নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব তাঁরই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। [৫৭:২]
আল্লাহ্ মানুষের প্রাণ হরণ করেন তার মৃত্যুর সময়, আর যে মরে না, তার নিদ্রাকালে। অত:পর যার মৃত্যু অবধারিত করেন, তার প্রাণ ছাড়েন না এবং অন্যান্যদের ছেড়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে। [৩৯:৪২]
বিভিন্ন হাদিস এবং কোরানের একাধিক আয়াত অনুসারে প্রত্যেক মুসলমান এ বিষয়ে একমত হবেন যে জীবের জীবন নেয়ার কাজটি আল্লাহর আদেশে আজ্রাইল নামক ফেরেশতা করে থাকেন। অর্থাৎ আজ্রাইল এ কাজটি করে থাকেন আল্লাহরই নির্দেশে। কিন্তু একথা কি বলা যাবে যে আজ্রাইল কখনো কখনো মানুষের প্রাণ সংহার করে থাকেন শয়তানের নির্দেশে? এ প্রশ্নের উত্তরে সকল মুসলমানই নিশ্চয় একবাক্যে না, না করে উঠবেন। অথচ বাস্তবে এমনটিই ঘটছে না কি? শয়তানের নির্দেশেই কি কখনো কখনো আজ্রাইল মানুষের প্রাণ সংহার করছেন না? বিষয়টিকে এভাবে দেখা যাক -
প্রতিদিনই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও খুন হচ্ছে মানুষ। খুন হচ্ছে বৃদ্ধ, যুবা, তরুন, কিশোর। খুন হচ্ছে অপাপবিদ্ধ শিশু। আর খুনীকে ইন্ধন দিচ্ছে শয়তান। শয়তানের কাজই এমন। খুন, হত্যা, গুম, রাহাজানি, ধর্ষণ এমন নানান অপকর্মে মানুষের ভিতরে বসে বসে ক্রমাগত উস্কানী দিতে থাকে সে। কিন্তু যখন একজন খুনী শয়তানের প্ররোচনায় কারো বাসায় ঢুকে বাসার একজনকে খুলি লক্ষ্য করে গুলি করলো, তখন লোকটির মারা যাওয়ার জন্য মাথার গভীরে প্রবিষ্ট বুলেটটিই কি যথেষ্ট? নাকি দরকার আজরাইল ফেরেশতার সক্রিয় অংশগ্রহণ? আজরাইল আসবেন, নানান বীভৎস যন্ত্রনায় সেই লোকটির শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে থাকা আত্মা বা রূহকে বের করে নিয়ে আসবেন। তবেই না মাথায় গুলিবিদ্ধ লোকটির মৃত্যু হবে। আজরাইল যদি এই সময়ে এখানে না আসতেন তাহলে ঘাতকের সেই বুলেটের কি সাধ্য ছিল গুলিবিদ্ধ লোকটির মৃত্যু ঘটানো? না, ইসলামের দৃষ্টিতে তা মোটেই সম্ভব ছিল না। এবং গুলিবিদ্ধ এই লোকটির ক্ষেত্রে আজরাইল মহোদয় হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি মোটেই। ত্বরিৎ গতিতে চলে এসে তার কার্য সম্পাদন করেছেন যথারীতি। এবং এসেছেন আল্লাহতায়ালার নির্দেশে (আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া মানুষের মৃত্যু সম্ভব নয়)। তাহলে এই ক্ষেত্রে খুনটি বাস্তবায়ন হলো কার দ্বারা? আল্লাহর দ্বারা নয় কি? আল্লাহই এই নির্মম হত্যাকান্ডের বাস্তবায়নকারী নয় কি? শুধু তাই নয়, ঘাতকের হাতে গুলিবিদ্ধ এই লোকটি কখন কিভাবে মৃত্যুবরণ করবে তাও আল্লাহতায়ালা আগেই নির্ধারণ করে রেখেছেন।
আল্লাহ্ লোকটির জন্য এইরকম একটি বীভৎস মৃত্যু লিখে রাখলেন, দিনক্ষণ মেপে আজরাইল পাঠালেন। আর দোষ পড়লো বেচারা শয়তান এবং অতঃপর সেই নাচের পুতুল খুনীর ঘাড়ে! আর আল্লাহ যদি এই কথা লিখেই থাকেন যে এই লোকটির মৃত্যু হবে একজন নরঘাতকের গুলিতে, তাহলে শয়তান কি ঘাতকটিকে কুমন্ত্রণা দিয়ে আল্লাহর সেই অমোঘ পান্ডুলিপিরই মঞ্চায়ন করলো না?
