আজকে সংবাদপত্রে জানতে পারলাম, রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। স্কুলে নকলের অভিযোগে অপমানের জের ধরে সে আত্মহত্যা করেছে। ছাত্রীর নাম অরিত্রী। আসুন কিছু বিষয়ে জানি।
'নকল' এর অভিযোগঃ
রোববার পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষক অরিত্রির কাছে মোবাইল ফোন পায়। মোবাইলে নকল করছে—এমন অভিযোগে অরিত্রিকে তার বাবা-মাকে নিয়ে স্কুলে যেতে বলা হয়। একটি সুত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা নিষেধ। তাই অরিত্রীর ব্যাগে যখন মোবাইল ফোন পাওয়া যায়, তখনই তাঁর বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগ আনা হয় এবং সুত্র মতে অভিযোগটি প্রমানিত হয়নি। শুধুমাত্র মোবাইল ফোন থাকার অপরাধে নকল করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
বাবা মা কে অপমানঃ
অরিত্রী যখন তাঁর বাবা মাকে নিয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে আসে, তখন তাঁর বাবা মাকেও অপমান করা হয়। এক পর্যায়ে রুম থেকে বের করে দেয়া হয়। অরিত্রী তার শাস্তিস্বরূপ ‘ট্রান্সফার’ আদেশ বদলাতে বাবার সামনে প্রিন্সিপালের কাছে অনুনয়-বিনয় করে ক্ষমা চেয়েছিল। কিন্তু তাঁর কথা কেউ শুনেছি। প্রিন্সিপালের কাছে গিয়েও অরিত্রী এবং তাঁর বাবাকে একই অপমানের মুখোমুখি হতে হয়।
আত্মহত্যাঃ
অরিত্রীর বয়স মাত্র ১৫ বছর। মাত্র ১৫ বছরের একটা মানুষ কতখানি অপমানিত হলে আত্মহত্যার মত একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে? আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত কি স্বাভাবিক মানসিকতায় নেয়া যায়? একজন শিশুকে কতখানি নিপিড়ণ করলে সে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে?
আমাদের প্রতিবাদের জায়গাঃ
এখনও বাবা মা হতে পারি নি তবে মাঝে মাঝে কেমন যেন একটা অদ্ভুত অনুভুতি জন্মায়, কাজ করে। ১৫ বছরের একটা ফুটফুটে মেয়ে যখন চোখের সামনে এইভাবে মারা যায় - এই ব্যাথা একজন পিতা কিভাবে সহ্য করবে? কিভাবে তাঁর মা বেঁচে থাকবে?
বিদ্যালয়ের কাজ শিশুদের জীবনবাদী করে তোলা, ভুলগুলো শুধরে দেওয়া; নিশ্চয়ই মৃত্যুতে প্ররোচিত করা নয়। শাস্তি দিয়ে আশ্রয়চ্যুত করা নয়। অপমানিত করাও নয়। বিদ্যালয় নিশ্চয়ই কারাগার নয়, কোনো শৃঙ্খলা বাহিনীও নয়। প্রচন্ড ঘৃণা হচ্ছে আমার।
বলা হচ্ছে, নবম শ্রেণির এই শিক্ষার্থীর কাছে পরীক্ষার হলে মোবাইল পাওয়া গিয়েছিল। নবম শ্রেণির পরীক্ষা মানেই অভ্যন্তরীণ মেধা যাচাইয়ের উদ্যোগ। এটা জাতীয় পর্যায়ের কোনো ‘পাবলিক পরীক্ষা’ নয়। অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাগুলো নেওয়াই হয় অধিকতর মানোন্নয়নের লক্ষ্যে। শিক্ষার্থীদের ভুল-শুদ্ধ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া হয়, খুদে এই শিক্ষার্থী ‘অসদুপায়’ অবলম্বন করেছিল, কিন্তু সেটা কি সংশোধনের অযোগ্য ছিল? আমাদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় এটা কি এমন বিরল ঘটনা, যার জন্য শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয় ত্যাগের দণ্ড দেওয়া হয়?
আলতাফ পারভেজ নামের একজন কলামিষ্ট প্রথম আলোয় লিখেছেন, ভাবতে অবাক লাগছে, কীভাবে এই বিদ্যালয় ‘নামী প্রতিষ্ঠান’ হয়ে উঠল, যেখানে একজন ছাত্রীর কাছে একটা মোবাইল ফোন পেলে তাকে স্কুল ছাড়ার শাস্তি পেতে হয়? এবং যেখানে অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীকে ক্ষমা চেয়েও রেহাই মেলে না। প্রচারমাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী, অরিত্রী তার শাস্তিস্বরূপ ‘ট্রান্সফার’ আদেশ বদলাতে বাবার সামনে প্রিন্সিপালের কাছে অনুনয়-বিনয় করে ক্ষমা চেয়েছিল। সেখানে ব্যর্থ হয়ে বাসায় গিয়ে আত্মহত্যা করে। পূর্বাপর ঘটনাবলি কতটা সত্য, সেটা তদন্তসাপেক্ষ। সব অভিভাবকই এর সত্যাসত্য জানতে আগ্রহী। তবে যদি সত্য হয়, তাহলে বিদ্যালয়ের সঙ্গে শ্রমশিবিরের পার্থক্য রইল কোথায়? শিশুরা ক্ষমা চেয়েও ক্ষমা পাবে না?বিদ্যালয়গুলোর জন্য এমন নির্মম আচরণবিধি কবে, কাদের অভিভাবকত্বে তৈরি হলো? এমন আচরণবিধি কতটা শিশুমনস্তত্ত্বসম্মত? এ কি আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়া সর্বগ্রাসী সামগ্রিক একনায়কতান্ত্রিক সংস্কৃতির কোনো খুদে প্রকাশ?
শাস্তি চাইঃ
আমি এই বর্বর, নিষ্ঠুর ঘটনার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।
অরিত্রী তুমি আমাদেরকে মাফ করে দিও বোন! আমরা এখনও মানুষের সমাজ তৈরী করতে পারি নাই।
তথ্য সুত্রঃ
প্রথম আলো, কালের কন্ঠ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগ।