প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির জট খুলছে।
বেসরকারী প্রাথমিক শিক্ষকদের সদ্য ঘোষিত সরকারীকরন সাধুবাদ জানালেও তাদেরকে সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদ দেয়ায় হতাশায় ভুগছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। বিভিন্ন শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, এযাবতকাল পর্যন্ত সারা দেশে যে কটি প্রতিষ্ঠান বেসরকারী থেকে সরকারী হয়েছে তার কোনটিতেই প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে স্বপদে রাখা হয়নি । সেই আশায় বুক বেধে সরকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা ছিল যে তাদের পদ্দন্নতি হলে তারা সে সদ্য ঘোষিত সরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবে যোগদান করবে।কিন্তু সে আশায় বালি । ইতিমধ্যে সরকার তাদের স্বপদে বহাল রেখেছে। ফলে যারা বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে চাকুরি পেয়ে দীর্ঘদিন যাবত যারা সহকারী শিক্ষক হিসাবে রয়েছে সদ্য ঘোষিত সরকারীকরনের ফলে সেই সমস্ত প্রধান শিক্ষক তাদের তুলনায় অনেক যোগ্য সহকারী শিক্ষকের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে যা সহকারী শিক্ষকের মধ্যে হতাশায় রুপ নিয়েছে ।
তবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ‘প্রধান শিক্ষক’ হিসেবে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী কিছু দিনের মধ্যেই বিভাগীয় পদোন্নতির নির্দেশনা জারি হবে এবং তা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমেই করা হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্র জানায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তার মর্যাদা দেয়ার ফলে এখন থেকে ‘প্রধান শিক্ষক’ পদে পদোন্নতি প্রক্রিয়া পিএসসির মাধ্যমেই করতে হবে। মামলাসহ নানা জটিলতায় প্রায় এক যুগ ধরে সহকারী শিক্ষকদের বিভাগীয় পদোন্নতি আটকে ছিল। এতে করে সিনিয়র সহকারী শিক্ষকেরা গত ৮-১০ বছর একই পদে কর্মরত আছেন। অনেককে অতৃপ্তি আর বেদনা নিয়ে অবসরও নিতে হয়েছে। গত মে মাসে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) থেকে মামলা প্রত্যাহার এবং পদোন্নতির উপজেলাওয়ারী নির্ধারিত ছকে নির্ভুল গ্রেডেশন তালিকা প্রণয়নের নির্দেশ দেয়া হয়। আর গত ২৮ আগস্ট সারা দেশে প্রধান শিক্ষকবিহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের তালিকা চাওয়া হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। ডিপিইর কাছে চাওয়া এ তালিকা এক মাসের মধ্যে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে।
মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সন্তোষ কুমার অধিকারী এ ব্যাপারে বলেন, সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মামলার কারণে দীর্ঘ দিন পদোন্নতি বন্ধ ছিল। তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে এসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যাদি চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা বাড়িয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে। তাই প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) নির্দেশনার প্রয়োজন হবে। পিএসসির নির্দেশনার আলোকে শিক্ষকদের পদোন্নতি দেয়া হবে।
ডিপিই এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, দেশের আট হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এখানে সহকারী শিক্ষকেরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। তাই প্রধান শিক্ষকবিহীন স্কুলগুলোতে জোড়াতালি দিয়ে চলছে শিক্ষা ও পাঠদান কার্যক্রম। ফলে শিক্ষাসংক্রান্ত নানা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। বঞ্চিত সহকারী শিক্ষকেরা বিভাগীয় পদোন্নতির দাবিতে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর অহেতুক জটিলতার সৃষ্টি করে পদোন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করে। নিরুপায় হয়ে তারের উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সম্প্রতি প্রধান শিক্ষকের পদমর্যাদা বাড়িয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা করায় এখন থেকে এ পদে নিয়োগ দেবে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। এতে করে বিভাগীয় পদোন্নতির সুযোগ কমে আসছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে তিন ধাপে ২৬ হাজার ১৯৩টি নিবন্ধিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণ করা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা হচ্ছে ৬৩ হাজার ৮৬৩টি। পুরনো ৩৭ হাজার ৬৭০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে আট হাজার বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। সদ্য জাতীয়করণকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থা আরো করুণ। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২২ হাজার ৯৮১টির বেশির ভাগে প্রধান শিক্ষক থাকলেও তাদের যোগ্যতা-অভিজ্ঞতা সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের ধারে কাছেও নয়। অনেকের শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্কটও রয়েছে। তািই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী সদ্য জাতীয়করণকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবেসরাসরী নিয়োগ অথবা পদ্দোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক পদটি পূরন করা হলে প্রাথমিক শিক্ষার গুনগত মান যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি যোগ্য শিক্ষক হিসাবে প্রতিষ্ঠান প্রধান পাবে। অন্যথায় সদ্য জাতীয়করণকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লেখাপড়ার মানের কোন পরিবর্তন হবে না।
জাতীয়করণের কাজ এখনো শেষ হয়নি। সবগুলো স্কুল জাতীয়করণের কাজ শেষ হলে এখানে নতুন জটিলতা ও সমস্যা দেখা দেবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।