অভিযোগ করছে যে রাশিয়া গোপন গোপনে কিউবাতে পারমানবিক ক্ষেপনাস্র নিক্ষেপের প্রক্রিয়া চালু করেছে এবং গোপনে কিউবার সমুদ্র উপকূল দিয়ে পারমানবিক বোম চোরাচালান করছে।এর স্বপক্ষে অবশ্য অনেক প্রমানও দেখিয়েছেন আমেরিকান প্রতিনিধি।যাত্রার ৫ দিন পর ক্যাপ্টেন সভোলনেস্কি তার গোপন খামটা খুললেন।এক নিশ্বাসে পুরো চিঠিটি পড়লেন।চেহারায় কোন ভাবান্তর লক্ষ্য করা গেলনা।কমান্ডার অপারেশন রুমের সেন্ট্রাল ফোনে কথা বলা শুরু করলেন।মাইকের মাধ্যমে পুরো সাবের অফিসার এবং ক্রুদের বলতে লাগলেন ,প্রিয় কমরেড আজ আমরা রাশিয়ার উপকুল পার হয়ে হাজার মাইল দূরে একটি মিশনে যাচ্ছি।আমাদের জীবনের চেয়েও শত সহস্র গুন বেশি গুরুত্বপূর্ন এই মিশন।আজ আমরা প্রতিজ্ঞা করি যে রাশিয়াকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে তৈরি থাকবো।বিপ্লব জয় হোক ।রাশিয়া দীর্ঘজীবী হোক।সাবের ক্রু আর আফিসাররা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে অভিনন্দন জানাতে লাগলো এমন একটি দেশ রক্ষার সুযোগ পাওয়ার জন্য।হঠ্যা মাইকে ক্যাপ্টেনের আওয়াজ।কমান্ডার সভোলনেস্তি এবং কমান্ডার ভেসিলি রির্পোট করুন।অতিদ্রুত তারা ক্যাপ্টেন সামনে উপস্হিত হলেন।অপারেশন রুমের দরজা লক করে দিলেন ক্যাপ্টেন।রুমে আগে থেকেই সামরিক অফিসার লেভিস এবং স্পেশাল অফিসার রিভন উপস্থিত ছিলেন।ক্যাপ্টেন সবার সামনে এসে দাড়ানের।কমরেড ! কিছু তথ্য দিতে আপনাদেরকে এখানে ডাকা হয়েছে।আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন আমাদের এই সাবের নিচের কার্গোতে একটি পারমানবিক বোমা রয়েছে যেটা আমাকে এবং বাকি ৩টি সাবের ক্যাপ্টেনকে জানানো হয়েছে। মস্কো এটিও জানিয়েছে যে প্রত্যেক সাবের প্রধান ৩জন অফিসারের সম্মতিক্রমে আমরা এটি প্রয়োজনে ব্যাবহার করতে পারবো।এই রকম মুহুর্তে আমি আপনাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে গোপনীয়তা এবং সহযোগিতা আশা করছি।ক্যাপ্টেন তিনটি চাবি বের করলেন। একটি এগিয়ে দিলেন সভোলনেস্তির দিকে ।আর একটি দেয়া হল ভেসিলিকে ।ভেসিলিক চাবিটির দিকে তাকিয়ে রইল।লোকটার চোখে মুখে বিশ্ময়(চলবে.....)