আর যদি বলা হয় এ ধরণের নির্দেশ আল্লাহ প্রদান করেন নি, তাহলে কি এই দাঁড়ায় না যে এক্ষেত্রে ঘাতককে খুনের পক্ষে সফল উস্কানি দেয়ার পাশাপাশি শয়তানকে আরেকটি কাজও করতে হয়েছিল। আর তাহলো আজরাইলকে নির্দেশ দেয়া গুলিবিদ্ধ লোকটির প্রান সংহার করতে। এবং কি আশ্চর্য! শয়তানের কথায় সুরসুর করে চলেও আসে আজরাইল। আগেই বলা হয়েছে যে কোন মুসলমানই এতে একমত হবেন না যে শয়তানের নির্দেশে আজরাইল একাজটি করেছে। তাহলে খুনের ঘটনাটি চূড়ান্ত রূপ নিল কিভাবে? শয়তান এবং আল্লাহ উভয়ের ভূমিকাকে স্বীকার করে নিয়ে উত্তর কি এরকম হয় না যে এই নৃশংশ ঘটনাটি ঘটেছে শয়তান এবং আল্লাহর যৌথ প্রচেষ্টায়? এবং এও দাড়ায় যে এই খুনের ঘটনায় আল্লাহতায়ালা শয়তান এবং খুনীকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করেছেন (আজরাইল পাঠিয়ে)।
কোরান এবং হাদিসের আলোকে যেহেতু একথা সুস্পষ্টভাবেই বলা চলে যে আল্লাহই সকল মৃত্যুর নির্দেশদাতা তাহলে একথা একবাক্যে বলা চলে যে আল্লাহই সকল স্বাভাবিক এবং অস্বাভাবিক মৃত্যুর বাস্তবায়নকারী। আর একথা মেনে নিলে পৃথিবী কোথায় পড়ে থাকে, এই জগত সংসার কতটা নারকীয় হয়ে উঠে তা একবার ভেবে দেখেছেন কি? ডাক্তারের কাছে মানুষ যায় বাঁচার আশায়। কিন্তু কখনো কখনো দেখা যায় এই ডাক্তারের কারণেই রোগী মারা যায়। টিউমার কাটতে গিয়ে রোগীর কিডনী ফেলে দিয়েছেন, কাটাছেড়ার পর রোগীর পেটে কিংবা বুকে গজ, ব্যান্ডেজ, কেঁচি রেখেই সেলাই করে দিয়েছেন, কিংবা গরীব রোগীকে মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালে ফেলে রেখেছেন 'মহৎ' ডাক্তার - এধরণের ঘটনায় রোগী মারা গেছে এরকম উদাহরণ বাংলাদেশে অজস্র। কিছুদিন আগেও একটি ক্লিনিকে একজন শিশুকে 'সফল' অস্ত্রোপচার করার পর শিশুটি আর জেগে উঠেনি। বলা হল শিশুটির এনেন্থেসিয়া করিয়েছিল যে ডাক্তার তারই দোষে শিশুটির এই ঝরে পড়া।
এসমস্ত ক্ষেত্রে কি রোগীর আত্মীয়-স্বজন চুপ মেরে বসে থাকেন? না, এমনটি করেন না তারা। প্রতিবাদ করেন সাধ্যমতো। প্রবল ক্রোধে অপদার্থ, অযোগ্য, কান্ডজ্ঞানহীন ডাক্তারের কলার চেপে ধরেন, হাসপাতালে, ক্লিনিকে ভাংচুর করেন, এবং সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। (সম্প্রতি নায়ক মান্নার মৃত্যুর জন্য ছয় ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তার আত্মীয়-স্বজন।) নিদেনপক্ষে অইসব ডাক্তারের উদ্দেশ্যে ছুড়ে দেন অকথ্য, অশ্রাব্য গালাগাল। ডাক্তারের অযোগ্যতা কিংবা অবহেলা প্রমাণ হলে উন্নত বিশ্বে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের লাইসেন্স বাতিল হয়, জেল জরিমানা হয় এবং ক্ষতিপূরণ হিসাবে বাদীপক্ষ পান লাখ লাখ ডলার। এই যে এ সমস্ত ঘাতক ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলাগুলো হয় তার বিচারে বিচারক যদি বলেন, 'আল্লার মাল আল্লায় নিয়ে গেছেন। যেহেতু আল্লাহর নির্দেশেই সকল মানুষের মৃত্যু হয়, যে ডাক্তারের বিরুদ্ধে আপনারা হত্যা মামলা, কর্তব্যে অবহেলার মামলা করলেন তার বাপেরও সাধ্য ছিল না রোগীর মৃত্যু ঘটানো। আল্লাহর নির্দেশেই তা ঘটেছে। এবং রোগী যে এভাবে মারা যাবে তাও আল্লাহ লিখে রেখেছেন আগে থেকেই। ডাক্তারের মধ্য দিয়ে আল্লাহ্ কেবল তার ইচ্ছাকেই পূর্ণ করলেন। সুতরাং ডাক্তার এখানে নাচের পুতুল মাত্র। আর আপনারা তো জানেনই নাচের পুতুলের কোন বিচার হয় না। বিচার যদি এক্ষেত্রে করতেই হয় তাহলে বিচার হবে আল্লাহর।' তাহলে মামলার বাদীগণ কি বলবেন? তারা কি বলতে পারবেন 'না, না, ডাক্তারই আমাদের প্রাণপ্রিয় রোগীকে মেরেছে, আল্লাহ নয়। ডাক্তারের কারণে যে রোগী মারা গেল তার সুষ্পষ্ট প্রমাণ আছে আমাদের হাতে। ডাক্তার যদি দায়িত্বে অবহেলা না করতো, ডাক্তার যদি এটা না করে ওটা করতো কিংবা ওটা না করে এটা করতো, তাহলে আল্লাহ যতই আজরাইল পাঠাক না কেন আমাদের রোগী মারা যেত না। সুতরাং ডাক্তারের উপযুক্ত সাজা হোক।'?
