দীর্ঘদিন ধরে ব্লগে কোন নতুন পোস্ট দেয়া হয় না। কয়েক লাইন লেখার পর আর লিখতে ইচ্ছে করে না। মাঝে মাঝে মনে হয়, দুনিয়ার সকল গাঁজাখুরি লাইন এসে জড়ো হয়েছে আমার আঙুলে। ফলে দিন দিন বেড়ে চলেছে ড্রাফট পোস্টের সংখ্যা। ভাবতে অবাক লাগে, একটা সময় প্রতিমাসে ভালো ভালো পোস্ট দেয়ার জন্য রীতিমত পড়াশুনা করতাম, প্রতিযোগিতা করতাম। আগে একটা অলিখিত প্রতিযোগিতা ছিলো যে, কে কত অভিনব, বুদ্ধিদীপ্ত, সৃজনশীল পোস্ট দিতে পারবে। সকলের মধ্যে একটা উত্তেজনাও বিরাজ করত। সেই আমি লাস্ট পোস্ট দিয়েছি প্রায় ৭ মাস আগে। আসলে ব্লগিং একটা ছন্দের মত। কোন কারনে ছন্দ পতন হলে তা আবার ফিরে পাওয়া মুসকিল। এই হারানো ছন্দ ফিরে পেতে হালকা একটা পোস্ট দিলাম। আমার এই পোস্ট সকল সহব্লগারদের উৎসর্গ করলাম, যাদের সাথে এই ব্লগের মাধ্যমে পরিচয় হয়েছে, বন্ধুত্ব হয়েছে, শত্রুতা (!!) হয়েছে এবং যাদের সাথে অনেক সময় কাটিয়েছে তাদের সবাইকে এবং বিশেষ করে বর্তমান সময়ে যারা প্রতিশ্রুতিশীল ব্লগার হিসেবে নিজেদের প্রমান করেছেন তাদের সবাইকে এই পোস্টটি উৎসর্গ করলাম।
চলতি পথের অনেক দৃশ্য এবং দৃশ্যের ভেতরের কিছু গল্প নিয়ে একটি ছবি ব্লগ সাজানোর চেষ্টা করেছি। শতভাগ 'ছবি ব্লগ' হিসেবে দাবি করলে নতুন ব্লগাররা বিভ্রান্ত হবেন। এখানে যে ছবি এবং বর্ণনা উঠে এসেছে তা মুলত আমার ব্যক্তিগত পছন্দ এবং ভ্রমন অভিজ্ঞতা থেকেই সংগ্রহ করা।
১। এটা ঘাসফুলের ছবি। সবুজের মাঝে সাদা ফুলগুলো খালি চোখে হয়ত নিতান্তই সাধারন লাগবে, তবে ক্যামেরার চোখে আমি কিছু ভিন্নতা খুঁজে পেয়েছি।
২। এই ছবিটি গুলশান- বাড্ডা লিংক রোড থেকে তোলা। সময় সকাল ১১টা। একজন উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তার গাড়ি। আড়াআড়ি করে রাখার কারনে পুরো রাস্তা জ্যাম হয়ে গিয়েছিলো। সুর্য থেকে অনেক যে বালি গরম হয় তার প্রমান পাওয়া গেলো গাড়িটি সরাতে বলায়। ক্ষমতার দাপট, আইনের শাসনের প্রয়োগ না থাকায় জানালার কাঁচ নামিয়ে হুমকি দিলেন কর্মকর্তার স্ত্রী। ক্ষমতাবানদের এই সব হুমকি ধামকি, খিস্তি খেউড়ের সাথেই সাধারন মানুষের বসবাস। তারা যতক্ষনে গর্জে উঠার সিদ্ধান্ত নিলো, ততক্ষনে সিগন্যাল ছেড়ে দিয়েছে। আমাদের জনগন সময়মত গর্জে উঠবে কবে?
