নাসিমূল আহসানের পোস্টটি বিষয়বস্তুর দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় আমি এ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ পোস্ট লিখার প্রয়োজন বোধ করছি।
প্রথমত: নারীর লিপস্টিক চর্চা নিয়ে নাসিমূল আহসানের পোস্টটির সবটুকুর সাথেই একমত। আমি শুধু কিছু যোগ করতে চাই।
এ বিষয়ে যাকে টেনে না আনলেই নয় তার নাম সিমোন ডি বিভোয়ার। তিনি বলেছেন নারীর ভূবন বিন্দুর মতোই ক্ষুদ্র। একটি পুরুষ শিশুর জগত অবারিত। সে যত বড় হতে থাকে তার পৃথিবীও তত প্রশস্ত হতে থাকে। আর নারীশিশুর বেলায় দেখুন। সে যত বড় হতে থাকে তার পৃথিবী ততই সংকীর্ণ হতে থাকে। সে রাত বিরাতে একা ঘুরতে পারে না। সে মন চাইলেই একা কোন দূর পার্ক, সৈকত, উদার ধান ক্ষেতে সারা রাত পার করে দিতে পারে না। পুরুষ পারে। পুরুষের জন্য মসজিদ, নারীর জন্য ঘর। পুরুষের জন্য যেখানে সেখানে তুমুল আড্ডা, তর্কে-বিতর্কে বুঁদ হওয়া। নারীর জন্য ঘর।
হ্যা নারীরাও আড্ডা মারে। কিন্তু আপনি যদি কোনভাবে সেই আড্ডাকে রেকর্ড করতে পারেন তাহলে দেখবেন কি ভীষণ স্থুল বিষয় নিয়ে তারা ঘন্টার পর ঘন্টা পার করে দিতে পারে। সে তার বান্ধবীর সাথে নতুন কেনা জামার, লকেট এবং সর্বোপরি তার বয়ফ্রেন্ড বিষয়ে যতটুকু সময় ব্যয় করে তার কণাভাগ সময়েও বলে না আমাদের দেশ লুট হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন, জামায়াতের শুয়রের বাচ্চারা গাড়িতে বাংলার পতাকা লাগিয়ে ঘুড়ে। সরকার, দুর্নীতি, এত এত মানুষের ক্রমাগত আশ্রয়হীন হয়ে পড়া এগুলো তাদের কাছে খুবই হাস্যকর বিষয়।
তার পৃথিবী ক্রমাগত ছোট হতে হতে একটি বিন্দুতে এসে দাড়ায় - শরীর। পুরুষ কতখানি শরীর নিয়ে কথা বলে? নারীর পুরো চিন্তা-ধ্যান ধারণা তার এই শরীর নিয়ে। কেননা তার আর কিছুই নেই। পার্কের এক কোনে বসে গীটার বাজানো নেই। রাস্তায়, হোটেলে তুমুল আড্ডা মারা নেই। রাত বিরাতে খোলা পৃথিবীকে দেখার রোমাঞ্চ নেই। কিন্তু তাকে তো পুরুষের এই বিশাল জগতে প্রবেশ করতে হবে। তাছাড়া তার অস্তিত্বের মূ্ল্য কোথায়? আর সে জানে এই প্রবেশের একটিমাত্র চাবি হলো তার শরীর। তাই সে শরীর নিয়ে থাকে। বড় বেশী। বিবাহিত পুরুষরা কি একসাথে হলে অনুপুঙ্খভাবে তাদের স্ত্রীদের শরীর এবং মিলনের বর্ণণা দিতে থাকে? শুনেছেন কখনো? কিন্তু বিবাহিত নারীরা তাই করে। গবেষণা করে দেখবেন। একটুও বাদ দেয় না। পুরুষের ভালবাসা, পুরুষের শরীর তার কাছে সবকিছু। তসলিমার মতো একজন উচ্চ শিক্ষিত নারীর কথাই ধরুন। কত গর্বের সাথে সে তার 'রক্ষিতা' পুরুষটির (এই মূহুর্তে সেই বই এবং সেই লোকটির নাম মনে পড়ছে না) বর্ণনা দিচ্ছে। তসলিমার মা এক ঘরে বসা। তার মার সামনে দড়াম করে দড়জা বন্ধ করে সে রুমে ঢুকে সেই লোকটিকে বিভিন্নভাবে ভোগ করে। এ কি শুধুই পুরুষের ওপর প্রতিশোধ?
হ্যা অন্য সকল দিক থেকে যুগ যুগের বঞ্চনা এবং পুরুষ কর্তৃক নারীকে কেবল একটি শরীরের বেশী না ভাবার পলি নারীর জন্য নির্মান করে এমনি একটি শরীরকেন্দ্রীক দ্বীপ। তাই সে সাজে। কেবলই সাজে। লিপস্টিকের শেড পরিবর্তন করা, শাড়ির সাথে ম্যাচ করে অদ্ভুত সব রঙে নিজের মুখকে সে মুখোশ করে ফেলে। পাছে লিপস্টিকের ক্ষতি হয় তাই সে লিপস্টিক চর্চ্চিত ঠোটে কথা বলে এমন কৃত্রিমভাবে তাকে আর মানুষ মনে হয় না।
নারীরা মানুষ হয়ে উঠুক। তাদের জন্য পৃথিবী আরো বৃহত্তর হয়ে উঠুক। এই লক্ষ্যে নারী হাত ধরুক পুরুষের, পুরুষ নারীর।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:৩১