মৃত্যু আল্লাহর অমোঘ বিধান। বান্দা যত চেষ্টাই করুক না কেন, যার যেভাবে মৃত্যু লেখা আছে তার মৃত্যু সেভাবেই ঘটবে। এর একচুলও নড়চড় হবে না। এ বিধান, এ নিয়তি মেনে নিলে মানুষ কখনোই সড়ক দুর্ঘটনা কমানো কিংবা শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার জন্য পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতো না। ডাক্তারের কারণে যাতে রোগীর মৃত্যু না ঘটে সে জন্যে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবতো না। হত্যাকান্ডের তদন্ত করতো না। খুনী, সন্ত্রাসীকে ফাঁসীতে ঝুলাতো না, জেলে ভরতো না। জীবানুরোধী টিকা আবিষ্কার করতো না। চিকিৎসা গ্রহণ করতো না। বাঘের হাত থেকে বাঁচার জন্য গাছের উপর মাচা বাঁধতো না। রাস্তা পারাপারের সময় এদিক ওদিক তাকাতো না।
এইতো কয়েক বছর আগে ময়মনসিংহ আর পটুয়াখালীতে যাকাতের কাপড় সংগ্রহ করতে গিয়ে পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে নিহত হলেন নয় জন হতদরিদ্র মহিলা। এই নির্মম ঘটনাটিকে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক ওয়াজ মাহ্ফিলের জনৈক হুজুর বিশ্লেষণ করছেন এভাবে -
ভাইসব, এই মহিলারা কি জানতেন যাকাতের কাপড় তাদের ভাগ্যে লেখা ছিল না? লেখা ছিল সাদা কাফনের কাপড়। তাদের ধারণা ছিল আরো কিছু দিন বেঁচে থাকবেন। অন্তত ততদিন যতদিন যাকাতের কাপড়টি শতছিন্ন হয়ে না পড়ে। কিন্তু দেখুন ভাইসব, তারা কি সেই কাপড় পড়তে পারলেন? এ থেকে কি বুঝা যায়? মানুষ মিছেই এই নশ্বর দুনিয়ার ধান্ধায় মশগুল। সে ভাবে না মৃত্যু তার পায়ের গুড়ালির সামনে দাড়িয়ে। যার যতটুকু হায়াত তার এক সেকেন্ডও বেশী বাঁচার সাধ্য তার নেই। শুনে ভিজে আসে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতার চোখ। গলায় জমে আবেগের বাষ্প।
প্রিয় পাঠক, এই হুজুর এবং আবেগে মাথা নুইয়ে আসা তার দর্শক-শ্রোতাগণের পক্ষে কি এখন সম্ভব নিচের কথাগুলো বলা?
১) সীমাহীন দারিদ্রের এই দেশ থেকে যদি দারিদ্রকে নির্মূল করা যেত তাহলে হত-দরিদ্র এই মহিলাদেরকে করুনার শাড়ীগুলো আনতে যেতে হতো না অই মরণযজ্ঞে। এবং সেক্ষেত্রে তাদের মৃত্যুও হতো না এভাবে পায়ের তলায় চাপা পড়ে।
২) এরকম একটি সম্ভাবনাকে সামনে রেখে (এর আগেও এদেশে যাকাতের কাপড় সংগ্রহ করতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে নিহত হয়েছে মানুষ) কাপড় দানকারীর আগে থেকেই এমন ব্যবস্থা করা উচিৎ ছিল যাতে এক বা একাধিক লাইনে থেকে দরিদ্রগণ একজন একজন করে কাপড় সংগ্রহ করতে পারে। তাহলে নির্ঘাত এমন নৃশংস ঘটনা ঘটতে পারতো না।
নির্বোধ এবং লোক দেখানো এই দানকারীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রজু করা উচিৎ।
৩) এধরণের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্যে উচিৎ ধনী এবং নির্ধনের এই বিশাল ফারাক বন্ধ করা। সকল ধনী তথা নির্লজ্জ রক্তশোষকগুলো যাতে তাদের উপচে পড়া অর্থের একটি নির্দিষ্ট অংশ কেন্দ্রীয় যাকাত ফান্ডে রেখে পাপস্খালনের সূবর্ণ সুযোগ গ্রহণ করতে পারে তার ব্যবস্থা করা।
সুললিত কন্ঠের এই হুজুরের পক্ষে কোনমতেই এই কথাগুলো বলা সম্ভব নয়। কেননা তিনি ইতোমধ্যেই আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন যে এমনই এক মৃত্যু অবধারিত ছিল সেই হতদরিদ্রগুলোর ভাগ্যে। সেই মৃত্যুকে বরণ করতেই তারা গিয়েছিল যাকাতের শাড়ি আনতে এবং পদপিষ্ট হতে।
কিন্তু আশার কথা এই যে, প্রতিটি মানুষই বিশ্বাসগতভাবে যে দেবতার পুজারীই হোক না কেন কার্যত সে নাস্তিক। 'হায়াত থাকতে মউৎ নাই' এই কথা সে মুখে বলে ঠিকই। কিন্তু এই কথা বলে সে বিশ তলা দালানের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে না, দাঁড়িয়ে থাকে না ব্যস্ত রাজপথের মাঝখানে, বুলেটভর্তি পিস্তলের নল কপালে ঠেকিয়ে ট্রিগার চেপে দেয় না। দুর্ঘটনায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে এই আশায় বসে থাকে না যে যদি মৃত্যু লেখা না থাকে তাহলে শরীর থেকে সমস্ত রক্ত সরে গেলেও মৃত্যু হবে না, আর মৃত্যু যদি লেখাই থাকে তাহলে দুনিয়ার সেরা ডাক্তারও মৃত্যু ঠেকাতে পারবে না।
কোন দেশের (সৌদি আরব সহ) বিচার ব্যবস্থা যখন কারো মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে তখন কি সে নিশ্চিত জানে যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই আল্লাহ তার মৃত্যু ঘটাবেন, কিংবা তলোয়ার দিয়ে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তের ঘাড়ে সজোড়ে কোপ বসালেই তার মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে তার মৃত্যু ঘটবে? হ্যাঁ, সে জানে। এবং জানে বলেই সে অভিযুক্তের গলায় একটি দুর্বল সুতা না ঝুলিয়ে একটি শক্ত দড়ি ঝুলায় কিংবা ঘাড়ে ধানের শিষ দিয়ে আলতো করে আঘাত না করে ধারালো তলোয়ার দিয়েই কোপ দেয়। সে এই কথা ভাবে না যে তার যদি মৃত্যু লেখা না থাকে তাহলে তলোয়ারের দুই হাজার কোপেও তার মৃত্যু ঘটবে না তা সে যতই ধারালো হোক; আর তার যদি মৃত্যু লেখা থাকে তাহলে তলোয়ারের আঘাত কেন একটি সামান্য টোকা ছাড়াই সে মারা যাবে। না সে এমনটি ভাবে না। ভাবলে সে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে অভিযুক্তকে ঠিক ফাঁসিতেই ঝুলাতো না, চেয়ারে শক্ত করে বেঁধে মাথার পিছনে গুলি করতো না, গিলোটিন কিংবা তলোয়ারের নিচেই ঘাড় রাখতো না। সে জানে কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করলেই মানুষের মৃত্যু ঘটানো যায়। তার মৃত্যু লেখা আছে কি নেই সেই অনিশ্চয়তায় সে ভোগে না কখনোই। সে জানে এই বুলেটে, এই ফাঁসির দড়িতে, এই চকচকে তলোয়ারে সে নিজেই রচনা করতে পারে মানুষের মৃত্যু। বিশ্বাসের গায়ে হেলান দিয়ে মানুষ চুপচাপ বসে থাকে না এসব ক্ষেত্রে। বসে থাকে না এজন্য যে যুগযুগের সঞ্চিত অভিজ্ঞতা থেকে সে দেখেছে কারণই ডেকে আনে তার মরণ। এই কারনেরই ভৃত্য আজরাইল, যমদূত কিংবা আল্লাহ। বুলেট যখন মানুষের মস্তিষ্ক ছিন্নভিন্ন করে দেয় ঈশ্বরের সাধ্য নেই তাকে বাঁচিয়ে রাখে। হয় বুলেট ঈশ্বরের অধিক শক্তি ধরে অথবা ঈশ্বরের শক্তি বুলেটের শক্তির অনুগমণ করে।
কৃতজ্ঞতা: আরজ আলী মাতুব্বর
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১:২১