একটা কথা বেশ শোনা যাচ্ছে, তা হলো বাংলা কবিতার মূল ধারা! লেখাটা পড়লাম আজ। বাংলা কবিতার মূলধারা/ যতীন সরকার
এই জাতীয় কথা বেশ আগেও শুনেছি আমার প্রিয় গন্য মান্যদের কাছে। আমি আমার কথা টা একটু বলি। এর মনে তার বিরোধিতা আমি করছি না। আমি বাংলা কবিতার ধারা বলতে কি বুঝি তাই একটু ব্যাখা করলাম। লেখাটা পরে আরও বড় করার ইচ্ছা আছে। আর দেখার ইচ্ছা আছে আমাদের সময়ের কবিরা কি ভাবছেন বিষয়টা নিয়ে।
কবিতার মূলধারা বলে কিছু নেই বোধ হয়। কবিতা আসলে নানা রকম। সমস্ত রকমারি কবিতাকে এক সাথে একই কাব্য মলাটের ভেতর স্থান না দিলেই বিপত্তি বেশি। মূলধারার বা তার বিপরীত যে ধারা যে কোন একটা কে মূল ধারা বা গৌন ধারা হিসাবে ধরলে তো কথা একই থাকে। কেই কাউকে না মানার, না স্বীকৃতি দেওয়ার ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে আমাদের কাব্য ধারায়। কবিতা নানা রকম, নক্ষত্রের নিচে অনেক পথ, বহু পথিক। এই সমস্ত পথিক এবং পথকে স্বীকৃতি দেওয়াটা মূখ্য। তা না হলে আমার আমাদের কবিতা কেন্দ্রিক চলে আসা একটা অপ্রয়োজনীয় বির্তকের অবসান করতে পারবো না। আসলে কবিতার কি মূলধারা বলে কিছু আছে? থাকলেও কি তা আমাদের কাম্য?
এখন কথা উঠতে পারে এটা কবিতার বিশেষ একটা স্রোত আমাদের চোখে পড়ে বেশি। সেই স্রোতের নাম '' ত্রিশের আধুনিক বাংলা কবিতার ধারা''। আর এর বিপরীতে দাড় করানো হয় লালন ফকির, পাগলা কানাই বা জালাল খাঁ বা শাহ আব্দুল করিমকে। এই দুটো সচল ধারার উভয়কেই আমাদের গ্রহন করার সক্ষমতা থাকা জরুরী। তবে দুটো আমি মিলিয়ে ফেলতে চাই না । বা বলতে চাই না এটা মূলধারা আর ওটা নয়।
কারণ হিসাবে বলা যায় সম্ভবত সব ভাষার কবিতার ইতিহাস আসলে প্রকাশের ইতিহাস। প্রকাশ ভঙ্গিটা পার্থক্য তৈরি করে দেয়। এই প্রকাশের সাথে গৌন ভাবে যুক্ত হয় টেকনিক, প্রকরণ। এছাড়া বিশ্ব কবিতা আর প্রান্তু কবিতা যাই বলা হোক না কেন সে বিরাজ করে জনগোষ্ঠির আবেগ, অনুভব,বিষয়, অলংকার, পদ্ধতি শেষতক দৃষ্টিভঙ্গি মধ্যে। সাইজির ধারা আর যাকে মূল ধারা হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে এদের মধ্যবর্তী নানা বিষয়ের মিল পাওয়া যাবে। কেনান দুটো ধারাই র্চ্চা করা হয়েছে বাংলা ভাষাতে। বৃহদার্থে যে কোন জনগোষ্ঠির ভাষা সেই জনপদের চিন্তু চেতনাকে নিয়ন্ত্রন করে এবং সমস্ত উপলব্ধিকে একটা অবহের মধ্যে দিয়ে বয়ে যেতে বাধ্য করে। এমন বৃহতম জায়গা থেকে দেখলে বলা যেতে পারে উভয়ই বাংলা কবিতা। তবে মাত্র প্রকাশ ভঙ্গিগত পার্থক্যের কারনে আমাদের বলা উচিত হবে কি এটা মূলধারা আর ওটা নয়?
আসলে সমস্তই বাংলা কবিতা। কোন কিছু কে উন্নাসিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখাটা আমাদের প্রবনতা না হওয়াই ভালো। টোটাল বাংলা কবিতার মুক্তি আমরা চাই। এর জন্য দরকার শিল্প-অভিজ্ঞতা। বিপুল এক শিল্প-অভিজ্ঞতা না থাকলে আমরা শিল্পকে কবিতাকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হবো না সম্ভবত। সমস্তকে ধারা উপধারাকে গ্রহন করে মাত্র একটাই ধারা তৈরি করা দরকার তা হলো ''বাংলা কবিতার ধারা'' । আমাদের উপলব্ধি প্রধানত দুই রকম; এক. বিশ্লেষণ জ্ঞান ( তথ্য নির্ভর ) দুই. প্রজ্ঞা ( উচ্চতর ইন্দ্রেয় নির্ভর )। কবিকে এই প্রজ্ঞাতে পৌচ্ছাতে হয় আমি মনে করি। বর্তমান যুগের ধারাটা তথ্য নির্ভর, কিন্তু আমাদের মুক্তিটা প্রজ্ঞা নির্ভর। এখানেই দ্বন্দ্বের শুরু।