somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃ বাড়ি নং ১৩. পর্বঃ১

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মাথার উপর ঘটঘট আওয়াজ তুলে ফ্যান চলছে।কিন্তু বাতাসের ছিটেফোটা গায়ে লাগছে না। চৈত্রের ভ্যাপসা গরম যেন উপহাস করছে ফ্যানের বাতাসকে। ঘিয়া রঙের শার্টটা ঘামে একদম লেপ্টে আছে আসগর সাহেবের। পেনশনের টাকাটা নেবার জন্য ৩ দিন এসেছেন। একবারও কাজ হয় নি।
আজও হবে বলে মনে হয় না। বেশ মোটা অঙ্কের ঘুষ না দিলে এসব কাজ কিছুতেই হয় না। কিন্তু এতো টাকা ঘুষ দেবার মতো অবস্থা তার নেই।

চোয়াল ভাঙা চিমশানো মুখের কেরানী এসে তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে হাত চুলকাচ্ছেন আর বলছেন, "দেখেন আজগর সাহেব। আপনার কাগজপত্রে কিছু ঝামেলা আছে, আপনার নামে এক জায়গায় 'স' আর জায়গায় 'ছ'। এজন্য তো বিরাট মুসিবত হচ্ছে। বিরাট ক্রিটিকেল কেস। আপনার আরও কিছুদিন সময় লাগবে। আর কাজ তাড়াতাড়ি করকে গেলে তো...... হে হে হে বুঝেন ই! ", ময়লা দাঁত বের করে হাসলো সে।
"না ভাই, দেরিতেি হোক আমার কোন সমস্যা নাই, আমার টাকা পয়সার কোন টানাটানি নাই!", উঠে দাড়িয়ে হনহন করে হাঁটা ধরলেন আসগর সাহেব। বিরক্তিতে তার নাক জ্বলছে। হঠাৎ রেগে গেলে বা কষ্ট পেলে তার এমনটা হয়। নাকের পাশটায় কেমন যেন জ্বলা জ্বলা ভাব। ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে হবে। বেন এমনটা হয়।

রাস্তায় চলে এসেছেন তিনি। প্রচন্ড রোদে চোঁখ ধাধিয়ে যাচ্ছে। শার্টটা ঘামে ভিজে জবজবা। তিনি অফিসে বলে এসেছেন ঠিকই তার টাকা পয়সার টানাটানি নেই, কিন্তু তার ব্যাপারটা তিনিই জানেন। দুই ছেলের বড়টা বিয়ে করেছে, একটা ছেলে আছে আড়াই বছরের,কথা তেমন বলতে পারে না কিন্তু আসগর সাহেবকে দেখলেই 'দাদ্দা, দাদ্দা' শুরু করে । ছোট ছেলেটা অনার্সে পড়ছে পাশের কলেজে। আর মেয়েটা এবার কলেজে উঠলো। বড় ছেলের অল্প টাকার চাকরী, তাতে বউ-বাচ্চা পালতেই হিমশিম খাবার কথা, তারউপর দুই ভাই বোনের পড়ার খরচ, এখন আবার যোগ হয়েছে বুড়ো বাপটার খরচ। ভাগ্যিস, তাদের মা টা অনেক আগেই মরে গিয়েছিল, নাহলে তো মা টাকেও পালতে হতো ।

এমন অবস্থায় ছেলের কাছে হাত পাততেও লজ্জায় মাথা কাটা যায়। তাই পেনশনটা তার খুবই জরুরী ছিল।

একটা রিকশা নিলে বেশ হতো, যা গরম! কিন্তু খামখা ২৫ টাকা খরচ করে বাবুয়ানির দরকার নেই। এমনিতেই মফস্বল এলাকা, রিকশাভাড়া বেশি । এরচে একটু পা চালিয়ে বড় রাস্তায় উঠে যেতে পারলে বাঁচি । সেখানে রাস্তার পাশে গাছ আছে, ছায়ায় ছায়ায় চলে যাওয়া যাবে। রাস্তার পাশে তরমুজের টুকরা বিক্রি করছে, এতটুকুনি টুকরা ১৫ টাকা । লাল টুকটুকে তরমুজ। খেতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু খেলে আবার খালি খালি ১৫ টাকা লস। এখন সংকট সময়, সামলে চলতে হবে । পেনশনের টাকাটা পেলে একটা আস্ত তরমুজ কিনে বাসায় যাবেন, মনে মনে ঠিক করলেন তিনি।

এক গেলাস লেবুর সরবত খেলেন আসগর সাহেব।রোদে যেন শরীরের সব রস উবে যাচ্ছে। পাঁচ টাকা গ্লাস। গ্লাসে অল্প একটু লেবুর রস আর বিট লবণ দিয়ে বার কয়েক ঝাকুনি দেয়া হয়। তারপর এক টুকরা বরফ ছেড়ে দিয়ে সরবত বানানো হয়। খেতে খারাপ না কিন্তু খাওয়াটা ঠিক হলো কি না বুঝতে পারছেন না। পাঁচ টাকায় অটোতে করে যাওয়া যেত। তাহলে এতটা হাটতে হতো না । থাক কি আর করা? খেয়ে যখন ফেলেছেন, এখন তো আর কিছু করার নেই!

কি যেন একটা ভাবতে ভাবতে হাটার গতি বাড়ালেন। তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌছুতে হবে।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন পড়বেন, ফিকাহ জানবেন ও মানবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০



সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×