৩। শহর বিদীর্ণ করে বয়ে চলেছে এক ব্যস্ত নদী। যাকে মাঝে মাঝে রাজপথ ভেবে ভ্রম হয়।
৪। এক অদ্ভুত যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে সবুজ পরাজয় জেনেও লড়াই করছে সুউচ্চ নগরায়নের সাথে। বিষন্ন কালো মেঘ ডাক যেন কার্বনের অট্রহাসি।
৫। রাতের খাবারের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত একজন কর্মজীবি গৃহবধু।
৬। একটি রকমারী পন্যের দোকান। বামপাশে দাঁড়ানো বিক্রেতার চোখ মুখ বলে দিচ্ছে ব্যবসা ভালো হয় নি।
৭। কিছু 'ঋণ খেলাপী' মানুষের তালিকা।
৮। রূপচর্চায় আমাদের ছেলেরাও এখন পিছিয়ে নেই। রাত পোহালেই ঈদ।
৯। একজন 'প্রজাপতি', ডানা মেলে উড়বার অপেক্ষায়।
১০। গোমতি নদী, মেঘনা-গোমতি সেতু থেকে তোলা। ইচ্ছে করছে একটা নৌকা হয়ে নদীর বুকে ভেসে পড়ি।
১১। মেঘ তো নগরেও আসে, কিন্তু গোধূলি কবে আসবে?
১২। গুলশান লেকের দুর্লভ সৌন্দর্য। প্রচন্ড গরমেও এখানে বেশ শীতল বাতাস বয়ে যায়।
১৩। এই ভদ্রলোক একজন ফটোগ্রাফার। কক্সবাজার বীচে তিনি সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট অনুসন্ধান করছিলেন। তার অজান্তেই আমি এই ছবিটি তুলেছি আমার হোটেলের বারান্দা থেকে।
১৪। এই ছবিটা আমাদের কক্সবাজারের। দূরে সারি সারি ছাতা দেয়া চেয়ার পাতা, সবে মাত্র সকাল হচ্ছে, রাস্তার পাশে কেয়ারী করা ফুলের বাগান। চাইলে পুরো শহর এমন সাজে সাজতে পারে।
১৫। সমুদ্রের একটা বিশাল ক্ষমতা আছে। সমুদ্র এক নিমিষেই আপনাকে বড্ড ক্ষুদ্র বানিয়ে ফেলতে পারে। বিষন্নতা সৌন্দর্য হয়ে ধীরে ধীরে আপনাকে গ্রাস করে।
১৬। এই চাইনিজ ভদ্রলোকের নাম ভুলে গেছি। দুইভাই মিলে বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছেন। সাত সকালে বড্ড বিড়ম্বনায় পড়লেন। সমস্ত কক্সবাজারের ফকির মনে হয় তাঁর পিছে পড়েছেন। লাবনী বীচ থেকে হোটেল সায়মন পর্যন্ত এসে অটোওয়ালা উনার কাছে ভাড়া চেয়েছে ১০০ টাকা। আমাদের মানসিকতা এখনও উন্নত হয় নি। আমরা ভদ্রতা, নৈতিকতা শিক্ষা পাইনি, আমরা যেহেতু লুটপাটের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠছি, আইনের প্রয়োগ দেখছি না, তাই সুযোগ পেলেই আমরা তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাই। যে দেশ পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে পারে না, সঠিক সার্ভিস দিতে পারে না, হয়রানি বন্ধ করতে পারে না, সেই দেশে পর্যটনের বিকাশ দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়।
১৭। প্রচন্ড গরমের দিনে এই ছবিটি আমার এক টুকরো স্বস্তির জায়গা। অনাগত বৃষ্টি!!
১৮। ডানকান চা বাগান। দিগন্ত বিস্তৃত এই চা বাগানের মাঝে দিয়ে চলে গেছে ভারত সীমান্ত।
১৯। এই ছবিটা আমার অফিসের বাগানে তোলা। সংরক্ষিত ছোট্ট জলাধারে ফুটেছে শাপলা। তাতে পড়েছে মেঘের ছায়া। আমি নাম দিয়েছি মেঘফুল।
২০। যার হাতে প্রজাপতি বসে, তার দ্রুত বিয়ে হয়। এই বোকা প্রজাপতিটি উড়ে এসে আমার হাতে বসেছিলো। বেচারা আসতে দেরী করে ফেলেছে।
আজকে আপাতত এইটুকুই। আশা করি অন্য পোস্টে দ্রুতই দেখা হবে। সবাই ভালো থাকুন। শুভ ব্লগিং।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৩৭