দেশের সবচেয়ে নবীন মোবাইল ফোন অপারেটর এয়ারটেল টানা লোকসানের কারণে অর্থ সংকটে পড়েছে। রবি-এয়ারটেল একীভূত হওয়া নিয়ে বন্ধ রয়েছে সকল বিনিয়োগ। ফলে দিশেহারা এয়ারটেলের প্রায় ১২৮ জন কর্মী ইতিমধ্যেই চাকরি ছেড়েছেন। আরও অনেকেই চাকরি ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
ভারতী এয়ারটেলের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুয়ায়ী, এপ্রিল ২০১৪ থেকে মার্চ ২০১৫ পর্যন্ত এয়ারটেল বাংলাদেশের মোট সম্পদের অর্থমূল্য ৩ হাজার ২৬০ কোটি রুপি। প্রতিষ্ঠানটির দেনার পরিমাণ ৪ হাজার ৫৫৮ কোটি রুপি। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী লোকসান হয়েছে ৬৭৪ কোটি টাকা। বিটিআরসিতে জমা দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী, এয়ারটেলের এসব দায়দেনার দায়িত্ব নেবে রবি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসে এয়ারটেলের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এখন ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা। এই অর্থ ছাড়া ভারতী এয়ারটেল থেকে এখন নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে নতুন কোনো বিনিয়োগ আসছে না। অন্তর্বর্তীকালীন এ সময়ে বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও ঋণ নিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।
সংবাদ মাধ্যম শিক্ষাবার্তায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে একীভূত হতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করে রবি-এয়ারটেল। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একীভূত হওয়ার ঘোষণার ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত দিতে না পারায় দুটি প্রতিষ্ঠানেরই আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।
একীভূতকরণের ঘোষণা দেওয়ার পর গত টানা দুই প্রান্তিকে রবির মুনাফা কমে গেছে। গত বছরের তৃতীয় (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রান্তিকে রবির মুনাফা ছিল ১১৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা, সেটি চলতি বছরের প্রথম (জানুয়ারি-মার্চ) প্রান্তিকে কমে ৯২ কোটি টাকা হয়েছে। ২০১৪ সালে রবির মোট মুনাফা ছিল ৪৪০ কোটি টাকা, সেটি ২০১৫ সালে কমে হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা।
একীভূতকরণের বিলম্বের কারণে রবির চেয়ে এয়ারটেলের বেশি ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। এয়ারটেলের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় গত ১০ মাসে শতাধিক কর্মী চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। একীভূত হওয়ার আগে গত বছরের আগস্টে এয়ারটেলের স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ছিল ৫২৮, যা এখন কমে ৪০০ হয়েছে। অর্থাৎ গত ১০ মাসে ১২৮ জন এয়ারটেল কর্মী চাকরি ছেড়েছেন।
এদিকে সম্প্রতি ব্যবসায়িক কার্যক্রম একীভূত (মার্জার) করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ মাস সময় বাড়িয়েছে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা ও এয়ারটেল। অপারেটর দুটির মূল বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ ও ভারতী এয়ারটেল এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। দুই কোম্পানির যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, একীভূত হতে চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ ও ভারতী এয়ারটেল। এ বছরের জুনের মধ্যে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল দুই পক্ষ। সেই লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত ৩ মাস বাড়ানো হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৩৫