আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অবস্থানগত কারনে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব থাকা স্বত্তেও আমাদের কূটনীতিক দুর্বলতার কারনে আমরা এই সুবিধাটিকে তেমন একটা কাজে লাগাতে পারি নি। বিগত দিনের অভিজ্ঞতা থেকে থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে, দক্ষিন এশিয়ায় দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের কূটনীতিক সম্পর্কের কোন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেই। ক্ষমতার পালা বদলের সাথে সাথে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কও উঠানামা করে। বাংলাদেশের জনগনের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন এবং অধিকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলে আমরা প্রতিবেশীদেশগুলো থেকে আরো অনেক সুবিধা আদায় করে নিতে পারতাম। আমাদের এই আভ্যন্তরীন রাজনীতির বেহাল অবস্থা, ক্ষমতার লোভ, আইনের শাসনের অভাব ইত্যাদি কারনে অন্য অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে অযাচিত এবং অনৈতিক সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে। এইক্ষেত্রে নিওকলোনিজমের যে প্রচলিত সংজ্ঞা আমরা জানি, তাতে এর ভিক্টিম হচ্ছে বাংলাদেশ আর শিকারী হচ্ছে ভারত।
এই যখন বাংলাদেশের কূটনীতির অবস্থা তখন ব্রেকিং নিউজ হচ্ছে- বাংলাদেশ সফরে আসছেন চীনের প্রেসিডেন্ট। গত তিন দশকের মধ্যে এই প্রথম কোন চাইনিজ প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে আসছে। জোট সরকারের আমলে তাইওয়ানকে স্বতন্ত্র দূতাবাস সংক্রান্ত কার্যক্রম চালু করার অনুমুতি দেয়ার মাধ্যমে চায়নার সাথে বাংলাদেশের যে শীতল সম্পর্কের সুচনা হয়েছিলো, সেখান থেকে বের হয়ে এসে চাইনিজ প্রেসিডেন্টের এই সফর নিঃসন্দেহে একটি বড় ঘটনা। যদি বিশ্ব রাজনীতির বর্তমান ধারা এবং এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করি তাহলে বাংলাদেশের কূটনীতিক দক্ষতা চীনের দূরদর্শীতার সামনে কিছুটা ম্লান হয়ে যায়।
চীনের প্রেসিডেন্টের এই সফর বাংলাদেশের কূটনীতির সাফল্যে হিসেবে তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে, যখন বাংলাদেশ চীনকে সামনে রেখে নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে যৌক্তিক এবং প্রাপ্য সুবিধা আদায় করে নিতে পারবে তখন। অবশ্যই চীনের সাথে আমাদের সকল চুক্তির একটি সুষম দিকও থাকতে হবে। বাংলাদেশ সরকার তথা শেখ হাসিনার কূটনীতিক এবং রাজনৈতিক জ্ঞান তুলনামুলকভাবে ভালো। সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ভারত বাংলাদেশ থেকে অসম সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে শুধু মাত্র ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনকে সমর্থন দেয়ার নাম করে। এই ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকার মুখে যতই বন্ধুত্বের কথা বলুক, বাস্তবতা সম্পর্কে তারা জানেন বলেই আমার বিশ্বাস। এখন দেখা যাক, চাইনিজ প্রেসিডেন্টের এই সফর থেকে বাংলাদেশ সরকার নতুন কোন ‘গার্জিয়ান’ খুঁজে পায় কিনা। এই অঞ্চলে বাংলাদেশের গুরুত্ব এবং চীনের প্রভাব বজায় রাখার ক্ষেত্রে চীনের প্রেসিডেন্টের এই সফর ভীষন গুরুত্বপূর্ন। আর গুরুত্বপূর্ণ বলেই এই সফরে চোখ পেতে তীর্থের কাকের মত বসে আছে ভারত, পাকিস্তান এবং মার্কিন প্রশাসন।
বাংলাদেশ সরকার যদি এই বিষয়ে আন্তরিক হয়, তাহলে আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের ভবিষ্যত সামনে বেশ উজ্জল। এখন দেখা যাক, বাংলাদেশের কূটনীতিকরা কি স্বল্প সুদে বড় ঋণপ্রাপ্তিকে সাফল্য হিসেবে দেখাবেন না অঞ্চলে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তারে বাংলাদেশের গুরুত্ব তুলে ধরে তাঁর বিনিময়ে চীনকে উন্নয়নের অংশীদার বানাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:০৮